চিরস্থায়ী বিপ্লব হচ্ছে রুশ নেতা ত্রতস্কির চিন্তা

চিরস্থায়ী বিপ্লব (ইংরেজি: Permanent Revolution) কথাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন কার্ল মার্কসফ্রিডরিখ এঙ্গেলস; ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট লিগের সাধারণ সংসদে এই অর্থে যে বুর্জোয়া শ্রেণি যত শীঘ্র সম্ভব বিপ্লবের সমাপ্তি ঘটাতে চাইবে, ততই আমাদের কাজ হবে সেটাকে চিরস্থায়ী করা, যত দিন না পৃথিবীর প্রধান দেশগুলিতে সর্বহারা শ্রেণি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করছে! চিন্তাটি অবশ্য মার্কস প্রুধোঁ-র কাছ থেকে পান। উভয়ের ভাবধারায় ত্রৎস্কি প্রভাবিত হন। লেনিন চাইতেন বিপ্লবের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও নিরন্তর প্রয়াস; কিন্তু তার সঙ্গে চিরস্থায়ী বিপ্লব প্রত্যয়ের মিল নেই।

চিরস্থায়ী বিপ্লবের প্রবক্তা ত্রৎস্কির বক্তব্য ছিল যে অনুন্নত দেশে ইতিহাসের যাবতীয় পর্ব অতিক্রমের প্রয়ােজন নেই, যেগুলি উন্নত দেশগুলি করেছে। অনুন্নত ও উন্নত সমুদয় পর্যায়কে একটির উপর অপরটি চাপিয়ে (telescope) বা ডিঙিয়ে বিপ্লবের কর্মসম্পাদন করা দরকার। প্রাক-পুঁজিবাদী উন্নয়নশীল দেশের সর্বহারা শ্রেণি দেশি বুর্জোয়া শ্রেণি অপেক্ষা অনেক শক্তিশালী। বুর্জোয়া শ্রেণি তাদের ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক বিপ্লব সাধনের ভূমিকা পালনে অক্ষম হলে সর্বহারা শ্রেণি দেশকে আধা সামন্তবাদী পর্যায় থেকে সরাসরি সমাজতন্ত্রে নিয়ে যাবে। বিজয়ী সর্বহারা শ্রেণিকে যুগপৎ অন্যান্য বিশেষ করে উন্নত দেশগুলিতে বিপ্লব প্রচেষ্টায় মদত জোগাতে হবে।

ত্রৎস্কির মতে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামী একটি স্তরে বুর্জোয়া শ্রেণির শাসন অথবা তার পরিবর্তে সর্বহারা ও কৃষকদের অন্তর্বর্তীকালীন যৌথ গণতান্ত্রিক বিপ্লবী একনায়কতন্ত্রের শাসন পর্যায় নিষ্প্রয়ােজন। ত্রৎস্কি মনে করতেন লেনিন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবে ঠিক এই রণনীতি প্রয়ােগ করেছিলেন।

লেনিন ও স্তালিন যখন তাঁদের ‘এক দেশে সমাজতন্ত্র’ মতবাদ ব্যক্ত করেন তখন ত্রৎস্কি তার পরিণাম বিষময় হবে বলে হুঁশিয়ার করে দেন। কারণ স্তালিনের যৌথ কৃষিব্যবস্থা সময় অনুযায়ী অনুপযােগী এবং কমিন্টার্ন সােভিয়েত দেশের পররাষ্ট্র বিভাগের একটি অবিপ্লবী দপ্তরে পরিণত হবে বলে ত্রৎস্কি মনে করেছিলেন। তাঁর মতে সােভিয়েত দেশের শিল্পোন্নয়ন ও জীবনধারণের মান কিছুটা উন্নত করাই সমাজতন্ত্র নয়, চাই শ্রমের উচ্চতর উৎপাদন ক্ষমতা এবং পুঁজিবাদী দেশের চেয়েও উন্নততর জীবনযাত্রার মান। তার জন্য চাই সর্বহারা শক্তির বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য, যার জন্য প্রয়ােজন অন্যান্য উন্নত দেশেও বিপ্লব ঘটানাে।

আরো পড়ুন:  শ্রমিকদের সংগঠন ও বিপ্লবীদের সংগঠন

তথ্যসূত্র:

১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৬।

Leave a Comment

error: Content is protected !!