সমাজ বলতে মানুষের তৈরি এমন সংগঠনকে বোঝায় যা যুগ হতে যুগে পরিবর্তিত হয়

ব্যক্তি বলতে সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক একক বা মানুষকে বুঝান হয়। অন্যদিকে মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তি হচ্ছে বুদ্ধি এবং আবেগের বিশিষ্ট প্রকাশ সমন্বিত চরিত্র। ব্যক্তি নিয়ে সমাজ। আবার সমাজের মধ্যেই ব্যক্তির অস্তিত্ব। সমাজের বাইরে ব্যক্তির অস্তিত্ব সম্ভব নয় বলেই একদিন সমাজের সৃষ্টি হয়েছিল।

ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সম্পর্কের বিষয়টি দর্শন ও সমাজতত্ত্বের একটি বিশেষ আলোচিত প্রশ্ন। কারণ ব্যক্তি ও সমাজের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অনস্বীকার্য হলেও ব্যক্তি বা সমাজ যুগ নিরপেক্ষ কোনো সত্তা নয়। সমাজ বলতে মানুষের তৈরি একটি সংগঠনকে বুঝায়। এ সংগঠন যুগ হতে যুগে পরিবর্তিত হয়। সমাজের একক ব্যক্তি বটে, কিন্তু ব্যক্তিমাত্রই সমাজকে নিয়ন্ত্রিত করে না। বহু ব্যক্তির সম্মেলনে সৃষ্ট সমাজ ক্রমাণ্বয়ে একটা জটিল স্বাধীন অস্তিত্বময় সত্তা হিসাবে ইতিহাসে বিকাশ লাভ করেছে।

সামাজিক সংগঠনের প্রকৃতি নির্ধারিত হয় প্রধানত তার উৎপাদনের উপায় কবলিত করার মাধ্যমে কোনো শ্রেণী অপর শ্রেণীর উপর শোষণ ও প্রভুত্ব কায়েম করে রাখতে পারবে ততদিন ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক বিরোধাত্মত থাকা স্বাভাবিক। কেননা, এমন পর্যায়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামো কার্য্যত প্রভু-শ্রেণীসমূহের সমাজ বা মুখপাত্ররূপে শোষিত শ্রেণীসমূহের নিকট প্রতিভাত হয়। তাই বলে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক চিরকাল এরূপ বিরোধাত্মক থাকবে তেমন ভাবাও সঙ্গত নয়।

আসলে সমাজের উদ্ভব ব্যক্তির সঙ্গে বিরোধের মাধ্যমে নয়। পারস্পরিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে সমাজের সৃষ্টি। সমাজের বিকাশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে সাম্যবাদের প্রবক্ত কার্ল মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন প্রমুখ সমাজতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দার্শনিকগণ এরূপ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, ভবিষ্যতে একদিন যখন জীবিকার ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে তখন সমাজে বিরোধাত্মক শ্রেণীসমূহের যখন অস্তিত্ব থাকবে না, তেমনি ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক পরিপূর্ণরূপে পরস্পর নির্ভরশীল সম্পর্ক বলে আবার প্রতিভাত হবে।

তথ্যসূত্র:
১. সরদার ফজলুল করিম; দর্শনকোষ; প্যাপিরাস, ঢাকা; জুলাই, ২০০৬; পৃষ্ঠা ২১৯-২২০।

আরো পড়ুন:  সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজম

Leave a Comment

error: Content is protected !!