প্রতিজ্ঞা বা যৌক্তিক বাক্য হচ্ছে যুক্তিশাস্ত্রে দুটি পদের মধ্যে একটি সম্পর্কের উল্লেখমূলক বাক্য

যুক্তিশাস্ত্রে দুটি পদের মধ্যে একটি সম্পর্কের উল্লেখমূলক বাক্যকে প্রতিজ্ঞা বা যৌক্তিক বাক্য (ইংরেজি: Proposition) বলে। সমসাময়িক বিশ্লেষণী দর্শনে প্রতিজ্ঞা শব্দটির বিস্তৃত ব্যবহার রয়েছে। রহিম একজন মানুষ অথবা রহিম হয় একজন মানুষ, একটি যৌক্তিক বাক্যের দৃষ্টান্ত। এখানে ‘রহিম’ এবং ‘মানুষ’ বাক্যের দুটি পদ : উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদ। বাক্যটিতে এ দুটি পদের মধ্যে একটি সম্পর্কের উল্লেখ করা হয়েছে। ইংরেজিতে ক্রিয়াপদকে যৌক্তিক পদের উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের মধ্যকার সংযোজক বা ‘কপুলা’ বলা হয়। বাংলায় অনেক সময় উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে ক্রিয়াপদ উহ্য থাকে।

যুক্তির মাধ্যমে ব্যবহৃত যৌক্তিক বাক্য প্রথমে মনের মধ্যে গঠিত হয়। মনের অপ্রকাশিত বাক্যকে মানসিক বাক্য বলা যায়। ইংরেজিতে একে জাজমেন্ট বলা হয়। উদ্দেশ্য এবং বিধেয় পদের মধ্যকার সম্পর্কটি হ্যাঁ বাচক এবং না বাচক হতে পারে। আবার বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদের সংখ্যা বা ব্যক্তার্থের সমগ্র কিংবা উহার অংশবিশেষ সম্পর্কে বিবৃত হতে পারে। সম্পর্কের এ প্রকারভেদের ভিত্তিতে যুক্তিশাস্ত্রের প্রচলিত বাক্য-বিন্যাসের ক্ষেত্রে যৌক্তিক বাক্যকে ১. হ্যাঁ বাচক, ২. না বাচক, ৩. সার্বিক এবং ৪. বিশেষ এই চারভাগে ভাগ করা যায়।

‘সকল মানুষ মরণশীল’ ইহা একটি সার্বিক হ্যাঁ বাচক বাক্য। এখানে ‘মরণশীল’ বিধেয় পদটি ‘মানুষ’ পদের সকল সংখ্যা সম্পর্কে হাঁ বাচকরূপে বিবৃত হয়েছে। ‘কোনো মানুষ অমর নয়।’ এখানে ‘অমর’ বিধেয় পদটি ‘মানুষ’ পদের সমগ্র সম্পর্কে না বাচকরূপে বিবৃত হয়েছে। এটি সার্বিক না বাচক বাক্য। ‘কিছু মানুষ সৎ’ এটি একটি বিশেষ হাঁ বাচক বাক্য। এবং ‘কিছু মানুষ সৎ নয়’ এটি একটি বিশেষ না বাচক বাক্য। যৌক্তিক বাক্যের এ প্রকারভেদকে সংক্ষেপে সা. হ্যাঁ; সা, না এবং বি. হ্যাঁ; বি, না রূপে উল্লেখ করা যায়।

তথ্যসূত্র

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; ৫ম মুদ্রণ জানুয়ারি, ২০১২; পৃষ্ঠা ৩২৩।

আরো পড়ুন:  অনুমান যৌক্তিক বাক্যের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি

Leave a Comment

error: Content is protected !!