বুদ্ধিবাদ দ্বারা বুদ্ধির ব্যবহার, বিকাশ, এবং ব্যায়ামকে বোঝানো হয়

বুদ্ধিবাদ (ইংরেজি: Intellectualism) দ্বারা বুদ্ধির ব্যবহার, বিকাশ, এবং ব্যায়ামকে বোঝানো হয়। বুদ্ধিবাদ বলতে কখনো কখনো মনীষী হওয়ার অভ্যাস এবং মনের জীবনকে বোঝায়। জ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধির ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানুষের বুদ্ধি তার দেহ এবং বাস্তব পরিবেশ-বিচ্ছিন্ন কোনো স্বাধীন শক্তি নয়। বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে ব্যক্তিক প্রত্যক্ষ সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যক্তির মানসিক বা বুদ্ধিগত ক্ষমতার জন্ম হয়েছে এবং তার বিকাশ ঘটেছে। বুদ্ধির এই আপেক্ষিক বিচার এবং তার দ্বন্দ্বমূলক বৈশিষ্ট্যের স্বীকৃতি সর্বযুগে সমান নয়।

প্রাচীনকালে মানুষের অসহায় অবস্থায় বুদ্ধি এবং বাস্তব অবস্থার পারস্পরিক সম্পর্ক সহজবোধ্য ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে মানুষের বুদ্ধির যত বিকাশ ঘটেছে, তত অনেকের কাছে বুদ্ধি বাস্তব অবস্থা এমনকি মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা মস্তিষ্ক হতে বিচ্ছিন্ন এক বিদেহী এবং বিমূর্ত শক্তিরূপে প্রতিভাত হয়েছে। এই ধারণার ভিত্তিতে ভাববাদী জ্ঞানতত্ত্ব মানুষের জ্ঞানকে কেবলমাত্র বুদ্ধিসঞ্জাত বলে বিবেচনা করেছে। এবং বুদ্ধি যেহেতু একটি স্বাধীন শক্তি এবং ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে তার কোনো যোগ নেই, এই অনুমানে ভাববাদ ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানকে অসত্য বলে সিদ্ধান্ত করেছে। এইভাবে জ্ঞানের ক্ষেত্রে বুদ্ধিগত জ্ঞান সত্য এবং ইন্দ্রিয়গত জ্ঞান অসত্য, ভাববাদীগণ এরূপ অভিমত পোষণ করেছেন।

ইন্দ্রিয়-বিচ্ছিন্ন ভাববাদী বুদ্ধিবাদী তত্ত্বের সাক্ষাৎ আধুনিক ইউরোপীয় দর্শনে দেকার্ত, তার অনুসারী এবং স্পিনোজার মধ্যে পাওয়া যায়। জ্ঞানের এই তত্ত্ব যুক্তিবাদ বা র‍্যাশনালিজম বলে ইউরোপীয় দর্শনের ইতিহাসে পরিচিত। একদিকে বিজ্ঞানের অগ্রগতি, অন্যদিকে মানুষের সমাজে ধনী এবং নির্ধনের আধুনিক শ্রেণীসংগ্রাম বৃদ্ধি এবং বাস্তবের পারস্পরিক অন্তঃসম্পর্ককে সাধারণভাবে অনস্বীকার্য করে তুললেও, বর্তমানকালেও মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে বুদ্ধিকে একটি স্বাধীন শক্তি হিসেবে অত্যধিক গুরুত্বদানের একটি প্রবণতা দেখা যায়। বুদ্ধিকে মানুষের সমাজ ও ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বিবেচনা করার এই প্রবণতাকে বুদ্ধিবাদ বলা চলে।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২৩০-২৩১।

Leave a Comment

error: Content is protected !!