সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম

সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি

০৩. সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম

*** কমিউনিজম হচ্ছে সর্বহারা শ্রেণির একটা পূর্ণাঙ্গ মতাদর্শের ব্যবস্থা এবং একই সময়ে একটা নতুন সমাজ ব্যবস্থাও। অন্য যে কোনো মতাদর্শের ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে এটা ভিন্ন, মানব ইতিহাসে এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি সম্পূর্ণ, প্রগতিশীল, বিপ্লবী ও যুক্তিসংগত। সামন্তবাদের মতাদর্শের ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থা ইতিহাসের যাদুঘরেরই দ্রব্য হয়ে গেছে। পুঁজিবাদের মতাদর্শের ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থাও পৃথিবীর এক অংশে (সোভিয়েত ইউনিয়নে) যাদুঘরে স্থান নিয়েছে, অন্যান্য দেশেও এর অবস্থা হয়ে উঠেছে “পশ্চিম পাহাড়ে অস্তমিত সূর্যের ন্যায় দ্রুত ডুবন্ত, মুমূর্ষু ব্যক্তির মতো” এবং শীঘ্রই যাদুঘরে এর স্থান হবে। কেবলমাত্র কমিউনিস্ট মতাদর্শের ব্যবস্থা ও সমাজ ব্যবস্থা যৌবন ও প্রাণ শক্তিতে উচ্ছল হয়ে পাহাড় উপড়ে ফেলে সাগর পাল্টে দেবার ও প্রচণ্ড বজ্রের শক্তিতে পৃথিবীকে ছেয়ে ফেলছে। “নয়া গণতন্ত্র সম্পর্কে” (জানুয়ারি ১৯৪০) 

*** সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা অবশেষে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বদলাবেই, এটা হচ্ছে মানুষের ইচ্ছা-মুক্ত বাস্তব নিয়ম। প্রতিক্রিয়াশীলরা ইতিহাসের রথচক্রের গতিরোধ করার জন্য যত অপচেষ্টাই করুক না কেন, আগে বা পরে, বিপ্লব অবশ্যই ঘটবে এবং তা অনিবার্যভাবে বিজয় লাভ করবে। মহান অক্টোবরের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভায় প্রদত্ত ভাষণ” (৬ নভেম্বর , ১৯৫৭)

*** আমরা কমিউনিস্টরা আমাদের রাজনৈতিক অভিমত কখনো গোপন রাখি না। আমাদের ভবিষ্যতের কর্মসূচি হচ্ছে চীনকে সমাজতান্ত্রিক সমাজে এবং কমিউনিস্ট সমাজে এগিয়ে নেওয়া, এটা নিশ্চিত এবং সন্দেহাতীত। আমাদের পার্টির নাম এবং আমাদের মার্কসবাদী বিশ্বদৃষ্টিকোণ উভয়ই, ভবিষ্যতের এই সীমাহীন উজ্জ্বল ও চমৎকার সর্বোচ্চ আদর্শকে স্পষ্ট করে নির্দেশ করছে। “যুক্ত সরকার সম্পর্কে” (২৪ এপ্রিল, ১৯৪৫)

*** চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে পরিচালিত চীনের গোটা বিপ্লবী আন্দোলনটাই হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ বিপ্লবী আন্দোলন, যার অন্তর্ভূক্ত দুটি পর্যায় – গণতান্ত্রিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব; এটা হলো দুটি ভিন্ন প্রকৃতির বিপ্লবী প্রক্রিয়া, শুধুমাত্র প্রথম বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে শেষ করেই দ্বিতীয়টাকে সম্পন্ন করা সম্ভব। গণতান্ত্রিক বিপ্লব হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হচ্ছে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের অনিবার্য গতি। তবু সমস্ত কমিউনিস্টদের চরম লক্ষ্য হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও কমিউনিস্ট সমাজ চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানো। “চীনা বিপ্লব ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টি” (ডিসেম্বর , ১৯৩৯)

*** সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্য হচ্ছে উৎপাদন শক্তিকে মুক্ত করা। কৃষি ও হস্ত-শিল্পের ব্যক্তিগত মালিকানা-ব্যবস্থাকে সমাজতান্ত্রিক যৌথ মালিকানা ব্যবস্থায় এবং প্রাইভেট শিল্প বাণিজ্যের পুঁজিবাদী মালিকানা-ব্যবস্থাকে সমাজতান্ত্রিক মালিকানা-ব্যবস্থায় পরিবর্তিত করার ফলে উৎপাদন-শক্তি বিস্ময়করভাবে মুক্ত হতে বাধ্য। এই ভাবেই শিল্প ও কৃষি উৎপাদনের বিস্ময়কর বিস্তৃতির জন্য সামাজিক অবস্থার সৃষ্টি করা হয়। “সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সভায় প্রদত্ত ভাষণ” (২৫ জানুয়ারি, ১৯৫৬)

*** আমরা এখন যে কেবল সমাজ ব্যবস্থায় প্রাইভেট মালিকানাকে পাবলিক মালিকানায় পরিণত করার বিপ্লব করছি তাই নয় বরং কারিগরি ক্ষেত্রে হস্তশিল্পের উৎপাদনকে বিরাটাকারের আধুনিক যান্ত্রিক উৎপাদনে পরিবর্তনের বিপ্লব করছি, এ দুটি বিপ্লব পরস্পর সংযুক্ত। কৃষিক্ষেত্রে, আমাদের দেশের এই অবস্থায় প্রথমে সমবায়করণের প্রবর্তন করা অবশ্য প্রয়োজন, কেবলমাত্র তারপরেই বৃহদাকার যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব (পুঁজিবাদী দেশগুলোতে কৃষিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিকাশ করা হয়)। অতএব, শিল্প ও কৃষি, সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়ত্তকরণ ও কৃষির সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সাধন, এ দুটি ব্যাপার আমাদের কোনো মতেই আলাদা ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয় এবং কোনো কারণেই একটির উপরে গুরুত্ব আরোপ অপরটিকে দুর্বল করা উচিত নয়। “কৃষি-সমবায়করণের সমস্যা সম্পর্কে” (৩১ জুলাই, ১৯৫৫)

*** নতুন সমাজ ব্যবস্থা সবেমাত্র কায়েম হয়েছে এবং তাকে সুসংবদ্ধ করার জন্য সময়ের দরকার। যে মুহূর্তে নতুন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই এটা সম্পূর্ণরূপে সুসংবদ্ধ হয়ে গেছে, এটা ধারণা করা উচিত নয়, এটা অসম্ভব। এটাকে ধাপে ধাপে সুসংবদ্ধ করতে হবে। এটাকে চূড়ান্তভাবে সুসংবদ্ধ করার জন্য অবশ্যই দেশের সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়ত্তকরণ সাধন করতে হবে এবং অর্থনৈতিক ফ্রন্টের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে অধ্যবসায়ী হতে হবে আর অবশ্যই রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত ফ্রন্টেও নিত্য শ্রমসাধ্য সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী সংগ্রাম এবং সমাজতান্ত্রিক শিক্ষাকে চালানো প্রয়োজন। এ ছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শর্তাবলীর সহযোগিতারও প্রয়োজন। প্রচারকার্য সম্পর্কে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ, ১২ মার্চ, ১৯৫৭

*** আমাদের দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংবদ্ধ করার সংগ্রাম, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে কে জিতবে, কে হারবে, তা স্থির করার সংগ্রাম আরো দীর্ঘ ঐতিহাসিক সময় নেবে। কিন্তু আমাদের সকলেরই বোঝা উচিত যে, এই সমাজতন্ত্রের নয়া ব্যবস্থা অবশ্যই সুসংবদ্ধ হয়ে উঠবে। আমরা নিশ্চিতভাবে আধুনিক শিল্প, আধুনিক শিল্প, আধুনিক কৃষি, আধুনিক বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিসহ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে পারি। প্রচারকার্য সম্পর্কে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ, ১২ মার্চ, ১৯৫৭

*** আমাদের রাষ্ট্রের প্রতি যারা শত্রুভাবাপন্ন, সেই সব বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা অতি অল্প। এ ধরনের লোক আমাদের এই সর্বহারা শ্রেণির একনায়কত্বের রাষ্ট্রকে পছন্দ করে না, তারা পুরনো সমাজের জন্য উৎসুক। যখনই কোনো সুযোগ পাবে, তারা উচ্ছৃঙ্খল তরঙ্গের সৃষ্টি করবে এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে উল্টে দিতে ও পুরনো চীন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে অপচেষ্টা করবে। সর্বহারা শ্রেণির ও বুর্জোয়া শ্রেণির দুটা পথের মধ্যে— একগুঁয়ের মতো এরা পরবর্তী পথকেই বেছে নেবে। আসলে এই পরবর্তী পথ বাস্তবায়িত করা অসম্ভব, তাই তারা প্রকৃত পক্ষে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের নিকট আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত। এই রূপ লোক রাজনৈতিক পরিবেষ্টনের মধ্যে, শিল্প ও বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি এবং ধর্মীয়— সকল পরিবেষ্টনের মধ্যেই রয়েছে। তারা অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল। প্রচারকার্য সম্পর্কে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ, ১২ মার্চ, ১৯৫৭

আরো পড়ুন:  সমাজতন্ত্র অভিমুখী দেশসমুহ ও সাম্রাজ্যবাদ একসাথে অসীমকাল টিকবে না

*** গুরুতর সমস্যাই হচ্ছে কৃষকদের শিক্ষাদান করা। কৃষকদের অর্থনীতি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, সোভিয়েত ইউনিয়নের অভিজ্ঞতা অনুসারে বিচার করলে দেখা যায়, কৃষির সামাজিকীকরণের জন্য দীর্ঘ সময় এবং সযত্ন কাজের প্রয়োজন। কৃষির সামাজিকীকরণ ছাড়া পূর্ণ ও সুসংবদ্ধ সমাজতন্ত্র হতে পারে না। “জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব সম্পর্কে” (৩০ জুন, ১৯৪৯)

*** আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে: (১) ব্যাপক কৃষকসাধারণ পার্টির নেতৃত্বে ধাপে ধাপে সমাজতান্ত্রিক পথে আসতে ইচ্ছুক; (২) কৃষকদের সমাজতান্ত্রিক পথ ধরে এগিয়ে যাবার নেতৃত্বদানে পার্টি সক্ষম। এই দুটি হচ্ছে বস্তুর সারাংশ ও প্রধান গতিধারা। “কৃষি-সমবায়করণের সমস্যা সম্পর্কে” (৩১ জুলাই, ১৯৫৫)

*** সমবায় সমিতির নেতৃস্থানীয় সংস্থাগুলোর অবশ্যই এই সংস্থাগুলোতে বর্তমান গরীব কৃষক ও নতুন নিম্ন মাঝারি কৃষকদের প্রাধান্য স্থাপন করতে হবে, পুরনো নিম্ন মাঝারি কৃষক এবং নতুন ও পুরনো উচ্চ মাঝারি কৃষককে সাহায্যকারী শক্তি হিসেবে ধরা উচিত, কেবলমাত্র তাহলেই পার্টির নীতি অনুসারে গরীব ও মাঝারি কৃষকদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে, সমবায় সমিতি সুসংবদ্ধ করা যেতে পারে, উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে, সঠিকভাবে সমগ্র গ্রামাঞ্চলের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সম্পন্ন করা যেতে পারে। না হলে, গরীব ও মাঝারি কৃষকদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে না, উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে না এবং সমগ্র গ্রামাঞ্চলের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর কার্যকরী হতে পারে না। “ছাংসা জেলার কাউশান থানার উথাং কৃষি উৎপাদন সমবায় সমিতির প্রাধান্য কীভাবে মাঝারি কৃষকদের হাত থেকে গরীব কৃষকদের হাতে গেল”-এর ভূমিকালিপি (১৯৫৫)

*** মাঝারি কৃষকদের সঙ্গে অবশ্যই ঐকবদ্ধ হতে হবে, তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ না হওয়াটা ভুল। কিন্তু শ্রমিক শ্রেণি ও কমিউনিস্ট পার্টি গ্রামাঞ্চলে কাদের উপর নির্ভর করে মাঝারি কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করবে এবং সমগ্র গ্রামাঞ্চলের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সাধন করবে? নিশ্চয়ই গরীব কৃষকদের উপর। অতীতে জমিদারদের বিরদ্ধে সংগ্রাম এবং ভূমি সংস্কার করার সময় এমনি করা হয়েছিল, এখন ধনী কৃষক ও অন্যান্য পুঁজিবাদী উপাদানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও কৃষির সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সাধন করার সময়েও এইভাবে কাজ করতে হবে। উভয় বিপ্লব-পর্যায়ের গোড়ার দিকেই মাঝারি কৃষকগণ দোটানায় ছিলেন। যখন তারা ঘটনা প্রবাহের সাধারণ ধারা স্পষ্টভাবে দেখতে পান এবং বিপ্লবের বিজয় আসন্ন হয়, শুধু তখনই তারা বিপ্লবের পক্ষে আসেন। গরীব কৃষকদের অবশ্যই মাঝারি কৃষকদের মধ্যে কাজ করতে হবে এবং তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে হবে, যাতে করে চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত বিপ্লবকে দিনে দিনে সম্প্রসারিত করা যায়। “ফুয়ান জেলায় মাঝারি কৃষক সমিতি’ ও ‘গরীব কৃষক সমবায় সমিতির ঘটনা থেকে শিক্ষা-এর ভূমিকালিপি” (১৯৫৫)

*** অবস্থাপন্ন কৃষকদের মধ্যে পুঁজিবাদী ঝোঁকটা গুরুতর। সমবায়করণ আন্দোলনে ও তার পরে দীর্ঘকাল ধরে কৃষকদের মধ্যে আমাদের রাজনৈতিক কাজ কিছুটা শিথিল হলেই পুঁজিবাদী ঝোঁক বন্যার মতো ছড়িয়ে পড়বে। “পুঁজিবাদী ঝেকের বিরুদ্ধে অবশ্যই দৃঢ়ভাবে সংগ্রাম করা উচিত-এর ভূমিকালিপি” (১৯৫৫)

*** গোড়া থেকেই কৃষির সমবায়করণ আন্দোলন একটা গুরুতর মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক সংগ্রাম। এই ধরনের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে না গিয়ে কোনো সমবায় সমিতিই স্থাপন করা যায় না। পুরনো ব্যবস্থার বুনিয়াদে একটা আনকোরা নয়া সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার আগে, সে বুনিয়াদটাকে অবশ্যই ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে। অনিবার্যভাবেই পুরনো ব্যবস্থার প্রতিফলন করার পুরনো চিন্তাধারার অবশেষ জনগণের মনে দীর্ঘকাল ধরে বেঁচে থাকে, তারা সহজে সরে যেতে চায় না। সমবায় সমিতি স্থাপন করার পরেও এটাকে অবশ্যই আরও অনেক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হবে, যাতে করে সে নিজেকে সুসংবদ্ধ করতে পারে। সুসংবদ্ধ করার পরেও যদি এটা শিথিল হয়, তাহলে ভেঙ্গে পড়তে পারে। “একটা গুরুতর শিক্ষা-এর ভূমিকালিপি” (১৯৫৫)

*** সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে গ্রামাঞ্চলের পুঁজিবাদের স্বতঃস্ফূর্ত শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সর্বত্রই নতুন ধনী কৃষক গজিয়ে উঠছে, বহু অবস্থাপন্ন মাঝারি কৃষক নিজেদেরকে ধনী কৃষকে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। পর্যাপ্ত উৎপাদন উপকরণ থাকায় বহু গরীব কৃষক এখনও পূর্বের মতো দারিদ্রের ভেতরে রয়েছেন, কেউ দেনাগ্রস্ত হয়েছেন, কেউ কেউ নিজের জমি বিক্রি করছেন, কেউ বা জমি বন্ধক দিচ্ছেন। যদি এই অবস্থাকে বিস্তার লাভ করতে দেওয়া হয়, তাহলে অনিবার্যভাবেই গ্রামাঞ্চলে এই দুই ধরনের বিপরীতমুখী ঝোঁক দিন দিন আরও তীব্রতর হয়ে উঠবে। যেসব কৃষকেরা ভূমি হারিয়েছেন ও যেসব কৃষকেরা দারিদ্র্যের মধ্যে আছেন, তারা আমাদের উপর অভিযোগ করবেন যে, তাদেরকে মৃত্যুর গ্রাস থেকে উদ্ধার করছি না এবং কষ্ট নিবারণের জন্য কোনো সাহায্য করছি না। পুঁজিবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এমন অবস্থাপন্ন মাঝারি কৃষকেরাও আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন, কারণ আমরা যদি পুঁজিবাদের পথ গ্রহণ করতে চাই, তাহলে আমরা কখনও এই সব কৃষকদের দাবি পূরণ করতে পারবো না। এমন অবস্থায় শ্রমিক-কৃষকের মৈত্রী কি অব্যাহতভাবে সুসংবদ্ধ হতে পারে? স্পষ্টই না। এই সমস্যা শুধুমাত্র নতুন ভিত্তিতেই মীমাংসা করা যেতে পারে। অর্থাৎ ধাপে ধাপে সমাজতান্ত্রিক শিল্পায়ত্তকরণকে বাস্তবায়িত করার এবং ক্রমে ক্রমে হস্তশিল্প ও পুঁজিবাদী শিল্প বাণিজ্যের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সাধন করার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ সমগ্র কৃষির সমাজতান্ত্রিক রূপান্তর সাধন করতে হবে, অর্থাৎ সমবায়করণ কার্যকরী করা এবং গ্রামাঞ্চলে ধনী কৃষকদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করা, যাতে গ্রামাঞ্চলের সমস্ত জনগণ এক সঙ্গে অবস্থাপন্ন হয়ে উঠতে পারেন। আমরা মনে করি, শুধু এভাবেই শ্রমিক কৃষকের মৈত্রী সুদৃঢ় করা যায়। “কৃষি সমবায়করণের সমস্যা সম্পর্কে” (৩১ জুলাই, ১৯৫৫)

আরো পড়ুন:  প্রথম আন্তর্জাতিকের কার্যক্রম ও ভূমিকা

*** … সামগ্রিক পরিকল্পনার অর্থ হচ্ছে ৬০ কোটি মানুষের স্বার্থে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করা। যখন আমরা পরিকল্পনা রচনা করি, কাজ করি কিংবা সমস্যার বিষয় চিন্তা করি, তখন চীন দেশে যে ৬০ কোটি মানুষ আছে—এ কথাটা সর্বদাই আমাদের বিবেচনা করতে হবে এবং কোনোমতেই তা ভুলে গেলে চলবে না। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)

*** পার্টির নেতৃত্ব ছাড়াও আমাদের ৬০ কোটি জনসংখ্যা হচ্ছে একটা নির্ণায়ক উপাদান। বেশি লোকের অর্থ বেশি বিচার-বিবেচনা, বেশি উৎসাহ, বেশি কর্মোদ্যম। জনসাধারণ আজ এত বেশি অনুপ্রাণিত, সংগ্রামে দৃঢ়-সংকল্প এবং সাহসে পরিপূর্ণ যে ইতিপূর্বে তা আর কখনও দেখা যায়নি। “একটা সমবায় সমিতির পরিচিতি” (১৫ এপ্রিল, ১৯৫৮)

*** অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ছাড়া চীনের ৬০ কোটি জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য, দারিদ্র্য ও পশ্চাদগামীতা। এটা দেখতে খারাপ ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু আসলে ভাল। দারিদ্র্য পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জাগায়, কর্মোদ্যম এবং বিপ্লবের প্রেরণা দেয়। কোনো একটা সাদা কাগজে—যার উপর কোনো দাগ নেই, সে কাগজে সবচেয়ে নতুন ও সুন্দর অক্ষর লেখা যায় এবং সবচেয়ে নতুন ও সুন্দর চিত্র অঙ্কন করা যায়।

*** চীনা বিপ্লবের দেশব্যাপী জয়লাভ এবং ভূমি সমস্যার সমাধানের পরেও চীনে আরও দুই ধরনের মৌলিক দ্বন্দ্ব বর্তমান থাকবে। প্রথমত দেশের ভেতরকার, অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণি ও বুর্জোয়া শ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয়ত বৈদেশিক, অর্থাৎ চীন ও সাম্রাজ্যবাদী দেশের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। এই কারণে জনগণের গণতান্ত্রিক বিপ্লব জয়ী হবার পর শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে পরিচালিত জনগণের প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রক্ষমতা দুর্বল করলে চলবে না বরং আরও জোরদার করতে হবে। “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তম কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রদত্ত রিপোর্ট” (৫ মার্চ, ১৯৪৯)

*** “আপনারা কি রাষ্ট্রক্ষমতা বিলোপ করতে চান?” হ্যা, আমরা চাই, কিন্তু এখন না, আমরা এখনও এটা করতে পারি না। কেন? কারণ সাম্রাজ্যবাদ এখনও বর্তমান, দেশের ভেতরকার প্রতিক্রিয়াশীলগোষ্ঠী এখনও বর্তমান এবং আমাদের দেশে শ্রেণি বিদ্যমান। জাতীয় প্রতিরক্ষাকে সুসংবদ্ধ করার জন্য এবং জনগণের স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য আমাদের বর্তমান কর্তব্য হচ্ছে জনগণের রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুদৃঢ় করা —প্রধানত গণফৌজ, গণপুলিশ এবং গণআদালতকে শক্তিশালী করা। “জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব সম্পর্কে” (৩০ জুন, ১৯৪৯)

*** আমাদের রাষ্ট্র হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে ও শ্রমিক কৃষকের মৈত্রীর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের রাষ্ট্র। এই একনায়কত্ব কিসের জন্য? এই একনায়কত্বের প্রথম ভূমিকা হচ্ছে দেশের ভেতরকার প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণি ও ব্যক্তি এবং সমাজতান্ত্রিক বিপ্লববিরোধী শোষকদের দমন করা এবং যারা সমাজতান্ত্রিক গঠনকে বানচাল করে তাদের দমন করা, অর্থাৎ দেশের ভেতরে আমাদের ও শত্রুদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মীমাংসা করা। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো কোনো প্রতিবিপ্লবীকে গ্রেফতার করা, বিচার ও শাস্তি দান করা এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমিদার ও আমলাতান্ত্রিক বুর্জোয়াদের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা হরণ করা—এ সকলই একনায়কত্বের আওতায় পড়ে। সামাজিক শৃঙ্খলা ও ব্যাপক জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য চোর, ঠগ, খুনী, গৃহদাহকারী, গুণ্ডাচক্র ও গুরুতরভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারী অন্যান্য খারাপ ব্যক্তিদের উপরেও একইভাবে একনায়কত্বের শাসন চালানো প্রয়োজন। এই একনায়কত্বের দ্বিতীয় ভূমিকা হচ্ছে বহির্শক্রদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে দেশরক্ষার ব্যবস্থা করা। এমন অবস্থা দেখা দিলে আমাদের ও বহির্শক্রদের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে মীমাংসা করাই হচ্ছে একনায়কত্বের কর্তব্য। এই একনায়কত্বের লক্ষ্য হচ্ছে সমস্ত জনগণকে রক্ষা করা, যাতে করে তারা শান্তিতে শ্রম করতে পারে এবং আমাদের দেশকে আধুনিক শিল্প, আধুনিক কৃষি, আধুনিক বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিসহ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫৭)

*** জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের জন্য শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্ব প্রয়োজন। কারণ কেবলমাত্র শ্রমিক শ্রেণিই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দূরদর্শী, নিঃস্বার্থ এবং চূড়ান্তভাবে বিপ্লব চালাতে সবচেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সমগ্র বিপ্লবের ইতিহাস প্রমাণ করে যে, শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্ব ছাড়া বিপ্লব ব্যর্থ হয়, আর শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্ব থাকলেই বিপ্লব জয়লাভ করে। “জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব সম্পর্কে” (৩০ জুন, ১৯৪৯)

*** জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের ভিত্তি হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণি, কৃষক শ্রেণি ও শহরের ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণির মৈত্রী, মুখ্যত শ্রমিক ও কৃষকদের মৈত্রী, কারণ এ দুটি শ্রেণি চীনের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ। সাম্রাজ্যবাদ এবং কুওমিনতাং প্রতিক্রিয়াশীলদের উল্টে দেবার জন্য এ দুটি শ্রেণিই হচ্ছে প্রধান শক্তি। নয়া গণতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্রে যাওয়া, প্রধানত তাদের মৈত্রীর উপর নির্ভর করে।

আরো পড়ুন:  সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ ব্যবস্থার বা সমাজের পার্থক্যরেখাগুলো কোথায় ও কীভাবে?

*** শ্রেণী সংগ্রাম, উৎপাদন সংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হচ্ছে শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার তিনটা মহান বিপ্লবী আন্দোলন, এই তিনটা আন্দোলনই হচ্ছে স্থির নিশ্চয়তা যে, কমিউনিস্টরা আমলাতন্ত্রবাদ থেকে মুক্ত হবেন, সংশোধনবাদ ও গোঁড়ামিবাদকে এড়িয়ে যাবেন এবং চিরদিন অজেয় থাকবেন; সর্বহারা শ্রেণি যে ব্যাপক শ্রমজীবী জনসাধারণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক একনায়কত্বকে কার্যকরী করতে সক্ষম হবেন—এই তিনটি আন্দোলন হচ্ছে তার নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা। অন্যথায় যদি জমিদার, ধনী কৃষক, প্রতিবিপ্লবী, খারাপ লোক ও দৈত্যদানবদের একত্রে বের হয়ে আসতে দেওয়া হয়, কিন্তু আমাদের কেডারগণ এ সবের দিকে দৃষ্টিপাত না করেন, এমনকি তাদের মধ্যে অনেকে শত্রুর সঙ্গে আমাদের নিজেদের পার্থক্য নির্ণয় না করে শত্রুর সঙ্গে যোগসাজশ করেন, শত্রুর দ্বারা কলুষিত, বিভক্ত ও ছিন্নবিছিন্ন হয়ে পড়েন এবং আমাদের কেডারদের বাইরে টেনে নেওয়া হয় অথবা শত্রু আমাদের মধ্যে চুপিসারে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয় এবং শ্রমিক, কৃষক ও বুদ্ধিজীবীদের অনেকে শত্রুর নরম ও কঠোর ফন্দীর সামনে পড়েন—যদি এমনি হয়, তাহলে অনিবার্যভাবেই দেশব্যাপী প্রতিবিপ্লবী ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হতে বেশি সময় লাগবে না, খুম কম হলেও কয়েকটা বছর বা দশ বছরের বেশি লাগবে, আর খুব বেশি হলে কয়েক দশক লাগবে, মার্কসবাদী-লেনিনবাদী পার্টি নিশ্চয়ই হয়ে পড়বে সংশোধনবাদী পার্টি, ফ্যাসিস্ট পার্টি, আর গোটা চীনের রঙ যাবে বদলে। “ক্রুশ্চেভের মেকি কমিউনিজম ও পৃথিবীর পক্ষে তার ঐতিহাসিক শিক্ষা সম্পর্কে থেকে উদ্ধৃত” (১৪ জুলাই, ১৯৬৪)

*** জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্বের দুটি পদ্ধতি। শত্রুর প্রতি এটা একনায়কত্বের পদ্ধতি প্রয়োগ করে, অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত দরকার এটা তাদেরকে রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ গ্রহণ করতে দেয় না, জনগণের সরকারের আইন মানতে, পরিশ্রম করতে বাধ্য করে এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদেরকে নতুন মানুষে রূপান্তরিত করে। অপরপক্ষে, জনগণের প্রতি এটা কোনো বাধ্যবাধকতার পদ্ধতি নয় বরং গণতন্ত্রের পদ্ধতি প্রয়োগ করে, অর্থাৎ অবশ্যই তাদেরকে রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশ নিতে দেয় এবং তাদেরকে এটা বা ওটা করতে বাধ্য না করে বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি দিয়ে তাদেরকে শিক্ষা দেয় এবং বুঝায়। “চীনা জনগণের রাজনৈতিক পরামর্শ পরিষদের প্রথম জাতীয় কমিটির দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রদত্ত সমাপ্তি ভাষণ” (২৩ জুন, ১৯৫০)

*** আরো দৃঢ় ভিত্তিতে চীনে সমাজতান্ত্রিক কার্যের দ্রুত বিকাশের জন্য চীনা জনগণ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে একটা প্রাণবন্ত রীতির শুদ্ধিকরণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন । এটা হচ্ছে শহরে ও গ্রামে পরিচালনাধীন ও স্বাধীন সর্বজনীন বিরাট বিতর্ক বিস্তৃত করা – সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী পথ দু’টি সম্পর্কে, রাষ্ট্রের মৌলিক ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি সম্পর্কে, পার্টি ও সরকারের কর্মীদের কর্মরীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রার কল্যাণ প্রভৃতি প্রশ্ন সম্পর্কে তথ্য পেশ করে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলার পদ্ধতিতে বিতর্ক চালানো, যাতে করে জনগণের ভেতরকার যে সব বাস্তব দ্বন্দ্বের এখনই মীমাংসা করা প্রয়োজন, তা নির্ভুলভাবে সমাধান করা যায়। এটাই হচ্ছে জনগণের সমাজতান্ত্রিক আত্মশিক্ষার ও আত্ম-পুণর্গঠনের আন্দোলন। মহান অক্টোবরের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভায় প্রদত্ত ভাষণ” (৬ নভেম্বর , ১৯৫৭)

*** মহান গঠন কার্য চালানোর জন্য আমাদের সামনে রয়েছে অত্যন্ত কঠিন কর্তব্য। যদিও আমাদের পার্টির সভ্যসংখ্যা এক কোটিরও বেশি তবুও দেশের জনসংখ্যার তুলনায় তারা খুবই কম। আমাদের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থায় ও বিভিন্ন সামাজিক কার্যে, বহু কাজেই পার্টি বহির্ভূত লোকদের উপর নির্ভর করতে হয়। আমরা যদি জনসাধারণের উপর নির্ভর করতে এবং পার্টিবহির্ভূত লোকদের সাথে সহযোগিতা করতে নিপুণ না হই, তাহলে ভাল করে কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব। গোটা পার্টির ঐক্যকে দৃঢ় করাটা অব্যাহত রাখার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের সমস্ত জাতি, গণতান্ত্রিক শ্রেণি, গণতান্ত্রিক পার্টি ও জনগণের সংগঠনের ঐক্যকে অব্যাহতভাবে সুদৃঢ় করতে হবে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টকে অব্যাহতভাবে সুসংবদ্ধ ও প্রসারিত করতে হবে, পার্টি ও জনগণের মধ্যকার ঐক্যের পক্ষে ক্ষতিকর যে কোনোরূপ অস্বাস্থ্যকর অভিব্যক্তি আমাদের কাজের যে কোনো অংশের ভেতর দেখা দিলে, আমরা অবশ্যই মনোযোগের সঙ্গে তা শুদ্ধ করে চলবো। “চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অষ্টম জাতীয় কংগ্রেসে প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণ” (১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬)

Leave a Comment

error: Content is protected !!