কোনো বস্তু বা বিষয়ের উদ্ভব এবং বিকাশের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত গবেষণার পদ্ধতিকে জনিত পদ্ধতি (ইংরেজি: Genetic Method) বলা হয়। একে ঐতিহাসিক পদ্ধতিও বলা চলে। সপ্তদশ শতকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিকাশের তত্ত্ব যখন প্রাধান্য পেতে শুরু করে, তখন থেকে জ্ঞানের ক্ষেত্রে জনিতপদ্ধতির ব্যবহার ও প্রয়োগ শুরু হয়। এর পূর্বে দর্শন বিজ্ঞান সর্বক্ষেত্রে বিশ্লেষক পদ্ধতিরই প্রাধান্য ছিল।
বিশ্লেষক পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা সমাধানে বস্তু বা বিষয়ের চরিত্র বিশ্লেষণের উপর জোর দেওয়া হয়। কোনো সমস্যার চরিত্র যে তার উদ্ভব এবং বিকাশ দ্বারা নির্দিষ্ট, এই সত্যের স্বীকৃতি বিশ্লেষক পদ্ধতিতে পাওয়া যায় না। ফলে, বিশ্লেষক পদ্ধতির বিষয় জ্ঞান ও কালনিরপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্লেষক পদ্ধতিরই তাই সিদ্ধান্ত অনেক সময়ে কাল্পনিক, অবাস্তব এবং জ্ঞানের বিকাশের প্রতিকূল।
দর্শনে প্রাচীনকাল থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত বিশ্লেষক পদ্ধতিরই ছিল প্রধান পদ্ধতি। কিন্তু জ্ঞানের প্রসার এবং জনিতপদ্ধতির কার্যকারিতার অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় দর্শনও জনিতপদ্ধতি গ্রহণ করতে শুরু করে। বস্তুত দর্শন ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রের আজ জনিত পদ্ধতি জ্ঞানের বিকাশে অন্যতম সহায়ক পদ্ধতি বলে বিবেচিত।
জনিত পদ্ধতি কোনো সমস্যার বিচারে তার উদ্ভবকালের অবস্থা, তার পরবর্তী বিকাশের পর্যায়সমূহ এবং এই বিকাশের অন্তর্নিহিত ধারা নির্ধারণ করার চেষ্টা করে। জনিত পদ্ধতির মৌলিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে এই যে, সমস্যা, বস্তু বা বিষয়মাত্রেরই উদ্ভব এবং বিকাশ আছে। তার আভ্যন্তরিক বিধান ও চরিত্র কেবলমাত্র বিবেচ্য সমস্যাকে স্থান ও কালের সঙ্গে সংযুক্ত করেই নির্ধারণ করা সম্ভব।
জনিত পদ্ধতির যেমন কার্যকারিতা আছে তেমনি তার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। জনিত পদ্ধতি বলতে যদি কেবল বিকাশের বিবরণ বুঝায়, তা হলে সে পদ্ধতি বিবরণকে অতিক্রম করে কোনো বস্তু বা বিষয়ের ভবিষ্যৎ বিকাশ সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত দানে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং বিকাশের বিবরণেই তা পর্যবসিত হয়ে পড়ে। সে জন্য প্রয়োজন বিকাশকে বিশ্লেষণ করা। এ কারণে কার্যকর জনিত পদ্ধতি বলতে এমন পদ্ধতি বুঝায়, যে পদ্ধতি সমস্যার উদ্ভব এবং বিকাশকে যেমন বিবেচনা করবে, তেমনি বিশ্লেষণের সাহায্যে এই বিকাশের ধারা উদঘাটিত করে একটি সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১৮৫।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।