কমিউনিস্ট ইশতেহারের ১৮৮৩ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা

বর্তমান সংস্করণের ভূমিকা হায় আমাকে একলাই সই করতে হবে। ইউরোপ ও আমেরিকার সমগ্র শ্রমিক শ্রেণি যাঁর কাছে সবচাইতে বেশি ঋণী সেই মার্কস হাইগেট সমাধি-ভূমিতে শান্তিলাভ করেছেন। তাঁর সমাধির উপর ইতিমধ্যেই প্রথম তৃণরাজি মাথা তুলেছে। তাঁর মৃত্যুর পর ‘ইশতেহার’এ সংশোধন বা সংযোজন আরো অভাবনীয়। তাই এখানে স্পষ্টভাবে নিম্নলিখিত কথাগুলি আবার বলা আমি প্রয়োজন মনে করি :

‘ইশতেহার’-এর ভিতরে যে মূলচিন্তা প্রবাহমান তা হলো এই যে, ইতিহাসের প্রতি যুগে অর্থনৈতিক উৎপাদন এবং যে সমাজ-সংগঠন তা থেকে আবশ্যিকভাবে গড়ে ওঠে, তা-ই থাকে সে যুগের রাজনৈতিক ও মানসিক ইতিহাসের মূলে, সুতরাং (জমির আদিম যৌথ মালিকানার অবসানের পর থেকে) সমগ্র ইতিহাস হয়ে এসেছে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাস, সামাজিক বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ের শোষিত ও শোষক, অধীনস্থ ও অধিপতি শ্রেণির সংগ্রামের ইতিহাস; কিন্তু এই সংগ্রাম আজ এমন পৰ্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যেখানে একই সংগে গোটা সমাজকে শোষণ, নিপীড়ন ও শ্রেণিসংগ্রাম থেকে চিরদিনের মতো মুক্তি না দিয়ে, শোষিত ও নিপীড়িত শ্রেণি (প্রলেতারিয়েত) নিজেকে শোষক ও নিপীড়ক শ্রেণির (বুর্জোয়া) কবল থেকে মুক্তি না দিয়ে পারে না। — এই মূল চিন্তাটি পুরোপুরি ও একমাত্র মার্কসেরই চিন্তা।'[১] এই কথা এর পূর্বেও বহুবার বলেছি, কিন্তু আজকেই ঠিক এই বক্তব্য ইশতেহারের পুরোভাগেও রাখা প্রয়োজন।

ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস
লণ্ডন, ২৮শে জুন, ১৮৮৩

টীকাঃ

১. ইংরেজী অনুবাদের মুখবন্ধে আমি লিখেছিলাম: ‘ডারউইনের মতবাদ জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যা করেছে, আমার মতে এই সিদ্ধান্ত ইতিহাসের বেলায় তাই করতে বাধ্য। ১৮৪৫ সালের আগেকার কয়েক বছর ধরে আমরা দুজনেই ধীরে ধীরে এই সিন্ধান্তের দিকে এগিয়ে চলেছিলাম। স্বতন্ত্রভাবে আমি কতটা এদিকে অগ্রসর হয়েছিলাম তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন আমার “ইংলন্ডে শ্রমিক শ্রেণির অবস্থা” বইখানি। কিন্তু যখন ১৮৪৫ সালের বসন্তকালে ব্রাসেল্‌স্‌ শহরে মার্কসের সঙ্গে আমার আবার দেখা হলো, তখন মার্কস ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গিয়েছেন। এখানে আমি যে ভাষায় মূলকথাটা উপস্থিত করলাম প্রায় তেমন পরিষ্কারভাবেই তিনি তখনই তা আমার সামনে তুলে ধরেছিলেন।’ (১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণে এঙ্গেলসের টীকা।)

আরো পড়ুন:  ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্র স্লোগান প্রসঙ্গে

কমিউনিস্ট ইশতেহারের সূচিপত্র
১৮৭২ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা
১৮৮২ সালের রুশ সংস্করণের ভূমিকা
১৮৮৩ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা
১৮৮৮ সালের ইংরেজি সংস্করণের ভূমিকা
১৮৯০ সালের জার্মান সংস্করণের ভূমিকা
১৮৯২ সালের পোলীয় সংস্করণের ভূমিকা
১৮৯৩ সালের ইতালীয় সংস্করণের ভূমিকা
কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার
১. বুর্জোয়া ও প্রলেতারিয়েত
২. প্রলেতারিয়েত ও কমিউনিস্টগণ
৩. সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্ট সাহিত্য
(১) প্রতিক্রিয়াশীল সমাজতন্ত্র
ক. সামন্ত সমাজতন্ত্র
খ. পেটি বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র
গ. জার্মান অথবা “খাঁটি” সমাজতন্ত্র
(২) রক্ষণশীল অথবা বুর্জোয়া সমাজতন্ত্র
(৩) সমালোচনী — কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম
৪. বর্তমান নানা সরকার-বিরোধী পার্টির সঙ্গে কমিউনিস্টদের সম্বন্ধ
টীকা

Leave a Comment

error: Content is protected !!