ভুট্টার আটটি ব্যবহার ও খাদ্যগুণের বিস্তারিত বিবরণ

ভুট্টা (Maize) একপ্রকার ঔষধি খাদ্যশস্য। এতে নানা প্রকার খাদ্যগুণ আছে। যা শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। আমাদের খাদ্য তালিকায় ভুট্টা অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান।

রাসায়নিক খাদ্যগুণ:

১. শ্বেতসার বা শর্করা সাড়ে ৭১ ভাগ, তৈলাংশ ৫ ভাগ, জল/ পানি ২২ ভাগ।

২. মেকারিতাগুণ প্রোটিন শতকরা সাড়ে ৯ ভাগ, ভস্ম এক চতুর্থাংশ

ক. ভুট্টার শস্যে জল, ছাই, আশ চর্বি প্রভৃতি তেজস্কর পদার্থ আছে।

খ. ভুট্টা দানার আবরণে আছে পটাশ, সোড়া, লবণ, চুন, অক্সাইড অব আয়রণ, ম্যাগনিসিয়া, সালফিউরিক অ্যাসিড়, ফস্ফরাসিক অ্যাসিড, ও বালুকা আছে।

গ. ভুট্টার পাতা ও ডাটায় আছে পটাস, সোড়া, লবণ, চুন, অক্সাইড অব আয়রণ, ম্যাগনিসিয়া, সালফিউরিক অ্যাসিড়, কার্বলিক অ্যাসিড, ও বালুকা আছে।

ফলতঃ গমে যে সকল পুষ্টিকর পদার্থ আছে, তাহার অধিকাংশই ভূট্টায় দেখা যায়। বিশেষতঃ মনুষ্য ও পশুগণের জীবন ধারণে যে সকল দ্রব্যের আবশ্যক ভুট্টায় প্রায় সে সকলই আছে। আমেরিকায় ইহা গমের ন্যায় প্রযোজনীয় খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সমগ্র পৃথিবীতে ধান ও গম এই দুই শস্যের পরই ভুট্টার চাষ হয়ে থাকে।

ভুট্টার ব্যবহার:

১. কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে: কচি কাচা ভুট্টা অনেকে আগুনের তাপে ঝলসিয়ে খেতে পছন্দ করে। এটা ভেজে খই করে অনেকে খেয়ে থাকে। এছাড়া যাঁতায় বা মেশিনে ভেঙ্গে ময়দা করে খাবার বানানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। ইহা পুষ্টিকর খাদ্য। ভুট্টার আটা বা ময়দার তৈরি খাবার শরীরে বল বৃদ্ধি করে। মানুষ কাজ করার শক্তি পায়। শীতপ্রধান অনেক দেশে সহজে কর্মশক্তি পাবার জন্য পোড়া ভুট্টা খেয়ে থাকে।

২. গাভীর দুধ বৃদ্ধি করে: গরু-মহিষাদির প্রিয় খাদ্য, দুগ্ধবতী গাভীর দুধের পরিমান বৃদ্ধি করতে ফলসহ কাঁচা গাছ খেতে দিতে হয়।

৩. পিত্তের প্রকোপ কমায়: এই সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে ভুট্টার মক্কা অথাৎ ভুট্টার কার্যকরী। আজকাল বাঙালিরাও আগুনে সেঁকা ভুট্টার সুস্বাদের সঙ্গে পরিচিত। এখন অনেকে টিফিন হিসেবে সেঁকা কচি ভুট্টা খেতে সকলেই ভালবাসেন। একটা খেলেই বেশ পেট ভরে যায় এবং খাদ্য হিসেবেও তেলে ঘিয়ে জবজবে করে ভাজা অন্য খাবারের চেয়ে পুষ্টিকর।

আরো পড়ুন:  করঞ্জা ফেবাসি পরিবারের পঙ্গামিয়া গণের ঘন ডালপালা বিশিষ্ট চিরসবুজ বৃক্ষ

৪. পপকর্ন তৈরি: ক্ষেত থেকে পেড়ে আনা ভুট্টায় নুন, গোলমরিচ ও পাতিলেবুর রস মাখিয়ে খেলে যেন এই কৃত্রিম শহরের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক থেকে মনে মনে খানিকটা মাটির কাছাকাছি চলে যাওয়া যায়। ভুট্টার দানা শুকনো খোলায় ভাজলে যে খই হয় সেইটেই পপকর্ন নামে পরিচিত।

৫. কফ রোধক: ভুট্টা মধুর, কটু, কষায় ও রুক্ষ। ঠান্ডার কারণে সর্দি, কফ শুরু হলে ভাজা ভুট্টা বেশ উপকারি। এছাড়া পিত্তের প্রকোপও কমিয়ে দেয়।

৬. রুচিকারক: ভুট্টা খাওয়ার কারণে মুখে রুচি বৃদ্ধি করে। পাতলা মল রোধ করে এবং পেট অত্যন্ত শীতল রাখে ।

৭. বমি বন্ধ করে: মক্কা বা ভুট্টার আটার টিকড় বা লেচি পোড়ানো, রুক্ষ, দুর্জর বা সহজে হজম হয় না এবং অত্যন্ত বায়ুকারক। ভুট্টার দানা বের করে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে অল্প ছাই মধুর সঙ্গে মিশিয়ে চাটলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।

৮. পুষ্টিকারক খাবার: ভুট্টা পোড়া, ভুট্টার খই (পপকর্ন) বা ভুট্টার রুটি ছাড়াও আজকাল নানা রকমভাবে সুপ, তরকারি, ভাজা ইত্যাদি তৈরি করে ও ভূট্টা খাওয়া হয়। ভুট্টা খাওয়ার ঝোঁক ও ভুট্টা খাওয়ার প্রবণতা দুই-ই আজকাল বেড়ে গেছে।

এছাড়াও ভুট্টা দিয়ে চিনি তৈরি হয়। আমেরিকায় ভুট্টা ও ভুট্টা গাছ হইতে নানাবিধ শিল্প কার্যে ব্যবহার হয় যথাঃ ভুট্টা গাছের রসে চিনি প্রস্তুত হচ্ছে, অবশিষ্ট গুড় হইতে সুরা এবং পরিত্যক্ত ছিচড়া (আইস) হইতে কাগজ প্রস্তুত হয়। এক টন আখের রস হতে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন হবে, ভুট্টার গাছের রস হতেও সেই পরিমাণ চিনি হয়; অধিকন্তু গাছের আঁইস হতে সোডা সংযোগে উৎকৃষ্ট কাগজের উপযোগী গুড়া তৈরি হবে।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. ডা: শ্রীযামিণী রঞ্জন মজুমদার: খাদ্যশস্য, মি: বি ছত্তার, কলকাতা, দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩৫১, পৃষ্ঠা, ৫৬-৬০।

আরো পড়ুন:  মুথা ঘাস বাংলাদেশের সর্বত্রে জন্মানো ভেষজ প্রজাতি

২. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,২৭।

Leave a Comment

error: Content is protected !!