যুক্তিবিদ্যায় যে পদ দ্বারা বস্তু-নিরপেক্ষভাবে কোনো গুণ বুঝায় তেমন পদকে গুণবাচক বা এ্যাবসট্রাক্ট পদ (ইংরেজি: Abstract) বলে। যথা, মনুষ্যত্ব, দয়া, অন্ধত্ব। অপর পক্ষে যে পদ দ্বারা কোনো বস্তু বুঝায় তাকে বস্তুবাচক পদ বা কনক্রিট টার্ম (ইংরেজি: Concrete) বলে। যথা, গাছ, রহিম, ঢাকা শহর ইত্যাদি। দর্শনে যা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য নয় তাকে বিমূর্তে এবং যা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য তাকে মূর্ত বলা হয়। মূর্ত এবং বিমূর্তের প্রশ্নে ইতিহাসে মত পার্থক্য দেখা যায়। ভাববাদী দর্শনে বিমূর্তকেই পরম বলে মনে করা হয়। বস্তুবাদী দর্শনে মূর্তের গুণাগুণকে মানসিকভাবে বস্তু থেকে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করাকে বিমূর্ত ক্ষমতা বলা হয়।
উনবিংশ শতকে জার্মান দার্শনিক হেগেল মূর্তকে এবং বিমূর্তের জ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুনতর ব্যাখ্যাসহ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। হেগেল মূর্তের এবং বিমূর্তের একটি দ্বন্দ্বমূলক এবং নিত্য বিকাশমান সম্পর্কের কল্পনা করেন। হেগেলের নিকট বিমূর্ত মূর্তের বিপরীত কোনো ভাব বা বস্তু নয়। নিরন্তর বিকাশে মূর্ত-বিমূর্তে পরিণতি লাভ করে। এই বিমূর্তের আবার মূর্তেও প্রকাশিত হয়। হেগেলের চরম বিমূর্ত অবশ্য একটি ভাববাদী ধারণা। সে ব্যাখ্যায় চরম বিমূর্তের আংশিক প্রকাশ। ইতিহাস, সমাজ, বস্তুজগৎ: সবই এরূপ ব্যাখ্যায় চরম বিমূর্তের মায়ারূপ প্রকাশ-স্থায়ী সত্য নয়।
বস্তুবাদী দর্শন, বিশেষ করে মার্কসবাদী দর্শন হেগেলের মূর্ত-বিমূর্তের ব্যাখ্যায় পরস্পর-বিরোধিতা আরোপ করে। মার্কসবাদী দার্শনিকদের মত মূর্তের বিকাশ ও সামগ্রিকতাই যদি বিমূর্তের সৃষ্টি, তবে মূর্তবিচ্ছিন্নভাবে বিমূর্তের কোনো অস্তিত্ব নেই। তেমন ক্ষেত্রে মূর্তই চরম সত্য, বিমূর্তে নয়। এবং সমাজ, ইতিহাস, জগৎকে বিমূর্তের ভ্রান্তিকর খণ্ড প্রকাশ বলাও যুক্তিসঙ্গত নয়।
মার্কসবাদী দর্শনের মতে ইন্দ্রিয়াদি অর্থ্যাৎ মানুষের জ্ঞান-মাধ্যমের গ্রাহ্য বস্তু, ভাব এবং ভাবনা অর্থ্যাৎজ্ঞান সাপেক্ষ জগৎই সত্য। জ্ঞান-সাপেক্ষ জগতের সামগ্রিক ধারণাই বিমূর্ত ধারণা। জ্ঞেন-জগতের উধ্বে কোনো অজ্ঞেয় বিমূর্ত সত্তা নেই। জ্ঞান-সাপেক্ষ-মূর্ত জগতের প্রতিটি অংশের সঙ্গে পারস্পারিক সম্পর্কে সম্পর্কিত।
সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘এ্যাবষ্ট্রাক্টের’ অর্থ হচ্ছে কোন কিছুর আংশিক বা অপূর্ণ ধারণা। ‘সাধারণ জ্ঞান’, ‘সাধারণ ধারণা’ এরূপ কথা দ্বারা এই ভাবটি ব্যক্ত করা হয়। এর বিপরীত ভাবে ‘কনক্রিট’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। কনক্রিট বলতে কোনো কিছুর বস্তুগত বা নির্দিষ্ট ধারণাকে বুঝায়।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৮-১৯।
যুক্তিবিদ্যায় যে পদ দ্বারা বস্তু-নিরপেক্ষভাবে কোনো গুণ বুঝায় তেমন পদকে গুণবাচক বা এ্যাবসট্রাক্ট পদ (ইংরেজি: Abstract) বলে। যথা, মনুষ্যত্ব, দয়া, অন্ধত্ব। অপর পক্ষে যে পদ দ্বারা কোনো বস্তু বুঝায় তাকে বস্তুবাচক পদ বা কনক্রিট টার্ম (ইংরেজি: Concrete) বলে। যথা, গাছ, রহিম, ঢাকা শহর ইত্যাদি। দর্শনে যা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য নয় তাকে বিমূর্ত এবং যা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য তাকে মূর্ত বলা হয়। মূর্ত এবং বিমূর্তের প্রশ্নে ইতিহাসে মত পার্থক্য দেখা যায়। ভাববাদী দর্শনে বিমূর্তকেই পরম বলে মনে করা হয়। বস্তুবাদী দর্শনে মূর্তের গুণাগুণকে মানসিকভাবে বস্তু থেকে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করাকে বিমূর্ত ক্ষমতা বলা হয়।
উনবিংশ শতকে জার্মান দার্শনিক হেগেল মূর্ত এবং বিমূর্তের জ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুনতর ব্যাখ্যাসহ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। হেগেল মূর্ত এবং বিমূর্তের একটি দ্বন্দ্বমূলক এবং নিত্য বিকাশমান সম্পর্কের কল্পনা করেন। হেগেলের নিকট বিমূর্ত মূর্তের বিপরীত কোনো ভাব বা বস্তু নয়। নিরন্তর বিকাশে মূর্ত ও বিমূর্তে পরিণতি লাভ করে। এই বিমূর্ত আবার মূর্তেও প্রকাশিত হয়। হেগেলের চরম বিমূর্ত অবশ্য একটি ভাববাদী ধারণা। সে ব্যাখ্যায় চরম বিমূর্তের আংশিক প্রকাশ। ইতিহাস, সমাজ, বস্তুজগৎ: সবই এরূপ ব্যাখ্যায় চরম বিমূর্তের মায়ারূপ প্রকাশ-স্থায়ী সত্য নয়।
বস্তুবাদী দর্শন, বিশেষ করে মার্কসবাদী দর্শন হেগেলের মূর্ত-বিমূর্তের ব্যাখ্যায় পরস্পর-বিরোধিতা আরোপ করে। মার্কসবাদী দার্শনিকদের মত মূর্তের বিকাশ ও সামগ্রিকতাই যদি বিমূর্তের সৃষ্টি, তবে মূর্তবিচ্ছিন্নভাবে বিমূর্তের কোনো অস্তিত্ব নেই। তেমন ক্ষেত্রে মূর্তই চরম সত্য, বিমূর্ত নয়। এবং সমাজ, ইতিহাস, জগৎকে বিমূর্তের ভ্রান্তিকর খণ্ড প্রকাশ বলাও যুক্তিসঙ্গত নয়।
মার্কসবাদী দর্শনের মতে ইন্দ্রিয়াদি অর্থ্যাৎ মানুষের জ্ঞান-মাধ্যমের গ্রাহ্য বস্তু, ভাব এবং ভাবনা অর্থ্যাৎজ্ঞান সাপেক্ষ জগৎই সত্য। জ্ঞান-সাপেক্ষ জগতের সামগ্রিক ধারণাই বিমূর্ত ধারণা। জ্ঞেন-জগতের উধ্বে কোনো অজ্ঞেয় বিমূর্ত সত্তা নেই। জ্ঞান-সাপেক্ষ-মূর্ত জগতের প্রতিটি অংশের সঙ্গে পারস্পারিক সম্পর্কে সম্পর্কিত।
সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘এ্যাবষ্ট্রাক্টের’ অর্থ হচ্ছে কোন কিছুর আংশিক বা অপূর্ণ ধারণা। ‘সাধারণ জ্ঞান’, ‘সাধারণ ধারণা’ এরূপ কথা দ্বারা এই ভাবটি ব্যক্ত করা হয়। এর বিপরীত ভাবে ‘কনক্রিট’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। কনক্রিট বলতে কোনো কিছুর বস্তুগত বা নির্দিষ্ট ধারণাকে বুঝায়।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৮-১৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।