বৈধতা কাকে বলে

রাষ্ট্র বিজ্ঞানে বৈধতা (ইংরেজি: Legitimacy) হচ্ছে সাধারণত শাসনের বা আইনের মাধ্যমে কর্তৃত্বের অধিকার এবং স্বীকৃতি। ম্যাক্স ওয়েবারের মতে, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতাবান ও সুবিধাভােগীরা নিজেদের প্রতাপ ও অধিকারের বৈধতা প্রমাণের জন্য সর্বসাধারণের কাছে নিজেরা যে নীতিগতভাবে গ্রহণযােগ্য সেটা নিত্যই প্রমাণের চেষ্টা করেন। লােকের সেই বিশ্বাসের জোরে শাসকেরা ক্ষমতা বজায় রাখার সঙ্গে ন্যূনতম বলপ্রয়ােগে নিজেদের স্থায়িত্ব সুদৃঢ় করেন। আদর্শের কতকগুলি বাঁধা বুলি থাকে যেগুলির সাহায্যে তাঁদের নিজেদের ন্যায্যতা প্রতিপন্নের চেষ্টা করা হয়। ক্ষমতাবানেরা নিজেদের ভাবনাচিন্তা জনগণের কাছে সহজেই প্রচার করতে পারেন, কারণ জনগণকে প্রভাবিত করার উপযােগী প্রচার মাধ্যম তাঁদের হাতেই থাকে। সেই নিরিখে মার্কসীয় বক্তব্য হলো যে শাসক শ্রেণির চিন্তাভাবনাই সমাজে প্রাধান্য পায়। তা হলেও অনেক দেশে কিছু বিরােধী অভিমত থাকে, যেটা শাসকদের রীতিনীতি মানে না; কিন্তু প্রকৃত কিংবা সম্ভাব্য উৎপীড়নের চাপে সাধারণভাবে আনুগত্য বিরাজ করে।

বৈধতার বিষয়ে রাষ্ট্রতাত্ত্বিকদের মধ্যে মতদ্বৈধ আছে। কারও কাছে সেটা প্রয়ােজনীয়, কারও মতে সর্বক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়। যাঁরা মনে করেন সেটা প্রয়ােজনীয় তাঁরা চান মতাদর্শের ভিত্তিতে রাজনৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা। রক্ষণশীল মতানুসারে বৈধতা অবশ্যই প্রয়ােজন, তবে রাজনৈতিক মতবাদের পরিবর্তে সামাজিক অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটি কার্যকর হওয়া বিধেয়। অবিচারের মতাে অবৈধতা সহজেই চোখে পড়ে। সঠিক বিবেচিত সরকারের প্রতি জনগণের সন্তোষ অপেক্ষা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত সরকারের বিরুদ্ধে লােকের নিন্দার মনােভঙ্গি অনেক বড় আকারে দেখা দেয়।

তথ্যসূত্র:

১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ২১৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!