বহুঈশ্বরবাদ হচ্ছে গোত্রপন্থীদের নিজস্ব ধর্ম ও আচারানুসারে পালিত দেবদেবীদের উপাসনা

বহুঈশ্বরবাদ (ইংরেজি: Polytheism) হলো একাধিক দেবদেবীর উপাসনা বা বিশ্বাস, যা সাধারণত তাদের নিজস্ব ধর্ম এবং আচারের সাথে বহু দেবদেবীদের এক মণ্ডপে একত্রিত করে। এক কথায় বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসকে বহু ঈশ্বরবাদ বলা হয়।

আদি গোত্রভিত্তিক সমাজে অলৌকিক শক্তির আধার হিসেবে মানুষ প্রাকৃতিক জগতের বিভিন্ন সজীব বা আজীব বস্তু কিংবা বস্তুর প্রতীককে পূজা করত। গোত্রতান্ত্রিক সমাজের ভাঙ্গনের পরে এবং সমাজ অধিকতর সংগঠিত রূপ নেওয়ার পর্যায়ে গোত্রপ্রতীক বা বস্তুর স্থানে শূণ্যে বা উর্ধ্বস্থানে অবস্থানকারী দেবতাকূলের উদ্ভব ঘটে। মানুষের সমাজে শ্রেণীগত পার্থক্য এবং সামাজিক সম্পর্কগত স্তরক্রম দেবতাদের জগতেও প্রতিফলিত হতো। কিন্তু তখনো সমাজ সুদৃঢ় ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হয় নি। তাই ছোট বড় বিভিন্ন পর্যায়ের দেবতাদের অস্তিত্ব মানুষের কল্পনায় বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন হিসেবে বজায় ছিল।

কালক্রমে গোত্রসমাজ ভেঙ্গে দাস ও প্রভু সমাজের উদ্ভব হয়। দাসের শ্রম ও শোষণের ভিত্তিতে প্রভু শাসকগণ বৃহদাকার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে। এই অবস্থার প্রতিফলনও মানুষের ধর্মীয় কল্পনার মধ্যে ঘটতে দেখা যায়। দেবতাদের মধ্যেও এবার ছোট বড়র তারতম্য স্পষ্ট হয়ে উঠে। যে দেবতা অধিক শক্তিশালী সে অধিক পূজ্য হতে থাকে। অবশ্য অন্যান্য দেবতাও সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে কম বেশি স্বীকৃতি পায়। সমাজে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন সংঘটিত হয়।

সামন্তবাদী যুগে একচ্ছত্র সম্রাটের অধীনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূস্বামী এবং তাদের শাসিত অঞ্চলের স্থানে বৃহদাকারের রাষ্ট্র সংগঠিত হতে থাকে। ধর্মেও বহু দেবতাদের স্থানে এক সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ধর্মীয় ধারণায় প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। ইহুদি এবং খৃষ্টান ধর্মের মধ্যে এবং পরবর্তীকালে ইসলামের মধ্যে এক স্রষ্টার কল্পনা প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র:

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩১৭-৩১৮।

Leave a Comment

error: Content is protected !!