অনুমান যৌক্তিক বাক্যের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি

অনুমান (ইংরেজি: Inference) হচ্ছে যুক্তির ক্ষেত্রে এক কিংবা একাধিক যৌক্তিক বাক্যের মাধ্যমে তাদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি। অনুমান প্রধানত অবরোহ এবং আরোহ অনুমান হিসাবে বিভক্ত।

অবরোহ অনুমানের মধ্যে এরিস্টটলীয় যুক্তিবিদ্যার সিলোজিজম বা দুটি যৌক্তির বাক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রধান বলে মনে করা হয়। সকল মানুষ মরণশীল, সক্রেটিস একজন মানুষ; সুতরাং সক্রেটিস মরণশীল-এটি সিলোজিজমের একটি প্রচলিত দৃষ্টান্ত।

এরূপ অনুমানের মূল ভিত্তিকে এ্যরিস্টটলের ‘ডিকটাম ডি অমনি এট নালো’ বলে উল্লেখ করা হয়। এরিস্টটলের এই বিধান অনুযায়ী সামগ্রিকভাবে একটি শ্রেণী বা জাতি সম্পর্কে যে কথা সত্য, উক্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কেও সে কথা অনুরূপভাবে সত্য। অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তের সত্যতা নির্ভর করে যুক্তির কাঠামোর মধ্যে গৃহীত বাক্য বা বিবৃতির সত্যতার উপর। গৃহীত হেতু বা যৌক্তিক বাক্য যদি সত্য হয় তা হলে সিদ্ধান্ত সত্য হবে।

অবরোহ অনুমান তাই যুক্তির কাঠামোগত সঙ্গতি বা আঙ্গিক সত্যতার উপর অধিক জোর দেয়। এই সঙ্গতি বিধানের জন্য যুক্তিবিদগণ অনুমানের কতকগুলি নিয়ম নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। এগুলির মধ্যে নিম্নোক্তগুলি উল্লেখযোগ্য। ১. একটি যুক্তির মধ্যে ব্যবহৃত শব্দ বা পদকে একটি নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহার করতে হবে, একাধিক অর্থে নয়। ২. একটি যুক্তির মধ্যে যদি না বাচক বাক্য থাকে তবে তার সংখ্যা একের অধিক হতে পারবে না। ৩. মধ্য পদের মাধ্যমে যুক্তির প্রধান ও অপ্রধান পদকে সম্পর্কিত হতে হবে। এই নিয়মগুলি পালন করে যুক্তি গঠন করলে সে যুক্তিসঙ্গতসম্পন্ন হবে। কিন্তু কার্যত মানুষ নিয়মগুলি পালনের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে না বলে অনেক সময় যুক্তিতে পরস্পরবিরোধী এবং অসঙ্গতিপূর্ণ বাক্য এবং সিদ্ধান্তের ব্যবহার দেখা যায়।

তথ্যসূত্র:

১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২২৪-২২৫।

Leave a Comment

error: Content is protected !!