টেকনিকের অন্যতম বৃহৎ বিজয়

বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ রাসায়নিক উইলিয়ম র‍্যামসে পাথুরে কয়লার স্তর থেকেই সরাসরি গ্যাস উৎপাদনের এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। ব্যাপারটা ব্যবহারিক ভাবে কাজে লাগানোর জন্য র‍্যামসে একজন কয়লাখনি মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছেন।

আধুনিক টেকনিকের অন্যতম এক বৃহৎ কর্তব্য এইভাবে সাধিত হতে চলেছে। এর ফলে যে ওলটপালট হবে তা প্রচণ্ড।

বর্তমানে পাথুরে কয়লায় নিহিত তেজ ব্যবহার করতে হলে তাকে বিপুল পরিমাণে দেশময় পরিবহন করে আলাদা আলাদা উদ্যোগ বা গৃহে জ্বালাতে হয়।

র‍্যামসের আবিষ্কারে পুঁজিবাদী দেশের এই প্রায় সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ উৎপাদন শাখায় একটা বিপুল টেকনিকাল বিপ্লব সূচিত হচ্ছে।

কয়লাকে মাটির ওপরে না তুলে এনে তার উৎস স্থলেই তাকে সরাসরি গ্যাসে পরিণত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন র‍্যামসে। লবণ নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অনুরূপ পদ্ধতি প্রযুক্ত হয় যদিও তা অনেক বেশি সরল; নুনকে সোজাসুজি মাটির ওপর না তুলে জলে গলানো হয় ও পরে লোনা জলটা ওপরে তোলা হয় নলে করে। র‍্যামসের পদ্ধতিতে কয়লাখনি যেন পরিণত হবে গ্যাস উৎপাদনের একটা প্রকাণ্ড পাতন যন্ত্রে। গ্যাসে চালু হয় গ্যাস মোটর, বাষ্পীয় ইঞ্জিনে কয়লায় নিহিত তেজের যতটা সদ্ব্যবহার হয়, গ্যাস মোটরে হবে তার দ্বিগুণ বেশি। গ্যাস মোটর আবার কাজে লাগে তেজকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করতে ইতিমধ্যেই টেকনিক এ শক্তিকে বিপুল দুরত্বে চালান দিতে পারে।

এরূপ টেকনিকাল বিপ্লবে বিদ্যুৎ প্রবাহের খরচা নেমে যেতে পারে বর্তমান মূল্যের এক পঞ্চমাংশে, এমন কি সম্ভবত এক দশমাংশে। পাথুরে কয়লা নিষ্কাশন ও পরিবহনে যে বিপুলে মানবশ্রম বর্তমানে প্রয়োজন হয়, তা বাঁচানো যেতে পারে। যে কয়লার স্তর অতি নির্গুণ এবং অধুনা কাজে লাগে না, তাও কাজে লাগানো যায়। গৃহের আলো ও তাপের খরচা অসাধারণ কমে যেতে পারে।

এই আবিষ্কারের ফলে শিল্পের বিপ্লব হবে বিপুল।

কিন্তু সমাজতন্ত্রে এরূপ আবিষ্কারের ফলে যা ঘটতে পারত, বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সমগ্র সামাজিক জীবনের পক্ষে এ বিপ্লবের ফল মোটেই তেমন হবে না।

আরো পড়ুন:  মনোসমীক্ষণ সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রবর্তিত মনোবিকারের নিরাময় পদ্ধতি

পুঁজিবাদের আমলে কয়লা তোলায় নিযুক্ত লক্ষ লক্ষ খনি-শ্রমিকদের শ্রম“মুক্তি” অপরিহার্য রূপেই সৃষ্টি করে গণ-বেকারি, দারিদ্রের প্রচণ্ড বৃদ্ধি, শ্রমিকদের অবস্থার অবনতি। আর বৃহৎ উদ্ভাবনের মুনাফাটা যায় মর্গান, রকফেলার, রিয়াশিনস্কি, মরোজভ আর তাদের উকিল, ডিরেক্টর প্রফেসর ও পুঁজির অন্যান্য সেবাদাসদের পকেটে।

সমাজতন্ত্রে র‍্যামসের পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সঙ্গে সঙ্গেই লক্ষ লক্ষ খনিশ্রমিক ইত্যাদির শ্রমকে মুক্ত করে কর্মদিনকে ৮ ঘণ্টা থেকে দৃষ্টান্ত স্বরূপ ৭, এমন কি আরো কম ঘণ্টায় হ্রাস করা সম্ভব হবে। সমস্ত কলকারখানা ও রেলপথের ‘বিদ্যুতীকরণের ফলে শ্রমপরিস্থিতি অনেক স্বাস্থ্যকর হবে, ধোঁয়ালো ও ময়লা থেকে লক্ষ লক্ষ মজুর অব্যাহতি পাবে, নোংরা ন্যক্কারজনক কলঘরগুলি পরিণত হবে মানুষের যোগ্য পরিচ্ছন্ন আলোকিত ল্যাবরেটরিতে। বাসগৃহে বিদ্যুত আলো ও বিদ্যুত তাপব্যবস্থার ফলে বদ্ধ রান্নাঘরে জীবনের তিন চতুর্থাংশ ব্যয় করার আবশ্যিকতা থেকে মুক্তি পাবে লক্ষ লক্ষ ‘সাংসারিক দাসী’।

এ যে সামাজিক পরিস্থিতি মেহনতীদের মজুরি দাসত্বে দণ্ডিত করে, পুঁজিবাদের টেকনিক প্রতিদিন সে পরিস্থিতিকে ছাপিয়ে ক্রমাগত বেড়ে উঠছে।

প্রাভদা’, ৯১ সংখ্যা

২১শে এপ্রিল, ১৯১৩  

ভ, ই. লেনিন, রচনাবলী

৪র্থ রুশ সংস্করণের পাঠ থেকে অনুদিত

১৯শ খণ্ড, ৪১-৪২ পঃ

Leave a Comment

error: Content is protected !!