সব ধরনের প্রকৃতিজাত বা প্রস্তুতকৃত খাদ্যই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কম-বেশি সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। নানান কারণে খাদ্য নষ্ট হয়ে থাকে। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া খাদ্যের মধ্যে এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান তৈরি করে। একে টক্সিন (Toxin) বলে। টক্সিন খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। খাদ্যের মাধ্যমে টক্সিন মানুষের দেহে প্রবেশ করলে খাদ্য বিষক্রিয়া বা Food poisoning হয়ে খাদ্য গ্রহণকারীর অসুস্থতাসহ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিভিন্ন কারণে খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। যেমন
• কঁচা খাদ্যদ্রব্য বা প্রস্তুতকৃত খাবার দীর্ঘক্ষণ বাইরে ফেলে রাখলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে।
• যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি এমন খাবার আহার করলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
• রোগজীবাণু সংক্রমিত বা রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত মাছ, মাংস আহার করলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
• অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশন করলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে।
খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ
খাদ্যে বিষক্রিয়া স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকীস্বরূপ। ব্যাকটেরিয়াজনিত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সৃষ্ট জৈববিষ (Toxin)। পাকস্থলীতে পৌছে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ফলে, বমি বমি ভাব, বমি, তলপেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা, দুর্বলতা, মাথা ঘােরা ইত্যাদি অবস্থার সৃষ্টি হয়ে জটিল শারীরিক অবস্থা হতে পারে। খাদ্য গ্রহণের ১২ হতে ২৪ ঘন্টা পরে এ ধরনের জটিল পরিস্থিতি দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
খাদ্য বিষক্রিয়ার প্রতিবিধান
খাদ্য বিষক্রিয়া রোধ করতে হলে কয়েকটি সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। জীবনযাপনে সুঅভ্যাস চর্চা করলে খাদ্য বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু নয়। যেমন
১। খাদ্য প্রস্তুতের আগে এবং প্রস্তুতকালীন সময়ে ব্যবহৃত উপকরণ ও প্রস্তুতকারীর হাত যথাযথভাবে পরিষ্কার থাকতে হবে।
২। সব ধরনের শাক-সবজি, ফল পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিয়ে কাটতে হবে।
৩। জীবাণু দিয়ে সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য রান্নার আগে ও পরে খাদ্যকে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪। রান্নার কাজে দূষণমুক্ত পানি ব্যবহার করতে হবে।
৫। রন্ধনকৃত খাবারের সংস্পর্শে যাতে কাঁচা শাক-সবজি ও মাছ, মাংস অপরিষ্কার চামচ, হাত, পাত্র ইত্যাদি না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
৬। খোলা রাস্তায় অপরিষ্কার পানি দিয়ে প্রস্তুত খাবার না খাওয়াই উত্তম।
খাদ্য বিষক্রিয়ায় করণীয়
কোনো কারণে খাদ্য বিষক্রিয়া হয়ে গেলে তা মোটেই অবহেলা করা উচিত নয়। বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট কোনো কোনো অবস্থা ঘরে বসেই প্রতিকার করা সম্ভব। বমি বমি ভাব বা বমি হলে, স্যালাইন খাওয়া উচিত। সাথে বমি নিরোধক ওষুধ গ্রহণ করা যায়। এ অবস্থায় বিশ্রামে থাকা ভালো। খাদ্য বিষক্রিয়ার মারাত্মক অবস্থায় দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
যখন কোনো খাদ্য ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়ে এক ধরনের বিষাক্ত উপাদান টক্সিন তৈরি করে, তখন ঐ খাদ্য গ্রহণ করলে আহারকারীর খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়। খাদ্য যথাযথবাবে সংরক্ষণের অভাবে, অপরিষ্কার উপকরণ ও হাত ব্যবহার করে প্রস্তুত করলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, পানিশূন্যতাসহ অন্যান্য মারাত্মক অবস্থা তৈরি হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরী। কিছু কিছু সুঅভ্যাস চর্চা করলে খাদ্যে বিষক্রিয়া প্রতিহত করা কঠিন কিছু নয়।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।