খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্র প্রতিক্রিয়াশীল বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী গণবিরোধী চিন্তাধারা

১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে সারা ইউরােপ যখন বৈপ্লবিক অভুত্থানে উত্তাল তখন ইংল্যান্ডে কিছু সংখ্যক অ্যাংলিক্যান যাজকগােষ্ঠীর লােক খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্র (ইংরেজি: Christian Socialism) আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এই খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্র বা খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্রী আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিলো সমাজ সংস্কারমূলক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে চার্চকে যুক্ত করা।

জে. এফ. ডি. মরিস এবং চালর্স কিংসলে নামে দু জন অ্যাংলিক্যান যাজক ছাড়াও টমাস কার্লাইল, জন ম্যালকম, লাডলাে ফর্বস প্রমুখ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁরা সেই সময়ে ইংল্যান্ডের শ্রমিক শ্রেণীর দুরবস্থায় অভিভূত হয়ে পড়েন এবং ওই দু জন যাজক সনদী আন্দোলনকে মদত যােগাতেন। তাঁরা সবাই অনুভব করেন যে সমকালীন সমস্ত সমাজতন্ত্রী আন্দোলনে মানবজাতির আধ্যাত্মিক চাহিদা ছিল উপেক্ষিত এবং সেজন্য সমাজতন্ত্রকে খ্রিস্টান ধর্মগ্রন্থ নিউ টেস্টামেন্টে বিধৃত সমাজোন্ননের নীতিকথার ভিত্তিতে রঞ্জিত করা দরকার।

খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্রী আন্দোলন অবাধ বাণিজ্যের বিরােধী এবং কলকারখানায় রবার্ট ওয়েনের নিদর্শনে সমবায় ব্যবস্থার সমর্থক ছিল। আধুনিক ধনতান্ত্রিক শিল্পোন্নয়নের পরিবর্তে তাঁরা মধ্যযুগীয় কুটির শিল্পের বেশি অনুরাগী ছিলেন। তাঁরা শ্রমজীবীদের জন্য কলেজ স্থাপন (১৮৫৪) এবং প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেন, ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে তাদের দাবি ও অধিকার অর্জন প্রয়াসকে সমর্থন করতেন।

খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্র বা খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্রী আন্দোলনের ধারা ফেবিয়ান সােসাইটি ও গিল্ড সােসাইটি ছাড়াও কোনও কোনও দেশের মননশীল ব্যক্তি সেটি বজায় রাখেন, বিশেষ করে যাঁরা মার্কসের বৈপ্লবিক প্রণালীতে আস্থাবান না হয়ে শিক্ষা, শ্রমিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় বিশ্বাসী ছিলেন, তাঁরা মনে করত যে খ্রিস্টের নীতিকথা এক নতুন সমাজের মাধ্যমে পরিপূর্ণ রূপায়ণ সম্ভব, কারণ তাঁদের মতে খ্রিস্টধর্মের অর্থই হলো সামাজিক দায়িত্ব এবং প্রকৃত ধর্মসম্মত জীবনযাপনে বিষয়আশয় সঙ্গতিশীল।

খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্র বা খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্রী আদর্শ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘকাল স্তিমিত থাকার পর ইংল্যান্ডে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্রী ধারা পুনরুজ্জীবিত হয় বেশ কয়েকটি খ্রিস্টীয় সংস্থার সমন্বয়ের ফলে। এরা সাধারণভাবে খ্রিস্টীয় সমাজতন্ত্রীরা হলেন রক্ষণশীল। তা হলেও তাঁদের রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যসূচিতে বহু কল্যাণকর ও পঠনমূলক বিষয় থাকে। দ্বিতীয় বিশ্ব-মহাযুদ্ধের পর অস্ট্রিয়ার পার্টি পিপলস নাম পরিগ্রহ করে।

আরো পড়ুন:  কল্পলৌকিক সমাজতন্ত্র আধুনিক সমাজতান্ত্রিক চিন্তার প্রথম স্রোতটিকে চিহ্নিত করে

তথ্যসূত্র:

১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৯১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!