সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি
২৪. ভুল চিন্তাধারা সংশোধন
*** আমরা নিজদের কাজে খুব বিরাট সাফল্য অর্জন করলেও তা নিয়ে আমাদের অহংকার বা আত্মাভিমান করার কোনো যুক্তিই নেই। বিনয় মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়, অহংকার পিছিয়ে দেয়, এই সত্যকে আমাদের অবশ্যই সর্বদা মনে রাখতে হবে। “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টম জাতীয় কংগ্রেসে প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণ” (১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬)
*** বিজয়লাভের কারণে পার্টির ভেতরে অহঙ্কারের মনোভাব, নিজেকে কৃতবীর বলে জাহির করার মনোভাব, প্রগতিতে অনিচ্ছুক, নিশ্চল থাকার মনোভাব, ভোগবিলাসের অনুরাগ এবং অনবরত কঠোর জীবনযাপনে অনিচ্ছার মনোভাব জন্মতে পারে। বিজয়লাভের কারণে, জনগণ আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবেন, বুর্জোয়া শ্রেণিও আমাদের তোষামোদ করতে এগিয়ে আসবে। শত্রুরা অস্ত্রশক্তির দ্বারা আমাদের বশে আনতে পারে না, এটা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তবে, আমাদের বাহিনীতে যাদের মনোবল দুর্বল তাঁদেরকে বুর্জোয়া শ্রেণি তোষামোদ করে বশে আনতে পারে। সম্ভবত কিছু কিছু এমন কমিউনিস্টও থাকতে পারেন, যাঁরা বন্দুকধারী শত্রুর দ্বারা বশিভূত হননি, তাঁরা এই শত্রুদের মোকাবিলার বীর উপাধি পাবার যোগ্য ছিলেন; কিন্তু তাঁরা চিনির প্রলেপে আচ্ছাদিত গোলার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারেন না এবং এই চিনির গোলার দ্বারা পরাজিত হন। আমাদের অবশ্যই এই ধরনের অবস্থার প্রতিকার করতে হবে। “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রদত্ত রিপোর্ট” (৫ মার্চ, ১৯৪৯)
*** এমন বহু জিনিস আছে যার মধ্যে অন্ধভাবে ও আত্মচেতনাহীনভাবে জড়িয়ে পড়লে সেসব কিছু আমাদের বোঝা ও ভার হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ভুল করে কেউ এমন মনে করতে পারে— ‘যাই হোক না কেন, আমি ভুল করেছি’— অতএব, নিরুৎসাহ হয়ে পড়েন, যে লোক ভুল করেননি, তিনিও মনে করতে পারেন যে— ‘আমি তো কোনো ভুল করিনি’— অতএব, তিনি গর্বে ফুলে উঠেন। কাজের অসফলতা লোককে নিরাশ ও ম্লান করতে পারে, আবার সফলতা তাকে অহঙ্কারে ঊর্ধ্বমুখী করতে পারে। সংগ্রামের ইতহাস ছোট বলে কেউ কেউ নিজের কাজে দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে থাকেন; আবার কেউ কেউ সংগ্রামের ইতিহাস দীর্ঘ বলে সব সময়ে নিজেকে নির্ভুল বলে মনে করেন। শ্রমিক ও কৃষক নিজেদের শ্রেণিভিত্তিক গৌরবের জন্য বুদ্ধিজীবীদের অহঙ্কারের দৃষ্টিতে দেখতে পারেন; আবার বুদ্ধিজীবীরাও নিজেদের কোনো না কোনো জ্ঞান আছে বলে শ্রমিককৃষকদের অহঙ্কারের দৃষ্টিতে দেখতে পারেন। যে কোনো বিশেষ জ্ঞান আত্মঅহঙ্কারের এবং অন্যের প্রতি অবজ্ঞার পুঁজিতে পরিণত হতে পারে। এমনকি বয়সও অহঙ্কারের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে; যুবকরা নিজেরা বুদ্ধিমান ও কর্মঠ বলে বৃদ্ধদের অবহেলা করতে পারেন, আবার বৃদ্ধরাও নিজেরা অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বলে যুবকদের অবজ্ঞা করতে পারেন। এই ধরনের সমস্ত জিনিসের প্রতি আমরা যদি আত্মসচেতন না থাকি, তাহলে এগুলো আমাদের ভার অথবা বোঝা হয়ে উঠতে পারে। “অধ্যয়ন ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি” (১২ এপ্রিল, ১৯৪৪)
*** সৈন্যবাহিনীতে কার্যরত কিছুসংখ্যক কমরেড অহঙ্কারী হয়ে উঠেছেন, তাঁরা সৈনিক, জনগণ, সরকার ও পার্টির প্রতি অতিশয় উদ্ধত ব্যবহার করেন, তাঁরা শুধুমাত্র স্থানীয় কার্যে নিয়োজিত কমরেডদেরই নিন্দা করেন, কখনও নিজেদের নিন্দা করেন না, কেবল নিজেদের সাফল্যকে দেখেন, ত্রুটি দেখেন না এবং তোষামোদের কথাই শুনতে পছন্দ করেন, সমালোচনা নয়।… এই ধরনের ব্যাধি দূর করার জন্য সৈন্যবাহিনীকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে। “সংগঠিত হোন” (২৯ নভেম্বর, ১৯৪৩)
*** কঠিন কাজ যেন আমাদের সামনে রাখা ভারের মতো, দেখি, তাকে কাঁধে তুলে নেবার সাহস আমাদের আছে কি না। কোনো কোনো ভার ভারী এবং কোনো কোনোটা বা হাল্কা হয়ে থাকে। কেউ কেউ ভারীটা ভয় করেন, হাল্কাটা গ্রহণ করেন, ভারীগুলো অন্যদের কাঁধে ঠেলে দেন, হাল্কাগুলো নিজেরা তুলে নেন। এই মনোভাব ভাল নয়। কোনো কোনো কমরেড এ ধরনের নন, তাঁরা সুখ সুবিধা অপরের জন্য ছেড়ে দেন এবং ভারী ভার তুলে নেন; তাঁরা দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে সবার আগে আসেন আর সুখ সুবিধা ভোগ করতে সবার পিছনে পড়েন। এই ধরনের কমরেডই হচ্ছেন ভাল কমরেড। এই ধরনের কমিউনিস্ট ভাবমানস আমাদের অবশ্যই শিখতে হবে। “ছুংছিং আলাপ আলোচনা সম্পর্কে” (১৭ অক্টোবর, ১৯৪৫)
*** বেশ কিছু সংখ্যক লোক নিজেদের কাজে দায়িত্বজ্ঞানহীন, তাঁরা ভারীটা ভয় করেন, হাল্কাটা গ্রহণ করেন, ভারী ভারগুলো অন্যদের কাঁধে ঠেলে দেন, নিজেরা হাল্কাটা বহন করেন। যদি তাঁদের সামনে কোনো কাজ পড়ে, তাহলে প্রথমে তারা নিজেদের কথা ভাবেন, তারপর অন্যদের। সামান্য একটা কাজ করলেই তারা আত্মঅহমিকায় মেতে উঠেন, নিজেদের বড়াই করতে তারা ভালবাসেন, তাঁরা এই ভয় করেন যে, তাদের কাজ সম্পর্কে হয়তো অপরে জানতে পারবে না। তারা কমরেড ও জনগণের সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার করেন না, বরং নিরুত্তাপ, যত্নহীন ও নির্দয় ব্যবহার করেন। আসলে এই ধরনের লোক কমিউনিস্ট নন, অন্ততপক্ষে তাদের প্রকৃত কমিউনিস্ট বলে ধরা যায় না। “নর্ম্যান বেথুন স্মরণে” (২১ ডিসেম্বর, ১৯৩৯)
*** এই ধরনের ‘স্বতন্ত্রতার’ ধান্দায় ঘুরছেন এমন লোক সর্বদাই ‘আমি প্রথম’ নীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য এবং তারা ব্যক্তিবিশেষ ও পার্টির মধ্যকার সম্পর্কের প্রশ্নে প্রায়ই ভুল করে থাকেন। তারা যদিও বুলিতে পার্টির সম্মান করেন, কিন্তু কার্যত নিজেদেরকেই প্রথম স্থান দেন এবং পার্টিকে দেন দ্বিতীয় স্থান। এই ধরনের লোক কিসের ধান্দায় ঘুরছেন? তারা খ্যাতি, পদ ও আত্মপ্রচারের জন্য ঘুরছেন। কাজের কোনো এক অংশের দায়িত্ব তাদের দিলে তারা নিজেদের স্বতন্ত্রতার ধান্দায় থাকেন। এর উদ্দেশ্য, তারা কিছু লোককে পক্ষে টেনে আনেন আর কিছু লোককে ঠেলে সরিয়ে রাখেন এবং কমরেডদের মধ্যে পরস্পরকে তোষামোদ ও টানাটানি করেন, তাঁরা বুর্জোয়া শ্রেণির রাজনৈতিক পার্টির ইতর রীতিকে কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরে নিয়ে আসেন। তাঁদের অসততাই তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমি মনে করি, আমাদের সৎভাবে কাজ করা উচিত, কারণ পৃথিবীতে কোনো কাজ সম্পন্ন করতে হলে সৎ মনোভাব ছাড়া তা করা একেবারেই অসম্ভব। “পার্টির রীতির শুদ্ধিকরণ” (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২)
*** আংশিক প্রয়োজনকে সামগ্রিক প্রয়োজনের বশে আনার সত্যকে কমিউনিস্টদের অবশ্যই বুঝতে হবে। যদি কোনো মতামত আংশিক পরিস্থিতির দৃষ্টিতে কার্যকর বলে মনে হয়, কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতির দৃষ্টিতে তা অকার্যকর বলে মনে হয়, তাহলে অংশকে সমগ্রের বশ মানতে হবে। এর বিপরীত অবস্থায় যদি কোনো মতামত আংশিক পরিস্থিতির দৃষ্টিতে অকার্যকর বলে মনে হয়, কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতির দৃষ্টিতে কার্যকর বলে মনে হয়, তাহলেও অংশকে সমগ্রের বশ মানতে হবে। এটাই হচ্ছে সমগ্রকে বিবেচনা করার দৃষ্টিকোণ। “জাতীয় যুদ্ধে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির স্থান” (অক্টোবর, ১৯৩৮)
*** ভোগবাদ। লাল ফৌজের বেশ কিছু লোক আছেন যাদের ব্যক্তিতাবাদ ভোগবিলাসের মধ্যে অভিব্যক্ত হয়। তারা সব সময়েই আশা করেন যে, তাদের বাহিনী বড় বড় শহরে যাবেন। তারা যে শহরে কাজ করার জন্য যেতে চান তা নয়, বরং ভোগবিলাসের জন্যই যেতে চান। লাল এলাকায় যেখানে জীবনযাত্রা কঠোর, সেখানে কাজ করতে তারা সবচেয়ে বেশি অনিচ্ছুক। “পার্টির ভেতরকার ভুল চিন্তাধারা সংশোধন করা সম্পর্কে” (ডিসেম্বর, ১৯২৯)
*** আমাদের অবশ্যই স্ববিভাগীয়বাদী ঝোঁকের বিরোধিতা করতে হবে; এই ঝোঁকের দ্বারা শুধু নিজের স্বার্থেরই যত্ন নেওয়া হয়, অপরের কথা চিন্তা করা হয় না। যারা অন্যের কষ্টে উদাসীন থাকেন, অন্য লোকের অনুরোধে অধীনস্থ কেডারদের সেখানে যেতে দিতে অস্বীকার করেন অথবা খারাপ কেডারদের অন্যদেরকে দেন, ‘প্রতিবেশীর জমিকে তার বাড়তি জল নিষ্কাশনের নালী হিসেবে ব্যবহার করেন’ এবং অন্যান্য বিভাগ, অঞ্চল বা মানুষের জন্য মোটেও ভাবেন না—এই ধরনের লোকই হচ্ছেন স্ববিভাগীয়বাদী, যিনি কমিউনিজমের ভাবমানস পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন। সমগ্রের প্রতি অমনোযোগী থাকা, অন্যান্য বিভাগ, অঞ্চল ও লোকের প্রতি যত্নহীন থাকাই হচ্ছে স্ববিভাগীয়বাদীর বৈশিষ্ট্য। এই ধরনের লোকদের শিক্ষাদানের কাজ আমাদেরকে অবশ্যই জোরদার করতে হবে, যাতে করে তারা বুঝতে পারেন যে, এটা হচ্ছে একটা সংকীর্ণতাবাদী ঝোঁক এবং যদি একে প্রসারিত হতে দেওয়া হয়, তাহলে অত্যন্ত বিপদজনক হয়ে উঠবে। “পার্টির রীতির শুদ্ধিকরণ” (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২)
*** উদারতাবাদ বিভিন্নভাবে নিজেকে প্রকাশ করে। যখন সুস্পষ্টই দেখা যায় যে, কোনো লোক ভুল পথে যাচ্ছেন, অথচ সে লোক একজন পুরনো পরিচিত লোক, একই জায়গার অধিবাসী সহপাঠী, ঘনিষ্ঠবন্ধু, প্রিয়জন, পুরনো সহকর্মী বা পুরনো অধীনস্থ লোক বলে তার সঙ্গে নীতিগতভাবে যুক্তিতর্ক না করা, শান্তি ও সখ্যতা বজায় রাখার জন্য তাকে অবাধে চলতে দেওয়া, অথবা তার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য হাল্কাভাবে কিছু বলা, কিন্তু চূড়ান্তভাবে মীমাংসার চেষ্টা না করা। ফলে সংগঠন ও ব্যক্তিবিশেষ উভয়েরই ক্ষতি হয়। এটা হচ্ছে প্রথম প্রকারের।
নিজের প্রস্তাব সংগঠনের সামনে সক্রিয়ভাবে উত্থাপন না করে আড়ালে দায়িত্বজ্ঞানহীন সমালোচনা করা। সামনাসামনি কিছু না বলে পেছনে বাজে গুজব রটনা করা; সভায় কিছু না বলা, কিন্তু পরে আজে বাজে কথা বলা। যৌথ জীবনযাত্রার নীতির প্রতি আদৌ কোনো প্রকার শ্রদ্ধা না জানিয়ে নিজের ঝোঁকে চলা। এটা দ্বিতীয় প্রকারের। যদি কোনো ব্যাপার নিজেকে স্পর্শ না করে, তাহলে তাকে শিকায় তুলে রাখা; কোনো বিষয়কে স্পষ্টতই ভুল জেনেও সে বিষয় সম্পর্কে যথাসম্ভব কম বলা; গা বাঁচানোর জন্য দোষ এড়িয়ে নির্বিবাদে ভাল মানুষ সেজে থাকা। এটা তৃতীয় প্রকারের।
আদেশ অমান্য করা এবং ব্যক্তিগত মতামতকে প্রথমে স্থান দেওয়া। সংগঠনের কাছ থেকে শুধু বিশেষ সুবিধা দাবি করা, কিন্তু সংগঠনের শৃঙ্খলা অস্বীকার করা। এটা চতুর্থ প্রকারের।
ঐক্য, অগ্রগতি বা সুষ্ঠুভাবে কর্ম সম্পাদনের জন্য ভুল মতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও যুক্তিতর্ক না করা, বরং ব্যক্তিগত আক্রমণ চালানো, ঝগড়া বাধানো, ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রকাশ করা বা প্রতিহিংসা চরিতার্থের চেষ্টা করা। এটা পঞ্চম প্রকারের।
ভুল মতামত শুনেও যুক্তিতর্ক না করা, এমনকি প্রতিবিপ্লবীর কথা শুনেও সে সম্বন্ধে কোনো রিপোর্ট না করা, বরং সেগুলো নির্বিকারভাবে দেখা যেন কিছুই ঘটেনি। এটা ষষ্ঠ প্রকারের।
জনসাধারণের মধ্যে প্রচার না করা, তাদেরকে উৎসাহিত না করা, বক্তৃতা না দেওয়া, তদন্ত ও অনুসন্ধান না করা, তাঁদের সুখদুঃখে মনোযোগ না দেওয়া, তাঁদের সম্বন্ধে উদাসীন থাকা এবং নিজে যে একজন কমিউনিস্ট সে কথা ভুলে নিজেকে হেয় করে একজন সাধারণ লোকের মতো আচরণ করা। এটা সপ্তম প্রকারের।
জনসাধারণের স্বার্থের ক্ষতিকর আচরণ দেখেও মনে কোনো ক্ষোভ না জাগা, তাকে উপদেশ দিয়ে বিরত না করা, না থামানো, যুক্তি দিয়ে তাকে না বুঝানো, বরং জেনে শুনেও তাকে সে কাজ করে যেতে দেওয়া। এটা অষ্টম প্রকারের।
কাজকর্মে মনোযোগ না দেওয়া, কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা লক্ষ্য ছাড়াই কাজ করা, তাচ্ছিল্যভরে কাজ করা এবং কোনো মতে চলনসই হওয়া—‘যতদিন মঠের সন্ন্যাসী থাকবো ততদিন ঘণ্টা বাজিয়েই যাবো। এটা নবম প্রকারের।
বিপ্লবের জন্য নিজে বিরাট অবদান রেখেছেন বলে মনে করা, প্রবীণ অভিজ্ঞ বলে নিজেকে জাহির করা, বড় কাজে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ছোট কাজ করতে না চাওয়া, কাজে অমনোযোগী হওয়া এবং পড়াশুনায় ঢিলে দেওয়া। এটা দশম প্রকারের। নিজের ভুল জেনেও তা সংশোধনের চেষ্টা না করা, নিজের প্রতি উদারতাবাদ অবলম্বন করা। এটা একাদশ প্রকারের। “উদারতাবাদের বিরোধিতা করুন” (৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৭)
*** বিপ্লবী যৌথ সংগঠনের ভেতরে উদারতাবাদ অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটা হচ্ছে একটা ক্ষয়কারক বস্তু, যা ঐক্য ছিন্ন করে, সম্পর্ক শিথিল করে, কাজে নিষ্ক্রিয়তা আনে এবং মতভেদ সৃষ্টি করে। এটা বিপ্লবী বাহিনীকে দৃঢ় সংগঠন ও শৃঙ্খলা থেকে বঞ্চিত করে, নীতিগুলোকে শেষ পর্যন্ত কার্যকরী করা অসম্ভব করে তুলে এবং পার্টি যাদের পরিচালিত করে সেই জনসাধারণ থেকে পার্টি সংগঠনকে পৃথক করে দেয়। এটা অত্যন্ত জঘন্য ঝোঁক। ঐ
*** উদারতাবাদীরা মার্কসবাদের নীতিগুলোকে বিমূর্ত বেদবাক্য হিসেবে দেখেন। মার্কসবাদকে তারা অনুমোদন করেন, কিন্তু তাকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে বা পুরোপুরি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত নন, নিজেদের উদারতাবাদের পরিবর্তে মার্কসবাদকে গ্রহণ করতেও তৈরি নন। এইসব লোকের মার্কসবাদ আছে, আবার তাদের উদারতাবাদও আছে, মুখে তারা মাকর্সবাদের কথা বলেন, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তারা প্রয়োগ করেন উদারতাবাদ; অন্যদের প্রতি তারা প্রয়োগ করেন মার্কসবাদ, কিন্তু নিজেদের প্রতি তারা প্রয়োগ করেন উদারতাবাদ। দুই ধরনের জিনিসই মজুদ আছে, প্রত্যেকটির ব্যবস্থা পৃথক। এই হচ্ছে কিছু লোকের চিন্তাধারার পদ্ধতি। ঐ
*** জনগণের রাষ্ট্র জনগণকে রক্ষা করে। শুধু জনগণের রাষ্ট্র থাকলেই জনগণ সারা দেশব্যাপী ও সামগ্রিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির দ্বারা নিজেদের শিক্ষিত ও পুনর্গঠিত করতে পারবেন, স্বদেশী ও বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রভাব (যা এখনও খুবই জোরদার, যা দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান থাকবে এবং যাকে দ্রুত বিনাশ করা যায় না) থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবেন, পুরনো সমাজ থেকে অর্জিত বদভ্যাস ও খারাপ মতাদর্শ দূর করে দিতে পারবেন, নিজেদেরকে প্রতিক্রিয়াশীলদের নির্দেশিত বিপথে যেতে দেবেন না এবং অনবরত অগ্রসর হতে থাকবেন—অগ্রসর হতে থাকবেন সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট সমাজের দিকে। “জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব সম্পর্কে” (৩০ জুন, ১৯৪৯)
*** একটা ভাল কাজ করা কারো পক্ষেই কঠিন নয়, কঠিন হচ্ছে সারা জীবন ধরে ভাল কাজ করা, কখনও কোনো খারাপ কাজ না করা, সর্বদা ব্যাপক জনসাধারণ, যুবক ও বিপ্লবের জন্য হিতকর হওয়া, কয়েক দশক ধরে একটানা কঠোর সংগ্রাম করা—এটাই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন কাজ! “কমরেড উ ইউ-চাংয়ের ৬০তম জন্ম দিবসে অভিনন্দন বাণী” (১৫ জানুয়ারি, ১৯৪০)
মাও সেতুং বা মাও সে তুং বা মাও জেদং (ইংরেজি: Mao Tse-Tung; ২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৩ – ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ খ্রি.) মার্কসবাদী বিপ্লবী তাত্ত্বিক, সাম্যবাদী রাজনৈতিক নেতা, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং চীন ভূখন্ডের প্রায় শতাব্দীকালের সামাজিক রাজনীতিক মুক্তি ও বিপ্লবের নায়ক। জাপানি দখলদার শক্তি এবং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার কুওমিনটাং নেতা চিয়াং কাইশেকের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা এবং সামাজিক বিপ্লবের জন্য চীনের অগণিত এবং অনুন্নত কৃষকদের সংঘবদ্ধ করার কৌশলী হিসেবে মাও সেতুং এক সময় সমগ্র পৃথিবীতে সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণাদায়ক উপকথায় পরিণত হয়েছিলেন। তিনি অনেক জটিল কথাকে জনগণের সামনে অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করতেন। জনগণের সেবায় মানবেতিহাসের সমস্ত জ্ঞানকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন।