প্রয়োগবাদ বা দরকারবাদ বা প্রাগমেটিজম (ইংরেজি: Pragmatism) সত্য নিরূপণ করে বিচার্য বিষয়ের কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের উপযোগিতার ভিত্তিতে। প্রয়োগবাদ আধুনিক দর্শনের একটি অন্তর্মুখী ভাববাদী তত্ত্ব। ইংরেজি প্রাগমেটিজম কথাটির উৎপত্তি ঘটেছে গ্রিক শব্দ ‘প্রাগমা’ থেকে। ‘প্রাগমা’র অর্থ হচ্ছে কার্য সম্পাদিত বা কার্যকৃত।
প্রয়োগবাদ শব্দ এবং চিন্তাধারাকে ভবিষ্যদ্বাণী, সমস্যা সমাধান এবং কর্মের সরঞ্জাম এবং যন্ত্র হিসাবে বিবেচনা করে; আবার চিন্তাধারার কাজটিকে বর্ণনা করা, প্রতিনিধিত্ব করা বা বাস্তবতার প্রতিবিম্ব হিসেবে ধরাকে প্রত্যাখ্যান করে। প্রয়োগবাদীরা দাবি করেন যে জ্ঞানের প্রকৃতি, ভাষা, ধারণাগুলি, অর্থ, বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানের মতো বেশিরভাগ দার্শনিক বিষয়গুলি সেগুলোর কার্যকরী ব্যবহার এবং সাফল্যের দিক থেক বিবেচিত হয়। প্রয়োগবাদী দর্শন জোর দেয় “মানুষের অভিজ্ঞতার ভেতরে ধারণাগুলির পরীক্ষণ ও কাজের উপযোগিতার ব্যবহারিক প্রয়োগের উপর”।
উইলিয়ামস জেমস প্রয়োগবাদের একজন প্রবক্তা। উইলিয়াম জেমসের মতে, আমরা কোনো কাজ করি কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। কাজেই আমাদের কোনো বিশেষ কর্ম সত্য কিংবা মিথ্যা, যথার্থ কিংব অযথার্থ তার নিরূপক হবে সেই উদ্দেশ্য সাধনে তার ক্ষমতা, অক্ষমতার ভিত্তিতে। কোনো কার্য দ্বারা যদি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সাধিত হয় তা হলে কাজটি অবশ্যই সত্য।
অবশ্য কোনো কিছুর কার্যোপযোগিতা দ্বারা প্রয়োগবাদীগণ প্রমাণ ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রমাণিত সর্বজনস্বীকৃত উপযোগিতাকে বুঝান না। তাদের কাছে উপযোগিতার নির্ধারক হচ্ছে ব্যক্তির নিজস্ব অভিমত। ব্যক্তি যদি মনে করে বিষয়টি উপযোগী তবে তা তার কাছে সত্য।
তথ্যসূত্র
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ৩১৮-৩১৯।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।