মার্কস কর্তৃক ১৮৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি ১, ৩ ও ৫ তারিখের Social-Democrat পত্রিকায় প্রকাশিত এঙ্গেলস কর্তৃক সম্পাদিত মার্কসের ‘দর্শনের দারিদ্র্য’ গ্রন্থের জার্মান সংস্করণের (জে. বি. শুভাইংসার-এর নিকট লিখিত পত্র)
লন্ডন, ২৪ জানুয়ারি ১৮৬৫
প্রিয় মহাশয়।
গতকাল আমি একটি চিঠি পেয়েছি, তাতে প্রুধোঁ সম্বন্ধে আমার কাছ থেকে একটি বিস্তারিত অভিমত আপনি চেয়েছেন। আপনার ইচ্ছা পূরণের অন্তরায় হয়েছে আমার সময় অভাব। উপরন্তু তাঁর কোনো রচনাও আমার কাছে নেই। যাই হোক, আপনাকে আমার সম্প্রীতি জানাবার জন্য তাড়াতাড়ি একটা সংক্ষিপ্ত খসড়া খাড়া করেছি। আপনি তারপর এর সম্পূরণ, সংযোজন, বিয়োজন এক কথায় এটিকে নিয়ে যা ইচ্ছা করতে পারেন।
প্রুধোঁর আদি প্রয়াসের কথা এখন আর আমার মনে পড়ে না। ‘সর্বজনীন ভাষা’ সম্বন্ধে তাঁর স্কুল জীবনের একটি লেখা থেকে বোঝা যায় যে, যেসব সমস্যা সম্বন্ধে তাঁর সামান্যতম জ্ঞানেরও অভাব ছিল তাতে হাত দিতে তিনি কত কম ইতস্তত করেছিলেন।
তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘সম্পত্তি কী?’ সর্বতোভাবে তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। বিষয়বস্তুত নতুনত্বের জন্য না হলেও, অন্তত যে নতুন এবং উদ্ধত ভঙ্গিতে পুরনো বক্তব্য বলা হয়েছে তার জন্য বইখানা যুগান্তকারী। যেসব ফরাসি সমাজতন্ত্রী এবং কমিউনিস্টদের রচনা তিনি জানতেন সেখানে অবশ্য ‘সম্পত্তি’ শুধু নানাভাবে সমালোচিতই হয়নি, ইউটোপীয় কায়দার ‘নির্মূলও’ হয়েছে। এই বইতে সী-সিমৌ ও ফুরিয়ের সঙ্গে প্রুধোঁর সম্পর্ক প্রায় হেগেলের সঙ্গে ফয়েরবাখ-এর সম্পর্কেরই মতো। হেগেল-এর সঙ্গে তুলনায় ফয়েরবাখ আত্যস্তিকভাবেই অকিঞ্চিৎকর। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন হেগেল-এর পরবর্তী কালের পক্ষে যুগান্তকারী, কারণ তিনি এমন কতকগুলি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিলেন যেগুলি খ্রিষ্টীয় চেতনার কাছে অপ্রীতিকর অথচ সমালোচনার অগ্রগতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এবং যাদের হেগেল রহস্যময় অর্ধ-অস্পষ্টতার মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন।
প্রুধোঁর এই গ্রন্থখানিতে, বলা যেতে পারে, একটি বলিষ্ঠ পেশীবহুল বাচনভঙ্গি তখনও বজায় ছিল। আর আমার মতে এই বাচনভঙ্গিই এর মুখ্য গুণ। যে কেউ দেখতে পাবেন যে, শুধু পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি করার সময়েও প্রুধোঁ যেন নিজস্ব আবিষ্কার উপস্থিত করছেন; তিনি যা বলছেন তা তাঁর কাছে নতুন, এবং নতুনের মর্যাদা পাচ্ছে। উত্তেজক ঔদ্ধত্য, অর্থশাস্ত্রের ‘পবিত্রেষু পবিত্রতমের’ উপর হস্তক্ষেপ, অপূর্ব আপাতবিরোধী বক্তব্যে বুর্জোয়া মামুলিবৃদ্ধিকে ঠাট্টা, সুতীব্র সমালোচনা, তিক্ত বিদ্রুপ, প্রচলিত সমস্ত জঘন্যতার সম্বন্ধে এখানে ওখানে গভীর আন্তরিক রোষ প্রকাশ, বৈপ্লবিক একাগ্রতা– এইসব কিছুর জন্য ‘সম্পত্তি কী’ গ্রন্থখানি এক বৈদ্যুতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং প্রথম আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তা বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল। অর্থশাস্ত্রের সঠিক বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসে এই গ্রন্থ প্রায় উল্লেখযোগ্যই নয়। কিন্তু এই ধরনের হুজুগে গ্রন্থ যেমন ললিত সাহিত্যের ক্ষেত্রে তেমনি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও একটা ভূমিকা নেয়। ম্যালথাসের ‘জনসংখ্যা প্রসঙ্গে’ বইখানির কথাই ধরুন। প্রথম সংস্করণে বইখানি একটি ‘হুজুগে পুস্তিকা’ এবং তদুপরি, আদ্যোপান্ত অন্যের লেখা চুরি ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু, তবু, মানবজাতির মানহানিকর এই বস্তুটির দ্বারা কী উত্তেজনার না সৃষ্টি হয়েছিল।
আমার হাতের কাছে প্রুধোঁর কোনো গ্রন্থ থাকলে আমি তাঁর অনুসৃত প্রথম পদ্ধতির ব্যাখ্যার জন্য সহজেই কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিতে পারতাম। যে অংশগুলি তিনি নিজেই সর্বাধিক গুরুত্বসম্পন্ন বলে বিবেচনা করতেন সেখানে অ্যান্টিনমির (দ্বন্দ্ব-পরম্পরায়) আলোচনায় ক্যান্ট যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তিনি তারই অনুসরণ করেছেন। তিনি অনুবাদের মাধ্যমে একমাত্র যে জার্মান দার্শনিকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন তিনি ক্যাণ্ট। আর তাঁর মনে এই ধারণাই প্রবল হয় যে, ক্যান্টের পক্ষেও যেমন তাঁর পক্ষেও তেমনি অ্যান্টিনমির মীমাংসার ব্যাপারটি মানুষের রোধের ‘বহির্ভূত’ অর্থাৎ ব্যাপারটি এমন একটি কিছু যার সম্বন্ধে তাঁর নিজের ধারণাটাই তমসাচ্ছন্ন।
কিন্তু তাঁর যত কিছু মেকি স্বর্গজয় সত্ত্বেও ‘সম্পত্তি কী?’ বইখানির মধ্যেও এই স্ববিরোধ চোখে পড়বে যে, প্রুধোঁ একদিকে ছোট জমির মালিক কৃষকের (পরে পেটি বুর্জোয়ার) চোখ দিয়ে ও তার মতবাদ থেকে সমাজের সমালোচনা করছেন, অথচ অন্যদিকে প্রয়োগ করেছেন সমাজতন্ত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া মাপকাঠি।
বইখানির ত্রুটি একেবারে তার নামকরণের মধ্যেই দেখা যায়। প্রশ্নটা এমন প্রান্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে সঠিকভাবে উত্তর দেওয়া যায় না। প্রাচীন ‘সম্পত্তি-সম্পর্কসমূহ’ ঠাঁই পেয়েছিল সামস্ততান্ত্রিক সম্পত্তি-সম্পর্কের মধ্যে; এবং তারা আবার লোপ পায় ‘বুর্জোয়া’ সম্পত্তি-সম্পর্কের ভিতর। এইভাবে ইতিহাস নিজেই অতীত সম্পত্তি-সম্পর্কের সমালোচনা চালিয়েছে। প্রুধোঁর আসল বিচার্য বিষয় ছিল আধুনিক বুর্জোয়া সম্পত্তি– যা আজ বর্তমান। বস্তুটি যে কী, সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেত কেবল ‘অর্ধশাস্ত্রের’ সমালোচনামূলক বিশ্লেষণে যাতে সমগ্র সম্পত্তি-সম্পর্ক-রূপ বাস্তব স্মৃতিতে। কিন্তু যেহেতু প্রুধোঁ এই সমগ্র অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলিকে ‘সম্পত্তির’ সাধারণ আইনগত সংজ্ঞার মধ্যে জড়িয়ে ফেলেছেন, তাই ১৭৮৯ সালের আগেই এই ধরনের রচনায় রুসো একই ভাষায় প্রশ্নের যে উত্তর দিয়েছিলেন ‘সম্পত্তির অর্থ হল চুরি’ তাকে অতিক্রম করতে তিনি পারলেন না।
এর ভিতর থেকে খুব বেশি হলে এইটুকু পাওয়া যেতে পারে যে ‘চৌর্য’ সম্বন্ধে বুর্জোয়া আইনি প্রত্যয় বুর্জোয়াদের নিজেদের ‘সদুপায়ে’ অর্জিত লাভ সম্বন্ধেও সমভাবে প্রযোজ্য। অপরপক্ষে, যেহেতু ‘চৌর্য’ সম্পত্তির বলপূর্বক লঙ্ঘন বললে সম্পত্তিকেই আগে ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেইহেতু প্রকৃত বুর্জোয়া সম্পত্তি সম্বন্ধে প্রুধোঁ সর্বপ্রকার অলীক কল্পনার জালে নিজেকে জড়িয়েছেন যা এমন কি তাঁর নিজের কাছেও দুর্বোধ্য।
১৮৪৪-এ প্যারিসে অবস্থানকালে আমি প্রুধোঁর ব্যক্তিগত সংস্পর্শে এসেছিলাম। এখানে এ কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, পণ্যদ্রব্যে ভেজাল দেওয়াকে ইংরেজরা যে ‘মিশ্রণদৃষ্টি’ (Sophistication) আখ্যা দিয়ে থাকে প্রুধোঁর এই মিশ্রণদৃষ্টির জন্য আমিও কিছুটা পরিমাণে দোষী। প্রায়ই সারা রাত্রি ব্যাপী দীর্ঘ বিতর্কের সময় আমি তাঁকে হেগেলীয় মতবাদের দ্বারা সংক্রামিত করে তাঁর ক্ষতি সাধনই করেছিলাম– জার্মান ভাষায় ব্যুৎপত্তির অভাবে তিনি এবিষয়ে যথাযথভাবে অধ্যয়ন করতে পারেননি। প্যারিস থেকে আমার বহিষ্কারের পর, আমি যা শুরু করেছিলাম তা চালিয়ে নিয়ে গেলেন কার্ল—মহাশয়। জার্মান দর্শনের শিক্ষক হিসাবে আমার চেয়ে তাঁর এই সুবিধা ছিল যে, তিনি নিজেই এ বিষয়ে কিছু বুঝতেন না।
প্রুধোঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘দারিদ্র্যের দর্শন, ইত্যাদি’ প্রকাশিত হবার অল্প কিছুদিন পূর্বে, তিনি নিজে একখানি অতি বিস্তারিত পত্রে আমার কাছে সে কথা জানান এবং প্রসঙ্গক্রমে লেখেন: ‘আমি আপনার কঠোর সমালোচনার প্রত্যাশায় রইলাম।’ এই সমালোচনা শিগগিরই তাঁর উপর গিয়ে পড়ে (প্যারিস থেকে ১৮৪৭-এ প্রকাশিত আমার ‘দর্শনের দারিদ্র্য ইত্যাদি’ প্রন্থে) এমনই ভাবে যে, চিরতরেই আমাদের বন্ধুত্বের অবসান ঘটে।
——
আমি এখানে যা বলেছি তা থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে, ‘সম্পত্তি কী?’ এই প্রশ্নের উত্তর প্রকৃতপক্ষে প্রথম ছিল প্রুধোঁর ‘দারিদ্র্যের দর্শন বা অর্থনৈতিক বিরোধের পদ্ধতি’ গ্রন্থখানির মধ্যে। বস্তুত সে পুস্তক প্রকাশের পরেই মাত্র তিনি অর্থশাস্ত্র বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেছিলেন; আবিষ্কার করেছিলেন যে, তিনি যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন গালাগালি দিয়ে তার জবাব দেওয়া যাবে না, জবাব দেওয়া যাবে একমাত্র আধুনিক অর্থশাস্ত্রের বিশ্লেষণের মাধ্যমে। একই সময়ে অর্থনৈতিক সংজ্ঞা-বিভাগের প্রণালীকে দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে উপস্থাপিত করার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন। ক্যান্টের অসমাধেয় ‘অ্যন্টিনমির’ পরিবর্তে বিকাশের পন্থা হিসাবে হেগেলীল ‘বিরোধ’ প্রবর্তিত করার কথা থাকে তাতে।
দুখানি স্থূলকায় খণ্ডে সম্পূর্ণ তাঁর গ্রন্থখানির মূল্যায়নের জন্য তার প্রত্যুত্তরে যে বইটি আমি রচনা করেছিলাম তার প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেখানে অপরাপর বিষয়ের সঙ্গে আমি দেখিয়েছিলাম বিজ্ঞানসম্মত দ্বান্দ্বিক তত্ত্বের অন্তস্থলে তিনি কত কম প্রবেশ করেছিলেন; অপরপক্ষে দেখিয়েছিলাম কীভাবে তিনি নিজেই অনুমানভিত্তিক দর্শনের মোহ পোষণ করেন, কারণ অর্থনৈতিক সংজ্ঞাগুলিকে বৈষয়িক উৎপাদনের বিকাশধারার কোনো বিশেষ স্তরের সমানুবর্তী ঐতিহাসিক উৎপাদন-সম্পর্কের তাত্ত্বিক অভিব্যক্তি হিসাবে না দেখে তিনি সেগুলিকে পূর্ব থেকে বিদ্যমান চিরন্তন ভাবসংজ্ঞায় বিকৃত করেছেন, এবং কীভাবে তিনি এই বাঁকা পথে আবার বুর্জোয়া অর্থশাস্ত্রের দৃষ্টিভঙ্গিতেই এসে পড়লেন।
যে অর্থশাস্ত্রের সমালোচনার কাজে তিনি হাত দিয়েছিলেন সেই অর্থশাস্ত্রের বিষয়ে তাঁর জ্ঞান কত চরম অসম্পূর্ণ, এমন কি স্থানে স্থানে স্কুল-ছাত্র-সুলভ তাও আমি দেখিয়েছি; দেখিয়েছি যে ঐতিহাসিক গতি নিজেই মুক্তির বাস্তব শর্তাবলী সৃষ্টি করে তার বিশ্লেষণী জ্ঞান থেকে বিজ্ঞান গড়ে তোলার পরিবর্তে কীভাবে তিনি এবং ইউটোপীয়রা ঘুরে বেড়াচ্ছেন একটি তথাকথিত ‘বিজ্ঞান’ এর সন্ধানে– যা থেকে ‘সামাজিক সমস্যা সমাধানের’ একটি সূত্র সরাসরি বানিয়ে নেওয়া যায়। আর, সমগ্র অর্থতত্ত্ববিদরা যখন বলেন যে, আজকের দিনের সম্পর্ক– বুর্জোয়া উৎপাদন-সম্পর্কসমূহ-স্বাভাবিক, তখন তাঁরা এই অর্থ প্রকাশই করেন যে, সেই সম্পর্কসমূহে প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে পারম্পর্য বজায় রেখেই সম্পদ উৎপাদিত হয় এবং উৎপাদন-শক্তিসমূহের বিকাশ ঘটে। সুতরাং এই সম্পর্কগুলি হল নিজেরা কালের প্রভাব নিরপেক্ষ প্রাকৃতিক নিয়ম। এগুলি শাশ্বত নিয়ম এবং সমাজকে সর্বকালেই নিয়ন্ত্রণ করবে। সুতরাং ইতিহাস আগে ছিল কিন্তু এখন আর থাকছে না। (আমার গ্রন্থের ১১৩ পৃষ্ঠা) (মার্কসের টীকা।) বিষয়টির ভিত্তি, বিনিময়-মূল্যের সম্বন্ধে প্রুধোঁর চিন্তা যে কী পরিমাণ গোলমেলে, প্রাস্ত ও—থেকে গেছে, আর কীভাবে নতুন একটি বিজ্ঞানের ভিত্তি হিসাবে তিনি রিকার্ডোর মূল্যতত্ত্বের কয়েটি ইউটোপীয় ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করার মতো ভুলও করেন সে বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে আমি নিম্নলিখিত সামূহিক অভিমত ব্যক্ত করেছি:
‘প্রতিটি অর্থনৈতিক সম্পর্কের একটি ভাল এবং একটি মন্দ দিক আছে। এটিই হল একমাত্র কথা যেখানে শ্রীযুক্ত প্রুধোঁ নিজেকে মিথ্যাভাষণে লিপ্ত করেন না। তিনি অর্থতাত্ত্বিকদের দেখানো ভালো দিকটি দেখনে, আবার সমাজতন্ত্রীদের নিন্দিত খারাপ দিকটিও দেখেন। অর্থতাত্ত্বিকদের কাছ থেকে তিনি ধার করেছেন চিরন্তন সম্পর্কের আবশ্যিকতা আর সমাজতন্ত্রীদের কাছ থেকে ধার করেছেন এই মোহ যে দারিদ্র্যের মধ্যে দারিদ্র্য ছাড়া দর্শনীয় আর কিছু নেই (এর ভিতরের বিপ্লবী, বিধ্বংসী যে দিকটি পুরাতন সমাজের উচ্ছেদসাধন করবে সেই দিকটা না দেখে)। নিজের পক্ষে বিজ্ঞানের সমর্থন উদ্ধৃত করার প্রচেষ্টায় তিনি এদের উভয়ের সঙ্গেই মতৈক্য পোষণ করেন। বিজ্ঞান তাঁর কাছে ক্ষীণাবয়ব বৈজ্ঞানিক সূত্রমাত্রে পর্যবসিত। তিনি বেকল সূত্র-সন্ধানেই ব্যস্ত। এইভাবেই শ্রীযুক্ত প্রুধোঁ অর্থশাস্ত্র এবং কমিউনিজম এই দুই-এরই সমালোচনা করেছেন ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন– বস্তুত, তিনি এই দুইয়েরই নিচে।
[অংশ বিশেষ সংকলিত]
বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের মহান বিপ্লবী, সমাজতান্ত্রিক সমাজ বিজ্ঞান ও অর্থনীতির প্রতিথযশা তাত্ত্বিক কার্ল মার্কস (৫ মে, ১৮১৮ – ১৪ মার্চ, ১৮৮৩) প্রুশিয়ার রাইল ল্যান্ড প্রদেশের ট্রিভ্স নামক স্থানে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ৫ মে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৪৭ সালের বসন্তে মার্কস ও এঙ্গেলস ‘কমিউনিস্ট লীগ’ নামে একটি গুপ্ত প্রচার সমিতিতে যোগ দেন। ১৮৪৭ এ নভেম্বরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত লীগের দ্বিতীয় কংগ্রেসে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং কংগ্রেস থেকে দায়িত্ব পেয়ে সুপ্রসিদ্ধ ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ রচনা করেন। ১৮৫০-এর দশকের শেষদিক ও ৬০-এর দশকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুনরুজ্জীবন মার্কসকে আবার প্রত্যক্ষ কার্যকলাপের মধ্যে টেনে আনে। ১৮৬৪ সালে (২৮ সেপ্টেম্বর) বিখ্যাত আন্তর্জাতিক শ্রমিক সঙ্ঘ— প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠিত হয় লন্ডনে। মার্কস ছিলেন এই সমিতির প্রাণস্বরূপ। ১৮৮৩ সালের ১৪ মার্চ আরাম কেদারায় বসে মার্কস নীরবে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।