পুঞ্জিভূত আবেগ বা শক্তির মাধ্যমে শক্তির আধারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া বা উপায়কে ক্যাথারসিস (ইংরেজি: Catharsis) বা বিমোক্ষণ বলা হয়। ইংরেজি ক্যাথারসিস শব্দের মূল গ্রিক শব্দের অর্থে বিশুদ্ধকরণের ভাব যুক্ত ছিল।[১] গ্রিক গণ তাদের নন্দনতত্ত্বে এবং সাহিত্যে এই অর্থে শব্দটির ব্যাখ্যা করেছেন। বিমোক্ষণের মাধ্যমে ভারাক্রান্ত মন হালকা হয়, ব্যক্তি তার স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরে পায়, তার আবেগ পরিশোধিত হয়।[২]
এ্যারিস্টটল ব্যক্তির উপর সঙ্গীতের প্রভাব আলোচনা করে বলছেন যে, ব্যক্তির উপর সঙ্গীতের একটি বিশুদ্ধকরণের দিক আছে।[১] সঙ্গীতের মাধ্যমে ব্যক্তির আবেগের প্রকাশ ঘটে এবং ব্যক্তি তার ফলে আনন্দ বা স্বস্তি বোধ করে। এছাড়াও তিনি ট্রাজেডি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, ট্রাজেডিতে নায়ক নায়িকার ভয়াবহ পরিণতি এবং মহৎ চরিত্রের চূড়ান্ত পতন দর্শক-পাঠকচিত্তে ভীতি এবং করুণার জন্ম দিয়ে বিমোক্ষণ ঘটায়। ধ্রুপদী গ্রিক নাট্য সাহিত্যের ট্রাজেডির আলোচনায় ক্যাথারসিস একটি অপরিহার্য ধারণা।[২]
আধুনিককালে মনোবিজ্ঞানে, বিশেষ করে মানসিক রোগ নিরাময়ের একটি উপায় হিসাবে, বিমোক্ষণের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার দেখা যায়। মনোবিকলনের ফ্রয়েডীয় বিশ্লেষণের ভিত্তিতে মনোবিকলনের রোগীকে যদৃচ্ছা আবেগ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। এরূপ ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী অনুমান করেন যে, রোগীর মনে তার অপূর্ণ কামনা বাসনা, ইচ্ছা অনিচ্ছাসঞ্জাত যে আবেগ জমা হয়ে আছে তা যে কোন প্রকারে প্রকাশের পথ পেলে রোগী আবার রোগপূর্ব স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরে পাবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেগ বিমোক্ষণের এ পদ্ধতি রোগীর মনকে হালকা করে তার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
উল্লেখ্য ব্যক্তির ভারসাম্য বিনষ্টির কারণ ব্যক্তির নিজের মধ্যে তত নয় যত তার পরিবেশ ও সমাজের মধ্যে। রোগীকে সমাজ-নিরপেক্ষ বিবেচনা করে তার মনের কথায় বা সীমাবদ্ধ আচরণে প্রকাশের সুযোগদান কোনো স্থায়ী ফল দিতে পারে না। এ কারণে বিমোক্ষণে আবেগ প্রকাশের একটি পদ্ধতি হলেও তা মনোবিকলনের ক্ষেত্রে নিরাময়ের কোনো নিশ্চিত উপায় হয়ে উঠে নি।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ১০৪-১০৫।
২. কবীর চৌধুরী, সাহিত্যকোষ, মাওলা ব্রাদার্স ঢাকা, অষ্টম মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারি ২০১২, পৃষ্ঠা ৩২।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।