গৌরচন্দ্রিকা থেকে পরিশিষ্টে
ছুটিয়ে প্রাণান্ত পরিচ্ছেদে
ওপরে সোনার জলে
নামধাম লিখে
যথোচিত ঠাটবাটে
মর্কটের চামড়ার মলাটে
আষ্টেপৃষ্ঠে
যে আমাকে বাঁধে
বলো পাখি, গিয়ে বলো,
রাধে রাধে রাধে!—
তার কাছে
না, আমি যাব না।
নিজে হাতে বোনা
অঙ্গরাখা দিয়ে ঢেকে
দুপাশে ভরাট পরিপাটি
সাদাসিদে
শুধু দুটো বাটি—
যাতে মেটে
একটিতে আমার তৃষ্ণা
অন্যটিতে ক্ষিধে
যার চেষ্টা
আমাকে সে বেঁধে রেখে দেয়
সোনার খাঁচায়
সারাক্ষণ আদরে আহলাদে
বলো পাখি, কৃষ্ণ কৃষ্ণ!
গিয়ে বলো,
রাধে রাধে রাধে!
তার কাছে
না, আমি যাব না।
সমস্ত যন্ত্রণা
যে নিজের করে নিতে জানে
হো হো করে হেসে,
মরতে মরতে দুর্ভিক্ষ খরায় বানে
বঁচে আর
বাঁচায় অক্লেশে
কৃষ্ণ কৃষ্ণ ! বলো পাখি,
গিয়ে বলো,
রাধে রাধে রাধে !
তার কাছে
মহানন্দে থাকি
কারণ, সে বেঁধে দিয়ে ছাড়ে
এবং যতটা পারে
ছেড়ে দিয়ে বাঁধে।।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ – ৮ জুলাই ২০০৩) ছিলেন বিশ শতকের উল্লেখযোগ্য বাঙালি বামপন্থী কবি ও গদ্যকার। তিনি কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও ছড়া, প্রতিবেদন, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য ইত্যাদি রচনাতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ এবং বহু দেশি-বিদেশি কবিতা বাংলায় অনুবাদও করেছেন। “প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য় এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা” বা “ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত” প্রভৃতি তাঁর অমর পঙক্তি বাংলায় আজ প্রবাদতুল্য।