লেনিনবাদী মতে যুদ্ধ হচ্ছে অন্যভাবে বলতে গেলে সহিংস উপায়ে রাজনীতির ধারাবাহিকতা। ভি আই লেনিন এবং মাও সেতুং যুদ্ধকে বলেছেন রাজনীতির বর্ধিত রূপ।[১]; লেনিন তাঁর সমাজতন্ত্র ও যুদ্ধ পুস্তিকায় যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি উক্ত পুস্তিকায় কার্ল ভন ক্লজউইৎজের প্রবাদ বাক্যটিকে উল্লেখ করেন। মূলত ক্লজউইৎজের কথাটিই লেনিন এবং মাও সেতুং গ্রহণ করেন। হেগেলবাদী ক্লজউইৎজের যুদ্ধ বিশ্লেষণ মানবেতিহাসের যুদ্ধ সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ। কার্ল ভন ক্লজউইৎজের (ইংরেজি: Carl von Clausewitz) ভাষায় “war is nothing but a continuation of political intercourse with an admixture of other means.”[২]
যুদ্ধ হচ্ছে শ্রেণিগুলোর উদ্ভবের ফল।[৩] সমাজ যতদিন শ্রেণিবিভক্ত থাকবে, যতদিন মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণ থাকবে, ততদিন যুদ্ধ অনিবার্য। যুদ্ধ ছাড়া এই শোষণ ধ্বংস হতে পারে না এবং যুদ্ধ সবসময় ও সর্বত্র শোষকেরাই শুরু করে, শাসক ও উৎপীড়ক শ্রেণিগুলোই শুরু করে।[৪] লেনিন লিখেছেন যে যুদ্ধ সম্পর্কে কমিউনিস্টগণ কখনোই ভাবাবেগপ্রসূত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেনি। যুদ্ধকে কমিউনিস্টগণ মানব সমাজে বিরোধ নিষ্পত্তির পাশবিক পদ্ধতি বলে দ্বিধাহীনভাবে নিন্দা করেন।
শ্রেণি উদ্ভবের পর থেকে যেসব যুদ্ধ হয়েছে তার বেশ কিছু যুদ্ধই শ্রেণিযুদ্ধ। তবে শোষকেরাও পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, যেমন দুজন দাসমালিকের একজনের আছে একশ জন দাস, এবং অন্যজনের আছে দুইশ জন দাস, তাঁরা যদি পরস্পরের বিরুদ্ধে দাসের সমবণ্টনের জন্য যুদ্ধ শুরু করে তবে তা শ্রেণিযুদ্ধ নয়, সেটি দুজন বা দুদল শোষকের যুদ্ধ।
ন্যায় যুদ্ধ প্রসঙ্গে লেনিন
যখন শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যার সমাধান করা যায় না তখন যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠে। বিশ্বযুদ্ধসহ যে কোনো যুদ্ধকে সাম্যবাদীরা গত শতকে গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত করতে চেষ্টা করেছেন এবং সেসব ক্ষেত্রে কিছুটা সফল হয়েছিলেন। যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে এবং গণযুদ্ধে রূপান্তরের লেনিনবাদী ও মাওবাদী লাইন এখন কিছুটা বিকশিত হয়েছে। যুদ্ধ সম্পর্কে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী চিন্তা এবং যুদ্ধ ও রাজনীতির সম্পর্ক বোঝা এখন প্রগতির জন্যও দরকারি।
কোন যুদ্ধের বিরোধিতা করতে হবে এবং কোন যুদ্ধ সমর্থন করতে হবে, এ সম্পর্কেও লেনিনের বক্তব্য ও দিক নির্দেশনা সুস্পষ্ট। লেনিন বলেছেন যে শ্রমিক শ্রেণির পার্টিগুলো “অকুণ্ঠভাবে যুদ্ধের নিন্দা করে” এবং “জনগণের মধ্যেকার যুদ্ধকে চিরকাল নিন্দা করে এসেছে”। কিন্তু লেনিন সব সময় বলে এসেছেন যে অন্যায় যুদ্ধের অবশ্যই বিরোধীতা করতে হবে এবং ন্যায় যুদ্ধকে অবশ্যই সমর্থন করতে হবে। তিনি কখনোই নির্বিচারে সব যুদ্ধের বিরোধীতা করেননি।[৫]
যেহেতু যুদ্ধের প্রশ্নে শ্রমিক আন্দোলনে বহুবিধ বিতর্কগুলো নানা সংশয় তৈরি করেছিল, তাই তা দূর করতে লেনিন এ প্রশ্নে স্পষ্ট দিক নির্দেশ করলেন। যুদ্ধের প্রশ্নে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রীদের উচিত দুটো বিষয়কে খেয়াল রাখা, যুদ্ধের লক্ষ্য কি এবং যুদ্ধটি কোন শ্রেণির স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে লেনিন দেখালেন, এই বিশ্বে দু’ধরণের যুদ্ধ আছে – ন্যায় যুদ্ধ আর অন্যায় যুদ্ধ। প্রতিক্রায়াশীলদের স্বার্থবাহী সব যুদ্ধই অন্যায় যুদ্ধ আর ন্যায় যুদ্ধ তিন রকমের। সাম্রাজ্যবাদের যুগে, লেনিন নিম্নলিখিত ধরণের “ন্যায়” বা প্রগতিশীল বা বিপ্লবী যুদ্ধগুলিকে আলাদা করেছিলেন; — এক. উপনিবেশ ও পরাধীন দেশের জনগণ কর্তৃক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ (The wars of liberation of the oppressed colonial and semi-colonial peoples)। দুই. জালিম শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে শোষিত ও নির্যাতিত শ্রেণীসমূহের গৃহযুদ্ধ (The civil war of the proletariat) এবং তিন. পুঁজিবাদী- সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে বিজয়ী কোন দেশের আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ (The war of a country in which the proletariat has seized power, against its imperialist aggressors)।
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে লেনিন
লেনিন বলেছেন, সমাজতন্ত্রবাদীরা কখনো বিপ্লবী যুদ্ধের বিরোধী হতে পারে না বা কখনো হন না। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের সুবিধাবাদীরা আর রুশ সুবিধাবাদীরা এবং তৎসহ কোনো কোনো দেশের বাম সোশ্যাল ডেমোক্রাটরাও মনে করে জাতীয় যুদ্ধ আর হবে না এবং যেহেতু সাম্রাজ্যবাদী যুগে সব যুদ্ধই সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। এ সম্পর্কে লেনিনের মন্তব্য হচ্ছে, এই অভিমত তত্ত্বগতভাবেই শুধু ভ্রান্ত নয়, বাস্তব রাজনৈতিক অর্থেও মারাত্মক ক্ষতিকর।[৬]
মূল নিবন্ধ: জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে
জাতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে লেনিনের দৃঢ় অভিমত হচ্ছে, “সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় যুদ্ধের সম্ভাবনাটাই কেবল নয়, অধিকন্তু জাতীয় যুদ্ধ অপরিহার্য এবং জাতীয় যুদ্ধ প্রগতিশীল ও বিপ্লবী যুদ্ধ।” লেনিন আরো বলেন, “বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ ও সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদ পরস্পর বিরোধী দুইটি শ্লোগানের মধ্যে কোনো মিল নেই। পুঁজিবাদী বিশ্বে দুইটা শ্রেণি শিবির আর এই দুই শিবিরের দুইটা পলিসি রয়েছে। কাজেই জাতীয় প্রশ্নে দুই রকমের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান।”
”যে-উৎপীড়িত শ্রেণী অস্ত্র ব্যবহার শিখতে, অস্ত্র যোগাড় করতে চেষ্টা করে না, দাসের মতো ব্যবহারই তার প্রাপ্য। বুর্জোয়া শান্তিসর্বস্ববাদী কিংবা সুবিধাবাদী বনে না গেলে আমরা ভুলতে পারি না যে, আমরা শ্রেণীবিভক্ত সমাজের বাসিন্দা। যেখান থেকে বেরনো যায় না, শ্রেণী-সংগ্রাম ছাড়া মুক্তিলাভ ঘটে না। হোক দাসপ্রথা, ভূমিদাসপ্রথা কিংবা বর্তমানের মজুরি-শ্রম ভিত্তিক। আসলে প্রত্যেকটি শ্রেণীবিভক্ত সমাজের উৎপীড়ক শ্রেণী সমস্ত ক্ষেত্রেই সশস্ত্র থাকে। আধুনিক ফৌজই শুধু নয়, এমনকি আধুনিক মিলিশিয়াও হলো__ প্রলেতারিয়েতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বুর্জোয়ার প্রতীক।”[৭]
লেনিন প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ ও জাতীয় প্রশ্নে ভিন্নমুখী সুবিধাবাদী ঝুঁকির বিরোধিতা করেছেন। জাতীয় প্রশ্নে এবং জাতীয় ও ঔপনিবেশিক প্রশ্নে লেনিনের শিক্ষা বলশেভিক পার্টি ও সকল দেশের বিপ্লবীদের জন্য পথ প্রদর্শক নীতি। আজকের সাম্রাজ্যবাদী ও যুগপৎভাবে বিপ্লবী যুগের বাস্তবতায় এই নীতি পরিহার করা যায় না।
গৃহযুদ্ধ প্রসঙ্গে লেনিন
গৃহযুদ্ধ প্রসঙ্গে লেনিন অনেক বক্তব্য পেশ করেছেন। জালিম শোষক শ্রেণীর বিরুদ্ধে শোষিত ও নির্যাতিত শ্রেণীসমূহের গৃহযুদ্ধকে লেনিন ন্যায়যুদ্ধ বলেছেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সাথে গৃহযুদ্ধের সম্পর্ককে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন গভীর মনোযোগের সাথে। তিনি লিখেছেন,
“বিশৃঙ্খলা ছাড়া সত্যিকার যুদ্ধ অসম্ভব। বিশৃঙ্খলা ছাড়া সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অপরিহার্য শর্ত ও অনুষঙ্গ — গৃহযুদ্ধও অসম্ভব বটে। বিশৃঙ্খলার ‘প্রেক্ষিতে’ বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের নিন্দা জ্ঞাপনের একটাই অর্থঃ নীতিহীনতা প্রদর্শন এবং কার্যত বুর্জোয়ার পক্ষসমর্থন।”[৮]
শ্রেণি সৃষ্টি হবার পর থেকেই প্রতিক্রিয়াশীলরা কী করেছে? লেনিন সহজভাবেই ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে জাতিসমূহের জীবনের বড় প্রশ্নগুলির সমাধান হয় শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই,
“জাতিসমূহের জীবনে বড়ো বড়ো প্রশ্নগুলির সমাধান হয় একমাত্র বলের দ্বারাই। সচরাচর সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেণিগুলি নিজেরাই প্রথমে বলপ্রয়োগের, গৃহযুদ্ধের আশ্রয় নেয়; তারাই প্রথম বেয়নেটকে কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করে… … ।”[৯]
এই আলোকে বিচার করলে প্রলেতারিয়েতের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে আমরা কীভাবে ধারণা করতে পারি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই লেনিনকে আরেকবার উদ্ধৃত করতে হয়:
“… … ইতিহাসের মহান বিপ্লবগুলির কোনো একটিও গৃহযুদ্ধ ছাড়া সংঘটিত হয়নি আর কোনো আন্তরিক মার্কসবাদীই গৃহযুদ্ধ ছাড়া পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণকে কল্পনা করেননি”।[১০]
সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ প্রসঙ্গে লেনিন
পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো যখন পরস্পরের উপর যুদ্ধে জড়ায় তখন তা লুণ্ঠন ও ভাগবাটোয়ারা ছাড়া অন্য কিছু থাকে না। তাঁদের যুদ্ধ ব্যক্তিগত মালিকানা রক্ষা এবং লুণ্ঠন বৃদ্ধির জন্যেই। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সালে যুদ্ধের বিপদ আরো বাড়লো। আন্তর্জাতিকের পরবর্তী কংগ্রেসে তাই সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, প্রত্যেক দেশের সমাজতন্ত্রীরা পার্লামেন্টে যুদ্ধের বিরোধীতা করবে। সেখানে রোজা ও লেনিনের প্রস্তাবগুলো আবারো গৃহীত হলো। কিন্তু আন্তর্জাতিকের সুবিধাবাদীদের এইসব সিদ্ধান্তগুলো অনুশীলনের কোনো সদিচ্ছা ছিল না। সে সময়ের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রভাবশালী নেতা কার্ল কাউটস্কি, যিনি ছিলেন জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা, তিনি কংগ্রেসে ভোট দান থেকে বিরত ছিলেন। ১৯১৪ সালের ৪ আগস্ট জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের কংগ্রেসে গৃহীত সিদ্ধান্তকে অস্বীকার করে জার্মানের পার্লামেন্টে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের পক্ষে ভোট দেয়। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ এই আন্তর্জাতিক স্লোগানকে ভুলে তারা ‘পিতৃভূমি রক্ষার’ সংগ্রামের ধূয়ো তুললেন। অর্থাৎ পিতৃভূমি রক্ষার জন্য লড়াইয়ের নামে তারা একদেশের শ্রমিকের বিরুদ্ধে অন্য দেশের শ্রমিকের যুদ্ধের পক্ষেই কার্যত ওকালতি করলেন। সে সময় থেকেই কার্যত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের পতনের সূচনা হয়। ফ্রান্স, ব্রিটেন, বেলজিয়ামের মতো দেশগুলোর সমাজতন্ত্রী পার্টিগুলোও অনতিবিলম্বে পিতৃভূমি রক্ষার সংগ্রামের ধূয়ো তুলে জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসির সুবিধাবাদী নেতৃত্বের পথই অনুসরণ করলো।[১১]
বলশেভিকরাই একমাত্র পার্টি, যারা আন্তর্জাতিকের কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে দৃঢ় থাকলো। আন্তর্জাতিকের প্রধান নেতৃত্বের এই সুবিধাবাদী অবস্থানের ফলে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকদের যুদ্ধের প্রশ্নে প্রকৃত মার্ক্সবাদী অবস্থানটি সামনে তুলে ধরার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকলো না। সুবিধাবাদীরা যখন পিতৃভূমি রক্ষার ডাক দিলেন, তখন রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টি (বলশেভিক) প্রতিক্রিয়াশীলদের সৃষ্ট যুদ্ধকে বিপ্লবী গৃহযুদ্ধে রূপান্তরিত করার ডাক দিলো এবং তৃতীয় আন্তর্জাতিক গড়ার আহ্বান করলো। এইভাবে সুবিধাবাদী এবং প্রকৃত মার্ক্সবাদীদের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রেখা তৈরি হয়ে গেল। লেনিন জানালেন, সমাজতন্ত্রীদের উচিত শান্তি আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো, পাশাপাশি এটাও তাদের সোচ্চারভাবে বলা উচিত যে, বিপ্লবই শেষ পর্যন্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।[১২] লেনিন লিখেছেন,
“যুদ্ধ ছাড়া পুঁজিবাদী দেশের সত্যিকার শক্তিপরীক্ষার কোনো উপায় নেই, থাকতেও পারে না। যুদ্ধ ব্যক্তিগত মালিকানার মূল ভিত্তিগুলির পরিপন্থী নয়, বরং তাদেরই প্রত্যক্ষ ও অপরিহার্য পরিণতি।”[১৩]
লেনিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন তীব্রভাবে। ঠিক একই সময়ে বিপ্লব পরিহার করে সামাজিক শান্তিবাদের বিরোধিতাও তিনি করেছেন দৃঢ়ভাবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বাধবার কিছু পরেই লেনিন সামাজিক শান্তিবাদ (Social Pacifism) খন্ডন করে বলেছেন,
“শ্রমিক শ্রেণীকে প্রতারণা করার ধরন হচ্ছে শান্তিবাদ ও শান্তির বিমূর্ত প্রচারণা। পুঁজিবাদের অধীনে বিশেষ করে পুঁজিবাদের সাম্রাজ্যবাদী স্তরে যুদ্ধ অপরিহার্য। পক্ষান্তরে বিপ্লবীযুদ্ধের ইতিবাচক তাৎপর্য সোশ্যাল ডেমোক্রাট অস্বীকার করতে পারবেন না। শান্তির প্রচারের সাথে যদি বিপ্লবী গণসংগ্রামের আহ্বান যুক্ত না থাকে তাহলে সর্বহারা শ্রেণীকে বিভ্রান্ত এবং বুর্জোয়া মানবতাবাদের প্রতি তাদের উৎসাহিত করা হবে। এতে যুদ্ধরত দেশগুলির গোপন কূটনৈতিক শিকার হবে সর্বহারা শ্রেণী। বিশেষভাবে একের পর এক বিপ্লব ছাড়া তথাকথিত গণতান্ত্রিক শান্তি সম্ভব- এই ধারণাটা মারাত্মক ভুল।”[১৪]
শান্তির প্রসঙ্গে লেনিন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কতিপয় বুর্জোয়া প্রতিনিধি বার বার শান্তির জন্য প্রস্তাব তৈরি করতে থাকে। আর সুবিধাবাদীরাও তথাকথিত গণতান্ত্রিক শান্তির শ্লোগানটা এগিয়ে নিতে থাকে। এই সম্পর্কে লেনিন উল্লেখ করেন যে, কোটিপতিরা শান্তির প্রতি বড়ই দরদী, কারণ তারা বিপ্লবকে ভয় পায়। একই সাথে তারা এ কথাটাও জানে যে, বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত তথাকথিত গণতান্ত্রিক শান্তি নিছক বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু সুবিধাবাদীরা, কাউটস্কির সমর্থকরা আর সোশ্যালিস্টরা শোকাভিভূতভাবে শান্তির জন্য আহ্বান জানায়। সুশিক্ষাবিহীন ইউটোপিয়রা এই ধরণের প্রচারণাই চালাচ্ছে। শান্তিবাদ প্রচার করার জন্য যারা সমাজতন্ত্রের বাছাই করা শব্দাবলী ব্যবহার করে লেনিন তাদের সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে সামাজিক শান্তিবাদী (Social Pacifist) শব্দটি ব্যবহার করেছেন।[১৫]
জনগণের কাছে শান্তির শ্লোগান হবে সুস্পষ্ট। সমাজতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে যে মিলমিশ হয় না প্রচার এবং আন্দোলনের মাধ্যমে এই পার্থক্যটা তুলে ধরতে হবে। দুইটা পরস্পর বিরোধী শ্রেণি এবং পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক লাইনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা চলবে না। শান্তির প্রশ্নটাকে মার্কসবাদীরা কিভাবে দেখবেন এই সম্পর্কে লেনিন বলেছেন,
“হয় একটা নির্দিষ্ট অবস্থার জন্য শান্তির শ্লোগান, আর না হয় কোন নির্দিষ্ট অবস্থা ছাড়াই সাধারণ শান্তির জন্য শ্লোগান। সাধারণ শান্তি কোনো নির্দিষ্ট শান্তি নয়, মনের আকাঙ্খা পূরণের জন্য সাধারণ শান্তি। এই রকমের শান্তির জন্য যে শ্লোগান তোলা হয় তা সমাজতান্ত্রিক অর্থবোধক তো নয়ই বরং ভাবলেশহীন ও অর্থহীন শ্লোগান। সাধারণ শান্তির স্বপক্ষে যারা আছেন, তাদের মধ্যে আছেন কিচেনার, জোফ্রি, হিল্ডারবার্গ ও রক্ত পিপাসু নিকোলাস। এরা সবাই যুদ্ধ শেষ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে গোলমালটা হচ্ছে এই যে, তাদের প্রত্যেকেই সাম্রাজ্যবাদী নির্যাতনকারী শান্তির অবস্থাটাকেই তাদের জাতির কল্যাণে এগিয়ে নেন।”[১৬]
যুদ্ধ ও শান্তির প্রশ্নে লেনিনের দৃষ্টিভঙ্গি ও কথাবার্তা অত্যন্ত সুস্পষ্ট, বাস্তব যুক্তিসঙ্গত ও বলিষ্ঠ। সাম্রাজ্যবাদী শান্তি হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পলিসির ধারাবাহিকতা। ১৯১৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এবং ১৯১৭ সালের প্রারম্ভে বিশ্ব রাজনীতিতে যে লক্ষণ দেখা দিয়েছিল তা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদী শান্তিতে ফিরিয়ে আনা। যুদ্ধরত দেশগুলি অচলাবস্থায় পতিত হয়, তাদের রিজার্ভ নিঃশেষ হয়ে যায়। লগ্নি পুঁজির নিস্পেষণ কঠিন হয়ে উঠে। জনগণের অসন্তোষ ও ক্রোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বিপ্লবী মনোভাব ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই জন্য সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়া শ্রেণি একটা শান্তি চুক্তির পরিকল্পনা করতে থাকে যাতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে লুটের মাল ভাগবন্টন করতে পারে আর লক্ষ লক্ষ সর্বহারাকে নিরস্ত্রীকরণ করতে পারে। এভাবে তারা উপনিবেশগুলিকে লুণ্ঠন করার ও দূর্বল জাতিসমূহকে গলাটিপে মারার বিষয়গুলিকে ঢেকে রাখবার পরিকল্পনা করে। সাম্রাজ্যবাদী পলিসিতে এই ধরনের পরিবর্তনের জন্য সামাজিক শান্তিবাদ দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
লেনিন স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেন যে, সামাজিক উগ্রজাতীয়তাবাদী (সোশ্যাল শোভিনিষ্ট) ও সামাজিক শান্তিবাদীরা উভয়েই সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাস। এদের কেউ কেউ সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধকে ‘পিতৃভূমি রক্ষার যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করে। আবার কেউ কেউ সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ রক্ষার জন্য চমৎকার শব্দাবলী ব্যবহার করে- ‘গণতান্ত্রিক শান্তি’র বুলি আওড়ায়। লেনিন বলেছেন, সামাজিক শান্তিবাদীরা যুদ্ধ ও শান্তির মৌলিক মার্কসবাদী থিসিসটা বুঝতে পারে না।
লেনিন আরো বলেছেন, যুদ্ধ বাধবার বহু আগে থেকেই যুদ্ধবাজ শক্তিগুলির শাসক শ্রেণী যে রাজনীতি অনুসরণ করে চলে, যুদ্ধ হচ্ছে সেই রাজনীতির বলপ্রয়োগ পন্থায় পরিচালিত রাজনীতির ধারাবাহিকতা। আর ঠিক সেই একই রকম রাজনীতির ধারাবাহিকতা হচ্ছে শান্তি। যুদ্ধের আগে যে রাজনীতি বিকাশ ঘটে তাতে যুদ্ধ সেই দিকটাকে পরিবর্তন করে না, বরং ঐ রাজনৈতিক বিকাশকে কেবলমাত্র ত্বরান্বিত করে। কাজেই সাম্রাজ্যবাদীরা যে শান্তি আনয়ন করতে পারে তা শুধু সাম্রাজ্যবাদী শান্তিই হতে পারে। এরূপ শান্তির মধ্যে তারা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের প্রস্তুতির কাজকে চালু রাখে। লেনিন লিখেছেন, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ হচ্ছে শিল্পের শাখা, বনায়নের মতো যেখানে গাছগুলি নির্দিষ্ট সাইজপ্রাপ্ত হতে কয়েক দশক সময় লাগে।
যুদ্ধের বিলুপ্তি প্রসঙ্গে লেনিন
লেনিন জানালেন – প্রথমত, সমাজতন্ত্রীরা শান্তিবাদী নয় যে, তারা সব ধরণের যুদ্ধের বিরোধিতা করবে। সমাজতন্ত্রীদের লক্ষ্য হলো সমাজতন্ত্র তথা সাম্যবাদী শোষণ বিভেদহীন দুনিয়া প্রতিষ্ঠা করা। যে দুনিয়ায় যুদ্ধের কোনো বস্তুগত কারণই আর থাকবে না, ফলে জন্ম নেবে একটা যুদ্ধহীন দুনিয়া, কিন্তু এই কমিউনিজম বা সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের সময় যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে সর্বদা। যুদ্ধ বিলুপ্ত করা যেতে পারে কেবল গোটা দুনিয়ায় সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা হলেই। এজন্য মানবের ভেতরের শ্রেণিতে শ্রেণিতে বিলুপ্তি এবং জাতিতে জাতিতে শোষণ বিলুপ্তি ঘটাতে হবে। লেনিন লিখেছেন,
“আমরা বলিঃ আমাদের লক্ষ্য হলো সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অর্জন করা, যা, শ্রেণিতে শ্রেণিতে মানবজাতির বিভক্তিকে বিলোপ করে, মানুষ কর্তৃক মানুষের উপর আর এক জাতি কর্তৃক অন্য জাতির উপর সমস্ত শোষণের অবসান ঘটিয়ে, অপরিহার্য রুপে যুদ্ধের খোদ সম্ভাবনাকেই বিলুপ্ত করে।”[১৭]
মানবজাতির চিরস্থায়ী শান্তির যুগ আসবে, সকল যুদ্ধের অবসান ঘটার যুগও আসবে। তবে সেই মহান যুগ আসতে পারে কেবল মানবজাতি যখন পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাকে নির্মূল করতে পারবে তার পরেই, তার আগে কখনোই নয়। কিন্তু পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থাকে শান্তিপূর্ণভাবে নির্মূল করা যাবে না। কেননা লেনিন বলেছেন, প্রথমত, “বিশ্ব আজ পর্যন্ত কখনোই এমন কোনো শাসকশ্রেণি প্রত্যক্ষ করেনি যারা সংগ্রাম ছাড়া ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে।”[১৮]
আরও উদ্ধৃতি বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন বোধ করছি না। সবশেষে মাও সেতুং-এর একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টির ইতি টানতে চাই। মাও সেতুং বলেছেন,
“… … সাম্রাজ্যবাদের যুগে শ্রেণিসংগ্রামের অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে: শুধুমাত্র বন্দুকের শক্তিতেই শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমজীবী জনগণ সশস্ত্র বুর্জোয়া শ্রেণি ও জমিদারদের পরাজিত করতে পারে; এই অর্থে আমরা বলতে পারি যে, শুধুমাত্র বন্দুক দিয়েই সমগ্র দুনিয়ার রূপান্তর ঘটানো সম্ভব।”[১৯]
তথ্যসূত্র:
১. ‘যুদ্ধ ও বিপ্লব’ প্রবন্ধটি ভি আই লেনিন শুরু করেছেন এই বলে যে, ‘যুদ্ধ হলো অন্য উপায়ে কর্মনীতির অনুবৃত্তি। প্রত্যেক যুদ্ধই সেই যুদ্ধের সৃষ্টিকারী রাজনীতিক ব্যবস্থা থেকে অবিচ্ছেদ্য’। প্রবন্ধটি ২৩ এপ্রিল, ১৯২৯ তারিখে প্রাভদায় প্রকাশিত। প্রবন্ধটি পাবেন প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, তারিখহীন থেকে প্রকাশিত সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদীদের প্রসঙ্গে গ্রন্থের ১৪০-১৫২ পৃষ্ঠায়। মাও সেতুং বলেছেন ‘রাজনীতি হচ্ছে রক্তপাতহীন যুদ্ধ আর যুদ্ধ হচ্ছে রক্তপাতময় রাজনীতি’।
২. কার্ল ভন ক্লজউইৎজ, On War, Chapter One: What is war?, Point 24.
৩. মাও সেতুং, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ প্রসঙ্গে, নির্বাচিত রচনাবলী, খণ্ড ২
৪. ভি আই লেনিন, বিপ্লবী সেনাবাহিনী ও বিপ্লবী সরকার, সংগৃহীত রচনাবলী, এফএলপিএইচ, মস্কো ১৯৬২, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৫৭৫, এখানে নেয়া হয়েছে চীনের রেড ফ্লাগ পত্রিকার তাত্ত্বিক নিবন্ধ, সমকালীন বিশ্বে লেনিনবাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা প্রসঙ্গে, কমরেড তোগলিয়াত্তি ও আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রসঙ্গে আরো মন্তব্য, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯১, পৃষ্ঠা ৪৯ থেকে
৫. চীনের রেড ফ্লাগ পত্রিকার তাত্ত্বিক নিবন্ধ, সমকালীন বিশ্বে লেনিনবাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা প্রসঙ্গে, কমরেড তোগলিয়াত্তি ও আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রসঙ্গে আরো মন্তব্য, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯১, পৃষ্ঠা ৬৭
৬. মফিজ আলী, সাপ্তাহিক সেবা ১৭ এপ্রিল ২০০৫ রোববার, ২৫ বর্ষ, ১ম সংখ্যা
৭. ভ. ই. লেনিন : সেপ্টেম্বর, ১৯১৬
৮. ভি আই লেনিন, আশ্চর্য ভবিষ্যদ্বাণী, ২৯ জুন ১৯১৮, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ৩৩৯;
৯. ভি আই লেনিন, গণতান্ত্রিক বিপ্লবে সোশ্যাল-ডেমোক্রাসির দুই রণকৌশল, জুলাই ১৯০৫, অধ্যায় উপসংহার অংশ ৩ অনুচ্ছেদ ৬, প্রগতি প্রকাশন মস্কো, ১৯৮৪, পৃষ্ঠা ১২৫
১০. লেনিনবাদ দীর্ঘজীবী হোক, চিনা পার্টির পত্রিকা রেড ফ্লাগে প্রকাশিত, ১৬ এপ্রিল, ১৯৬০; অনুবাদ, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স; ঢাকা; এপ্রিল, ১৯৯২; পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮।
১১. সব্যসাচী গোস্বামী, জুন 24, 2017, মঙ্গলধ্বনি, সর্বহারাশ্রেণীর আন্দোলনে তীব্র মতাদর্শিক সংগ্রামের ফলিত রূপই বলশেভিক বিপ্লব, https://mongoldhoni.wordpress.com/2017/06/24/an-ideological-analysis-on-bolshevik-revolution/
১২. সব্যসাচী গোস্বামী, পূর্বোক্ত
১৩. লেনিন, ভি আই, ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্র শ্লোগান প্রসঙ্গে, ২৩ আগস্ট, ১৯১৫, অনুবাদ দ্বিজেন শর্মা, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো ১৯৮৬, পৃষ্ঠা ৪৪
১৪. ভি আই লেনিন, নির্বাচিত রচনাবলী, লন্ডন, ৫ম খন্ড, পৃঃ ১৩৫।
১৫. মফিজ আলী, পূর্বোক্ত
১৬. ভি আই লেনিন
১৭. লেনিন, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ৩৯৮-৩৯৯ Our aim is to achieve a socialist system of society, which, by eliminating the division of mankind into classes, by eliminating all exploitation of man by man and nation by nation, will inevitably eliminate the very possibility of war. Collected Works, Vol. 24, pp. 398-421
১৮. ভি আই লেনিন, প্রেসনিয়া জেলার শ্রমিক সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতা, সংকলিত রচনাবলী, চতুর্থ রুশ সংস্করণ, ২৮ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৮, এখানে উদ্ধৃতিটি নেয়া হয়েছে লেনিনবাদ দীর্ঘজীবী হোক, চিনা পার্টির পত্রিকা রেড ফ্লাগ-এ প্রকাশিত, ১৬ এপ্রিল, ১৯৬০; অনুবাদ, ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স; ঢাকা; এপ্রিল, ১৯৯২; পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮ থেকে।
১৯. মাও সেতুং, যুদ্ধ ও রণনীতির সমস্যা, ৬ নভেম্বর ১৯৩৮
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।