আরব লিগ ১৯৪৫ খ্রি বিভিন্ন আরব দেশসমূহকে নিয়ে গঠিত কয়েকটি রাষ্ট্রের সংগঠন বা রাষ্ট্রসমবায়। আগের বছর ১৯৪৪ সালে আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি প্রস্তুতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ছিল মিশর, ইরাক, লেবানন, সৌদি আরব, সিরিয়া, জর্ডন এবং ইয়েমেন। পরে একের পর এক লিবিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া, মরক্কো, কুয়েত, আলজেরিয়া, দক্ষিণ ইয়েমেন, বাহরাইন, কাতার, ওমান এবং পারস্য উপসাগরের উপকূলবর্তী আমিরশাহি রাজ্যগুলি তাতে যােগ দেয়।[১]
আরব লিগ (Arab League) হলো আরব দেশগুলির জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক। যদিও সব দেশগুলিই মূলত পুঁজিবাদ অভিমুখী এবং সাম্রাজ্যবাদী ইউরো-মার্কিন শক্তির অনুগামী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আরব দেশগুলির যেসব রাজনৈতিক বিষয়ে লিগের ভূমিকা বিভিন্ন সময়ে প্রবল হয়ে ওঠে সেগুলি হলো ১. ফ্রান্সের দখল থেকে সিরিয়া ও লেবাননের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন; ২. ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও অস্তিত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম; ৩. আলজেরিয়াকে স্বাধীনতা প্রদানে ফ্রান্সের অহেতুক বিলম্বের বিরােধিতা এবং ৪. আরব দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সংযুক্ত আরব রিপাবলিক সৃষ্টির পর লিগের শক্তিবৃদ্ধি হয়।
প্রতি সদস্য রাষ্ট্রের একজন করে প্রতিনিধি এবং প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন সংস্থার একজন মুখপাত্রকে নিয়ে গঠিত কাউন্সিলের সভা কায়রােতে অনুষ্ঠিত হয়। আরব দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি বিষয়ে সহযােগিতা, আরব সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং আরব দেশগুলির মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদের নিষ্পত্তি লিগের কর্মসূচির অন্তর্গত। তবে আরব ভূখণ্ড থেকে ঔপনিবেশিক শক্তির উচ্ছেদ এবং ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সমন্বিত সংগ্রামই এখন লিগের প্রধান কাজ হলেও সদস্য দেশগুলির মধ্যে ঐক্যবদ্ধ পুঁজিবাদী উন্নয়ন প্রয়াসও অব্যাহত আছে।
নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েলের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্কে শান্তির পরিবেশ গড়ে উঠতে থাকায় সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আরব লিগকে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরােধ তুলে নেবার আবেদন জানান। আরব লিগ সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এই বলে যে অধিকৃত আরব ভূখণ্ডসমূহ থেকে ইজরায়েল সরে না গেলে ওই প্রশ্ন বিবেচিত হবে না।
আরব লিগ ইজরায়েলের উপর হতে অর্থনৈতিক অবরােধ তুলে না নিলেও ২২ সদস্য বিশিষ্ট লিগের অন্যতম সদস্য তিউনিসিয়া ইজরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের কিছু সদস্য আরব লিগকে ইজরায়েল সম্পর্কে নমনীয় মনােভাব গ্রহণের সুপারিশ করে। তাতে সিরিয়া, লেবানন ও লিবিয়া আপত্তি জানিয়ে বলে যে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আংশিক বয়কট নীতি অনুসৃত হওয়া প্রয়ােজন। এদিকে শান্তির পরিবেশ ফিরে এলেও আরব ও ইজরায়েলি উগ্রপন্থীরা হিংসাত্মক ক্রিয়াকলাপ থেকে সম্পূর্ণ বিরত হয়নি।
ইরান বিভিন্ন সময় আরব লিগের সমালোচনা করেছে এবং উল্লেখ করেছে যে সংস্থাটির এখন আর কোনো কার্যকারিতা নেই। ইয়েমেন সৌদি আরব যুদ্ধে সৌদি আরবের অপরাধ নিয়ে আরব লীগ তেমন কোনো কার্যকর কিছু করে নি। এছাড়াও সংস্থাটি ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা না নেয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি আরব লীগের নিন্দা জানান। এছাড়া, ফিলিস্তিনিদের ওপর জায়নবাদী ইসরাইলের অব্যাহত আগ্রাসনের ব্যাপারে সংস্থাটি চোখ বন্ধ রাখায় আরব লীগের সমালোচনা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।[২]
দ্র. বাথ পার্টি
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৮।
২. খবর, আরব লীগ হলো অকার্যকর বিধ্বস্ত বুড়ো: প্রেসিডেন্ট রুহানি, ২১ নভেম্বর ২০১৭, http://parstoday.com/bn/news/iran-i48691
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।