ছন্নছাড়া সর্বহারা বা লুম্পেন সর্বহারা বা ছন্নছাড়া প্রলেতারিয়েত (ইংরেজি: Lumpen-proletariat) হচ্ছে বুর্জোয়া শ্রেণি থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সর্বহারার হঠকারী ও ছন্নছাড়া অংশ। লুম্পেন শব্দটি জার্মান। কার্ল মার্কস তাঁর ‘এইটিন্থ ব্রুমেয়র’ গ্রন্থের পঞ্চম অধ্যায়ে এক ধরনের ব্যক্তির কথা বলেছেন যারা সব শ্রেণির কাছেই জঞ্জাল-বিশেষ। উচ্ছৃঙ্খল এই জনসম্প্রদায়ভুক্ত লােকেরা বুর্জোয়া শ্রেণি থেকে বিচ্ছিন্ন, হঠকারী ও ছন্নছাড়া।
ছন্নছাড়াদের মধ্যে থাকে ভবঘুরে, কর্মচ্যুত সৈন্য, ছাড়া-পাওয়া কয়েদি, পকেটমার, নিষিদ্ধ পল্লীর কারবারি, ভিখিরি, কাগজ-কুড়ানি ইত্যাদি যাদের উপর ফ্রান্সে উনিশ শতকের মধ্যবর্তীকালে ক্ষমতা দখলের সময় লুই বােনাপার্ত নির্ভর করতেন। পরবর্তীকালে মার্কসীয় লেখকেরা প্রায়শই সঙ্গতিবিহীন হলেও ফ্যাসিবাদের উত্থানে এই ধরনের লােকের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করেন। ত্রতস্কির দৃষ্টিতে শ্রমিক-শ্রেণির বড় এক অংশ ছন্নছাড়া সর্বহারা সম্প্রদায়ে পরিণত হয়।
বস্তুত প্রত্যয়টির দ্বারা কোনও সুস্পষ্ট সামাজিক শ্রেণি বােঝায় না যাদের একটা আর্থ-রাজনৈতিক ভূমিকা থাকে। পুঁজিবাদী সমাজে চরম সংকটকালে সামাজিক টানাপড়েনে বিস্তর মানুষ শ্রেণিচ্যুত হয়ে ভেসে বেড়ায়, যাদের প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন ও মতাদর্শে কাজে লাগানাে হয়।
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১০৭।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।