শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের পুনর্গঠন করা উচিত কীভাবে

(পার্টির দ্বাদশ কংগ্রেসের কাছে প্রস্তাব)

সন্দেহ নেই যে শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শন (২২০) আমাদের কাছে এক প্রচণ্ড দুরূহতার ব্যাপার এবং এতদিন পর্যন্ত সেই দুরূহতার নিরাকরণ হয় নি। আমার ধারণা, যেসব কমরেড শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের উপকার বা প্রয়োজন অস্বীকার করে তার সমাধান করতে চাইছেন, তাঁরা ভুল করছেন। কিন্তু সেইসঙ্গে আমি একথা অস্বীকার করছি না যে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ও তার উন্নয়নের সমস্যাটা খুবই কঠিন, মোটেই তার সমাধান হয় নি, অথচ সেইসঙ্গে এটা অসাধারণ জরুরী একটা সমস্যা।

পররাষ্ট্র জন-কমিসারিয়েত ছাড়া আমাদের রাষ্ট্র যন্ত্রটা অত্যধিক মাত্রায় পুরনো জের, তাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে অল্প মাত্রায়। ওপর থেকে তাতে কেবল হালকা চুনকাম পড়েছে, বাকি সবদিক থেকে তা হলো আমাদের সাবেক রাষ্ট্রযন্ত্রেরই বহুদৃষ্ট ধরনের একটি জের মাত্র এবং তার সত্যকার নবায়নের উপায় আবিষ্কারের জন্য, আমার ধারণা, অভিজ্ঞতা নিতে হবে আমাদের গৃহযুদ্ধ থেকে। গৃহযুদ্ধের বেশি বিপজ্জনক মুহুর্তগুলিতে আমরা কী করেছি?

আমাদের সেরা পার্টি শক্তিগুলিকে আমরা লাল ফৌজে কেন্দ্রীভূত করেছি। আমাদের সেরা শ্রমিকদের আমরা জমায়েত করতে ছুটেছি, যেখানে আমাদের একনায়কত্বের গভীরতম শিকড় সেখান থেকেই নবশক্তি আহরণের ডাক দিয়েছি। আমার বিশ্বাস, শ্রমিক কৃষক পরিদর্শনের পুনর্গঠনের উৎস খুঁজতে হবে একই ধারায়। সেরূপ পুনর্গঠনের জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (২২১) একটা স্বকীয় ধরনের পরিবর্ধনের ভিত্তিতে রচিত নিম্নোক্ত পরিকল্পনাটি গ্রহণের জন্য আমি আমাদের পার্টির দ্বাদশ কংগ্রেসের কাছে প্রস্তাব করছি।  

আমাদের পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন ইতিমধ্যেই এক ধরনের উচ্চতম পাটি সম্মেলনে পরিণত হবার প্রবণতা দেখিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন বসে দুই মাসে একবারের বেশি নয় আর সবাই জানেন কেন্দ্রীয় কমিটির নামে চলতি কাজকর্ম চালায় আমাদের পলিটব্যুরো, আমাদের অর্গব্যুরো, আমাদের সেক্রেটারিয়েট ইত্যাদি। আমার ধারণা এই যে পথটায় আমরা এভাবে এসে পড়েছি, সেটা আমাদের সম্পূর্ণ করা উচিত এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পুর্ণাঙ্গ অধিবেশনগুলিকে চূড়ান্ত রূপে উচ্চতম পার্টি সম্মেলনে পরিণত করা উচিত, যা বসবে দুই মাসে একবার এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশন তাতে যোগ দেবে। আর এই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনকেই পুনর্গঠিত শ্রমিক কৃষক পরিদর্শনের মূল অংশের সঙ্গে নিম্নলিখিত শর্তে যুক্ত করা উচিত। কংগ্রেসের কাছে আমার প্রস্তাব, শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয়  নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ৭৫ থেকে ১০০ জন নতুন সভ্য (বলাই বাহুল্য সব সংখ্যাই। মোটামুটি রকমের) নির্বাচিত করা হোক। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সভ্যদের মতোই নির্বাচনীয়দের পার্টিগত যাচাই হওয়া দরকার, কেননা তারা কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্যের সমস্ত অধিকারই ভোগ করবে।

অন্যদিকে, শ্রমিক কৃষক পরিদর্শনকে নামান উচিত ৩০০-৪০০ কর্মচারীতে, যারা বিবেকবত্তার দিক থেকে এবং আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রটা সম্পর্কে জ্ঞানের দিক থেকে বিশেষভাবে পরীক্ষিত এবং সাধারণভাবে শ্রমের বৈজ্ঞানিক সংগঠন ও বিশেষত প্রশাসনগত শ্রম, দপ্তরগত, ইত্যাদি শ্রমের বৈজ্ঞানিক সংগঠনের মূলকথাগুলির সঙ্গে পরিচয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

আরো পড়ুন:  শ্রম হচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের প্রতিমুহুর্তের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক

আমার মতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সঙ্গে শ্রমিক কৃষক পরিদর্শনের এই সংযুক্তিতে উভয় প্রতিষ্ঠানেরই উপকার হবে। এক দিকে, এতে করে শ্রমিক কৃষক পরিদর্শন এতই উচু একটা প্রতিষ্ঠা লাভ করবে যে অন্তত আমাদের পররাষ্ট্র জন কমিসারিয়েতের চেয়ে কম যাবে না। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সঙ্গে একত্রে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি উচ্চতম পার্টি সম্মেলনে পরিণত হবার যে পথটা মূলত ইতিমধ্যেই নিয়েছে তাতে সে পুরোপুরি চলে যাবে। এই পথটা তাকে পুরো পেরতে হবে দ্বিবিধ অর্থে সঠিকভাবে স্বীয় কর্তব্য পালনের জন্য : তার সংগঠন ও কাজের পরিকল্পনা, লক্ষ্যোপযোগিতা ও প্রণালীবদ্ধতার দিক থেকে এবং আমাদের সেরা শ্রমিক ও কৃষকদের মাধ্যমে সত্যি করেই ব্যাপক জনগণের সঙ্গে সংযোগের দিক থেকে।

যারা আমাদের যন্ত্রটাকে সাবেকী করে তুলছে সেই মহল থেকে, অর্থাৎ যে অসম্ভব রকমের, অকথ্য রকমের প্রাক বিপ্লবী চেহারায় আমাদের যন্ত্রটা এখনো রয়ে গেছে সেই চেহারাতেই তাকে বজায় রাখার যারা পক্ষপাতী তাদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটি আপত্তি আমি দেখতে পাচ্ছি (প্রসঙ্গত বলি, আমূল সামাজিক পরিবর্তন ঘটাবার জন্য কতটা সময় দরকার তা স্থির করার একটা সুযোগ আমরা এখন পেয়েছি যা ইতিহাসে খুব বিরল। আমরা এখন পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি পাঁচ বছরে কী করা সম্ভব এবং কিসের জন্য দরকার অনেক বেশি একটা মেয়াদ)।

আপত্তিটা এই যে আমার প্রস্তাবিত পুনর্গঠনে বুঝি বা কেবল অনাসৃষ্টি ঘটবে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সদস্যরা কোথায় কেনো ও কাকে ধরতে হবে তা না জেনে সমস্ত প্রতিষ্ঠানেই ঘুরে মরবে এবং চলতি কাজ থেকে কর্মচারীদের ছাড়িয়ে এনে সর্বত্রই বিশৃঙ্খলা ঘটাবে ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এই আপত্তির বিদ্বেষপরায়ণ উৎসটা এতই স্পষ্ট যে এর উত্তর দেওয়াও নিষ্প্রয়োজন। বলাই বাহুল্য, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সঙ্গে একত্রে নিজ জন-কমিসারিয়েত ও তার কাজের সঠিক সংগঠন গড়তে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সভাপতিমণ্ডলী এবং শ্রমিক কৃষক পরিদর্শনের জন-কমিসার ও তাঁর মণ্ডলীর পক্ষ থেকে (সেইসঙ্গে প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারিয়েটের পক্ষ থেকেও) একরোখা কাজ দরকার কেবল একবছরের জন্য নয়। আমার মতে শ্রমিক কৃষক পরিদর্শনের জন-কমিসার জন-কমিসার হয়েই থাকতে পারেন (এবং থাকা উচিত)। যেমন থাকবেন তাঁর গোটা মণ্ডলী, তাঁর কাছেই থাকবে গোটা শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের কাজকর্ম তথা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সমস্ত সভ্যদের পরিচালনার ভার, এদের ধরা হবে তাঁর এক্তিয়ারে ‘কর্মসূত্রে প্রেরিত’ বলে। শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের যে ৩০০-৪০০ জন কর্মচারী বাকি রইল, তারা, আমার পরিকল্পনায়, এক দিকে, শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের অন্য সভ্যদের অধীনে ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের বাড়তি সভ্যদের অধীনে একান্তই সেক্রেটারির কাজ চালাবে এবং অন্যদিকে, তাদের হতে হবে উচ্চগুণসম্পুর্ণ, বিশেষভাবে পরীক্ষিত, বিশেষ নির্ভরযোগ্য এবং তারা মোটা মাইনে পাবে যাতে শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের কর্মকর্তা হিসেবে তাদের বর্তমান, বাস্তবিকই হতভাগ্য (কম করে বললে) অবস্থা থেকে তারা মুক্তি পাবে।

আরো পড়ুন:  বিকেলের কূলে

আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমার প্রস্তাবিত সংখ্যায় কর্মচারীদের সংখ্যা নামিয়ে আনলে শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের কর্মীদের উৎকর্ষ এবং সমস্ত কাজের উন্নতি বহুগুণ বেড়ে যাবে ও সেইসঙ্গে জন-কমিসার ও তাঁর মণ্ডলীসভ্যরা পুরোপুরি কাজের ব্যবস্থাপনায় ও সেই কাজের নিয়মিত অবিচল উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে মন দেবার সুযোগ পাবে, যে উৎকর্ষ শ্রমিক-কৃষক রাজের পক্ষে ও আমাদের সোভিয়েত ব্যবস্থার পক্ষে এতই অবধার্য রূপে আবশ্যক।

অন্যদিকে, আমি এও ভাবি যে, শ্রম-সংগঠনের যেসব উচ্চ ইনস্টিটিউট বর্তমানে আমাদের প্রজাতন্ত্রে রয়েছে ১২টির কম নয় (শ্রমের কেন্দ্রীয় ইনস্টিটিউট, শ্রমের বৈজ্ঞানিক সংগঠনের ইনস্টিটিউট, ইত্যাদি), তাদের অংশত সম্মিলন ও অংশত সমন্বয়ের জন্য শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের জন-কমিসারকে খাটতে হবে। অত্যধিক সমসত্বতা ও তৎপ্রসূত সম্মিলনের প্রবণতা হবে ক্ষতিকর। উল্টো বরং, এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে একত্র করা আর এইসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটির জন্য খানিকটা স্বাধীনতার শর্তে তাদের সঠিকভাবে ভাগ করে দেওয়ার মধ্যে একটা বিচক্ষণ ও যথোপযুক্ত মধ্যপন্থা নেওয়া উচিত।

সন্দেহ নেই যে, এরূপ পুনর্গঠনের ফলে আমাদের নিজেদের কেন্দ্রীয় কমিটিরও লাভ হবে শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের চেয়ে কম নয়, লাভ হবে জনগণের সঙ্গে সংযোগ এবং কাজের নিয়মিতি ও সুষ্ঠুতা উভয় দিক থেকেই। তখন পলিটব্যুরোর অধিবেশন প্রস্তুতিতে আরও কঠোর ও দায়িত্বশীল পদ্ধতি চালু করা সম্ভব (ও উচিত) হবে। সেই অধিবেশনে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নির্দিষ্ট সংখ্যক সভ্যের উপস্থিত থাকা চাই; সেটা ধার্য হবে হয় নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য অথবা সংগঠনের কোনো পরিকল্পনা অনুসারে।

কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সভাপতিমণ্ডলীর সঙ্গে একত্রে  শ্রমিক-কৃষক পরিদর্শনের জন-কমিসার কমিশনের সভ্যদের কাজের ভাগাভাগি স্থির করবেন পলিটব্যুরোয় উপস্থিত থাকা ও যেসব দলিল কোনো-না-কোন ভাবে। তাঁর এক্তিয়ারে পড়ছে তা যাচাইয়ের দায়িত্ব অনুসারে, অথবা তাত্ত্বিক প্রস্তুতি ও শ্রমের বৈজ্ঞানিক সংগঠন অনুধাবনের জন্য নিজের সময় বরাদ্দ করার দায়িত্ব অনুসারে, অথবা নিয়ন্ত্রণে এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে নিম্নতম স্থানীয় সংস্থা পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রটার উন্নয়নে হাতে-কলমে অংশ নেবার দায়িত্ব অনুসারে, ইত্যাদি।

আমি আরও এই কথা ভাবি যে, কেন্দ্রীয় কমিটির সভ্যরা ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সভ্যরা এরূপ সংস্কারের ফলে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল ও পলিটব্যুরোর অধিবেশনের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত থাকবেন (এইসব অধিবেশন সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সমস্ত সভ্যদের পেতে হবে পলিটব্যুরোর অধিবেশন বসার অন্তত একদিন আগে, ব্যতিক্রম শুধু, সেইসব ক্ষেত্রে যাতে একেবারেই কোনো দেরি চলে না, সেরূপ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সভ্যদের জানান ও সিদ্ধান্ত নেবার বিশেষ পদ্ধতি দরকার হবে), এই রাজনৈতিক লাভটা ছাড়াও লাভের তালিকায় এটাও ধরা উচিত যে, আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিছক ব্যক্তিগত ও আপতিক ঘটনাচক্রের প্রভাব কমবে ও তাতে করে ভাঙনের বিপদও হ্রাস পাবে।

আরো পড়ুন:  শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমিক শ্রেণির পার্টি

আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি একটি কঠোরভাবে কেন্দ্রীভূত ও উচ্চ কর্তৃত্ব সম্পন্ন একটি দল হিসেবে দানা বেধেছে। কিন্তু, এই দলের কাজ যে অবস্থায় চলছে সেটা তার কর্তৃত্বের উপযোগী নয়। এই ব্যাপারে আমার প্রস্তাবিত সংস্কার ঐ এটি দূর করতে সহায়ক হবার কথা, এবং পলিটব্যুরোর প্রতিটি অধিবেশনে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের যে সদস্যরা নির্দিষ্ট সংখ্যায় উপস্থিত থাকতে বাধ্য, তাদের উচিত একটি নিবিড় দলে পরিণত হওয়া এবং কারো মুখ না চেয়ে এটা দেখা যাতে জেরা করা, দলিল যাচাই করা ও সাধারণভাবে অবশ্য অবশ্যই ওয়াকিবহাল থাকা ও ব্যাপারটার কঠোরতম ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় কারো কর্তৃত্ব, না সাধারণ সম্পাদকের, না কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য কোনো সভ্যের কর্তৃত্ব বাধা দিতে না পারে।

বলাই বাহুল্য যে, আমাদের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে সমাজব্যবস্থাটা দণ্ডায়মান দুটি শ্রেণীর : শ্রমিক ও কৃষকদের সহযোগিতার ভিত্তিতে, যেখানে ‘নয়া অর্থনৈতিক কর্ম নীতিওয়ালারা’ও, অর্থাৎ বুর্জোয়ারাও বর্তমানে নির্দিষ্ট কতকগুলি শর্তে ঢুকতে পারছে। এই শ্রেণীগুলির মধ্যে যদি গুরতর শ্রেণীগত মতভেদ দেখা দেয়, তাহলে ভাঙন অনিবার্য হবে। কিন্তু, আমাদের সমাজব্যবস্থায় সেরূপ ভাঙনের অনিবার্যতার ভিত্তি একান্তরূপে নিহিত নেই এবং আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কমিশনের, তথা সমগ্রভাবে আমাদের পার্টির প্রধান কর্তব্য হলো, যেসব ব্যাপার থেকে ভাঙন দেখা দিতে পারে সেগুলির ওপর কড়া নজর রাখা এবং তার প্রতিবিধান করা, কেননা শেষ বিচারে কৃষক জনগণ শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে তাদের জোটের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তাদের সঙ্গেই যাবে, নাকি শ্রমিকদের কাছ থেকে নিজেদের বিযুক্ত করিয়ে আনতে, শ্রমিকদের কাছ থেকে নিজেদের ভাঙিয়ে আনতে তারা ‘নয়া অর্থনৈতিক কর্মনীতিওয়ালাদের’ অর্থাৎ, নয়া বুর্জোয়াদের সুযোগ দেবে, তার ওপরেই আমাদের প্রজাতন্ত্রের ভাগ্য নির্ভর করবে। এই দ্বিবিধ পরিণামটা আমরা যত স্পষ্ট করে দেখব, সেটা আমাদের শ্রমিক কৃষকেরা যত পরিষ্কার করে বুঝবে, ততই ভাঙন এড়াতে পারার সম্ভাবনা আমাদের বাড়বে। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের পক্ষে সেই ভাঙন হবে মারাত্মক।

২৩ জানুয়ারি, ১৯২৩

৪৫ খণ্ড, ৩৮৩-৩৮৮ পঃ

বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখাটির অনুবাদ নেয়া হয়েছে লেনিনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব নামক সংকলন, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৬৮; ৫৮১-৫৮৬ পৃষ্ঠা থেকে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!