ভাববাদী দর্শনের দুটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে অভিজ্ঞতা-পূর্ব এবং অভিজ্ঞতালব্ধ (ইংরেজি: Apriori and Apsteriori)। জ্ঞানের ক্ষেত্রে কোনো জ্ঞান যথার্থ এবং কোনো জ্ঞান যথার্থ নয়-এই প্রশ্নে প্রাচীনকাল থেকেই শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়। প্লেটো, বার্কলে, কাণ্ট প্রমুখ প্রখ্যাত ভাববাদী দার্শনিকের মতে জ্ঞান হচ্ছে দুরকম: অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ঊর্ধ্ব বা অভিজ্ঞতা-পূর্ব জ্ঞান। কিন্তু ইন্দ্রীয়ের শক্তি সীমাবদ্ধ বলে ইন্দ্রীয়লব্ধ জ্ঞান চরম সত্যের জ্ঞানদানে সক্ষম নয়। সঠিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা-পূর্ব জ্ঞান, অর্থ্যাৎ সঠিক জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয় না।
ফরাসি দার্শনিক দেকার্ত মনে করতেন মানুষের নিজের অস্তিত্ববোধ অভিজ্ঞতা-উধ্বজ্ঞান। যেমনি অঙ্গশাস্ত্রের সিদ্ধান্ত কিংবা কোনো কিছু একই সঙ্গে সত্য এবং মিথ্যা হতে পারে না, এরূপ যৌক্তিক সিদ্ধান্তও অভিজ্ঞতালব্ধ নয়- এরা অভিজ্ঞতা ঊর্ধ্ব। কাণ্ট ‘নিজ সত্তার বস্ত’ বা ‘থিং ইন ইটসেলফ’কে অজ্ঞেয় রাখার জন্য অভিজ্ঞতালব্ধ এবং অভিজ্ঞতাঊর্ধ্ব কথাকে ব্যবহার করেছেন। তাঁর মতে ইন্দ্রীয়ের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান সত্তার দৃষ্ট প্রকাশের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। এরূপ জ্ঞান সত্তার ‘নিজ সত্তার অবস্থিত বস্তুর’ যথার্থ জ্ঞান নয়। কিন্তু নিজ সত্তায় অবস্থিত বস্তুই হচ্ছে চরম সত্তা। এই চরম সত্তার জ্ঞান অভিজ্ঞতার বাইরে কেবল অনুভূতির মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব।
কাণ্টের মতে, স্থান, কাল, কার্যকারণ, সম্পর্ক ইত্যাদি জ্ঞানসুত্রগুলি মানুষের অভিজ্ঞতাঊর্ধ্ব বোধ, অভিজ্ঞতালব্ধ নয়। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী দর্শন জ্ঞানকে অভিজ্ঞতালব্ধ এবং অভিজ্ঞতা-পূর্ব বলে পরস্পর-বিরোধী মাধ্যমে বিভক্ত করার বিরোধী। এই দর্শনের মতে জ্ঞানের একমাত্র মাধ্যম, ‘অভিজ্ঞতা-পূর্ব’ বলে জ্ঞানের কোনো মাধ্যম নেই।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৬৪।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।