ঈশ্বরবাদ বা শ্বরবাদ যা যৌক্তিক একেশ্বরবাদ (ইংরেজি: Deism) হচ্ছে সৃষ্টির আদি কারণরূপে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস। এটি একটি দার্শনিক তত্ত্ব। ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে এর কিছুটা পার্থক্য আছে। ধর্মীয় ঈশ্বর কেবল আদি স্রষ্টা নন। তিনি তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধির নিকট প্রত্যাদেশ মারফত তাঁর অস্তিত্ব ঘোষণা করেন। তিনি সৃষ্টির ধারক, বাহক, প্রতিপালক এবং বিচারক। দয়া-মায়া, কঠোরতা বিভিন্ন গুণে তিনি গুণান্বিত বলে মানুষ কল্পনা করে। তিনি সর্বশক্তিমান। এই প্রচলিত ধর্মীয় ঈশ্বরবাদের পরিবর্তে ইংল্যাণ্ডের লর্ড হার্বার্ট (১৫৮৩-১৬৩৮ খ্রি.) দার্শনিক ঈশ্বরবাদের ব্যাখ্যা তৈরী করেন।
দার্শনিক ঈশ্বরবাদের মতে সৃষ্টির আদি কারণ হিসাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আমাদের বিশ্বাস করতে হয়। কিন্তু ধর্মীয় ঈশ্বর এবং সৃষ্টির আদি কারণরূপ ঈশ্বর এক নয়। দার্শনিক ঈশ্বর বিশ্বজগতের আদি কারণ মাত্র। তিনি জগতের সর্বকালের ধারক, বাহক কিংবা নিয়ন্তা নন। সৃষ্ট হওয়ার পরে সৃষ্টির সঙ্গে ঈশ্বরের কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্ব জগৎ তার আপন বিধান অনুযায়ী চলছে, ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী নয়।
দার্শনিক ঈশ্বরবাদের প্রচারকালে এর একটি প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল। প্রচলিত অন্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস-বিজ্ঞানের বিকাশে প্রতিবন্ধকতার কাজ করছিল। কিন্তু বাস্তব জীবনে বিজ্ঞানের স্বীকৃতিকে অনিবার্য করে তুলেছিল। এরূপ অবস্থায় ঈশ্বরের অস্তিত্বের বিশ্বাস জাগতিক জ্ঞানের বিকাশে যাতে প্রতিবন্ধক হয়ে থাকতে না পারে, সে জন্যই হার্বার্ট দার্শনিক ঈশ্বর তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেন।
ঈশ্বরকে সামাজিকভাবে অস্বীকার করা চলে না, আবার ঈশ্বরকে জ্ঞানের পথে দুর্লঙ্ঘ্য পাহাড় করেও রাখা যায় না –দার্শনিক ঈশ্বরবাদ এই মানসিকতা থেকেই উদ্ভুত। এ তত্ত্ব অনুযায়ী যুক্তির মাধ্যমেই ঈশ্বরকে স্বীকার করা যায়। আবার যুক্তিগতভাবে এও স্বীকার করতে হয় যে, আদি কারণের অধিক কিছুর জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজন নাই। এভাবে ঈশ্বর ও বিজ্ঞান উভয়কে রক্ষা করা সম্ভব বলে শুধু হার্বার্ট নন, তাঁর পরবর্তী ভলটেয়ার, রুশো, লক, নিউটন, অনেক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী এই যুগে এই অভিমত পোষণ করেছিলেন। আধুনিককালে ধর্মীয় ঈশ্বরবাদ এবং দার্শনিক ঈশ্বরবাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। উভয়ই মূলত ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী তত্ত্ব বলে পরিচিত।
তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ১২৮-১২৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।
I am a deist . Would you please refer me some books on Deism ( written in Bengali Language )!
Thank you .