রাজনৈতিক আমূল পরিবর্তনবাদ বা রাজনৈতিক আমূল সংস্কারবাদ (বা সংক্ষেপে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায়, আমূল পরিবর্তনবাদ) পরিভাষাটি দ্বারা সেসব রাজনৈতিক মূলনীতিকে নির্দেশ করা হয় যেগুলো বৈপ্লবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজ কাঠামো পরিবর্তন এবং মৌলিক পন্থায় মূল্যবোধ কাঠামোকে বদলানোর দিকে নজর দেয়।
আমূল পরিবর্তনবাদ কথাটির মূল ইংরেজি শব্দ র্যাডিকেল (ইংরেজি radical) উৎপন্ন হয়েছে লাতিন শব্দ র্যাডিক্স ( radix বা মূল) থেকে। শব্দটির বাংলায় অর্থ হলো আমূল বা মূলগত। তবে গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে বোঝার জন্য ১৮শ শতক থেকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে র্যাডিকেল শব্দটি ব্যবহৃত হওয়ায় শব্দটির সংজ্ঞার্থ বদলে গেছে এবং অদ্যাবধি বৈপ্লবিক সমাজ পরিবর্তনের সমার্থক “শিকড়ে/আমূল পরিবর্তন” সংজ্ঞার্থটি বজায় রেখেছে।
রাজনৈতিক বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত শব্দটি আমূল পরিবর্তন নির্দেশ করে। রাজনৈতিক বিধিব্যবস্থার মূলে যিনি রূপান্তর ঘটাতে চান তিনি হলেন আমূল পরিবর্তনবাদী। তিনি চান সর্ববিধ সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার গভীরে অর্থাৎ মূলে গিয়ে তার মূলােচ্ছেদ ঘটাতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে কোনও অপরাধপ্রবণতা কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা অথবা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারা সাধান করা যায়। দ্বিতীয় পন্থাটিই হলো আমূল পরিবর্তনবাদী।
ইংরেজি ‘র্যাডিক্যাল’ শব্দটির দ্বারা অতি বাম ও উগ্র চিন্তাভাবনাও বােঝায়। সে ক্ষেত্রে ওই মনােভাবাপন্ন যাঁরা তাঁরা সাধারণত স্থিতাবস্থার বিরােধী। কারণ স্থিতাবস্থায় পরস্পর বিরােধীদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। সেদিক থেকে দক্ষিণপন্থীদের মধ্যেও ‘র্যাডিক্যাল’ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।
তথ্যসূত্র:
১. গঙ্গোপাধ্যায়, সৌরেন্দ্রমোহন. রাজনীতির অভিধান, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি. কলকাতা, তৃতীয় মুদ্রণ, জুলাই ২০১৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।