দাদাবাদ বিশ শতকের ইউরোপ-আমেরিকার শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভেতরকার শিল্প আন্দোলন

দাদাবাদ বা খেয়ালবাদ (ইংরেজি: Dadaism) হচ্ছে প্রথম মহাযুদ্ধকালে ইউরোপ এবং পরবর্তী সময়ে আমেরিকার মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কিছুসংখ্যক শিল্পী ও সাহিত্যিকের মধ্যে উদ্ভুত এক প্রকার শিল্প ও সাহিত্য আন্দোলন। মহাযুদ্ধের বিভীষিকায় আকঙ্কগ্রস্ত এবং জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কিছু সংখ্যক ফরাসী বুদ্ধিজীবী সুইজারল্যাণ্ডের জুরিক শহরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাঁদের নিজেদের মতের হতাশা এবং আতঙ্ককে শিল্প ও সাহিত্যে প্রকাশ করার জন্য তাঁরা অ-চিন্তিত এবং অসাধারণ মাধ্যমের আশ্রয় নেন।

জুরিখের খেয়ালবাদীরা মনে করতেন সমাজে যুদ্ধ, ধ্বংস, অসাম্য, অত্যাচার –এসবের কারণ মানুষের নিজের চরিত্রে পাশবিক ব্যবহার। এটাকে স্বীকার করা ব্যতীত কোনো উপায়ন্তর নেই। সমাজ কোনো নীতি মেনে চলে না। শিল্পীর পক্ষেও তাই প্রচলিত কোনো নিয়ম-নীতি মেনে চলার প্রয়োজন নেই। মনে যা আসে তাই করো। শিল্পের মাধ্যম হিসাবে যা ইচ্ছা হয় তাই গ্রহণ করো। অক্ষরগুলো এ যাবৎ যেমন লেখা হয়ে আসছে, তেমন করে কেন লিখবো? অক্ষরগুলো উল্টিয়ে লিখলে ক্ষতি কি? এরূপ অরাজক মানসিকতা থেকে জাঁ ককতু, হানস আর্প, মার্সেল দুকাম্প প্রমুখ সাহিত্যিক ও শিল্পী, সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে প্রচলিত সমস্ত নিয়মনীতিকে লঙ্ঘন করার চেষ্টা করেন।

কবি ও ঔপন্যাসিক জাঁ ককতুর মতে যে-কোন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মই বিশৃঙ্খলার অভিধানবিশেষ। দাদাবাদকে খেয়ালবাদ বলা হয়। বস্তুত ফরাসি ‘দাদা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘খেয়াল ঘোড়া’। আধুনিক শিল্প ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে সার রিয়ালিজম বা অধিবাস্তববাদ নামক যে আর একটি ধারার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় দাদাবাদ তার উৎস হিসাবে কাজ করেছে। দাদাবাদ বা শিল্পে অরাজকতার এই মনোভাব ১৯২২ সালের দিকে স্তিমিত হয়ে পড়ে।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১২২।

Leave a Comment

error: Content is protected !!