সভাপতি মাও সে-তুঙের উদ্ধৃতি
১৩. অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যকার সম্পর্ক
*** আমাদের সৈন্যবাহিনীতে সর্বদাই দুটি নীতি; প্রথম, শত্রুদের প্রতি আমাদের অবশ্যই নির্মম হতে হবে, তাদের দাবিয়ে রাখতে হবে এবং ধ্বংস করতে হবে; দ্বিতীয়, নিজেদের প্রতি, জনগণের প্রতি, কমরেডদের প্রতি, উপরস্থ ও অধীনস্থদের প্রতি স্নেহময় হতে হবে এবং তাঁদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। “রিয়ার আর্মি ডিট্যাচমেন্ট থেকে আদর্শ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সম্মানে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক আয়োজিত সম্বর্ধনায় প্রদত্ত ভাষণ” (১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪)
*** আমরা সবাই সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে এসেছি এবং একই বিপ্লবী উদ্দেশ্যের জন্য একত্রিত হয়েছি।… আমাদের কেডারদেরকে প্রত্যেকটি সৈনিকের প্রতি যত্নবান হতে হবে, বিপ্লবী বাহিনীর সমস্ত লোককেই পরস্পরের যত্ন নিতে হবে, পরস্পরকে ভালবাসতে হবে ও সাহায্য করতে হবে। “জনগণের সেবা” (৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৪)
*** প্রতি ইউনিটে কেডারদের সমর্থন করার জন্য ও সৈনিকদের ভালবাসার জন্য একটা আন্দোলন চালাতে হবে, সৈনিকদের ভালবাসার জন্য কেডারদের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে এবং একই সময়ে কেডারদেরকে সমর্থন করার জন্য সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে, পরস্পরের ভুল-ত্রুটি খোলাখুলিভাবে বলা উচিত এবং তাড়াতাড়ি সেসব ভুল-ত্রুটি সংশোধন করা উচিত, এভাবে তারা একটা চমৎকার অভ্যন্তরীণ ঐক্য অর্জন করতে পারবেন। “১৯৪৫ সালের কর্তব্য” (১৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৪)
*** অনেকে মনে করেন যে, অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যকার এবং সৈন্যবাহিনী ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক অসন্তোষজনক হবার কারণ হচ্ছে পদ্ধতি ভুল; আমি সব সময়েই তাদের বলি যে, এটা হচ্ছে মৌলিক মনোভাবের (অথবা মৌলিক উদ্দেশ্যের) প্রশ্ন, এই মনোভাব হচ্ছে সৈনিক ও জনগণকে সম্মান করা। এই মনোভাব থেকে বিভিন্ন নীতি, পদ্ধতি ও রূপের উদ্ভব ঘটে। যদি এই নীতি মনোভাব থেকে দূরে সরে যাই, তাহলে নীতি, পদ্ধতি ও রূপ নিশ্চয়ই ভুল হবে, অফিসার ও সৈনিকদের মধ্যকার এবং সৈন্যবাহিনী ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক অবশ্যই অসন্তোষজনক হবে। সৈন্যবাহিনীর রাজনৈতিক কাজের তিনটা প্রধান নীতি হচ্ছে—প্রথম, অফিসার ও সৈনিকদের ঐক্য; দ্বিতীয়, সৈন্যবাহিনী ও জনগণের ঐক্য; তৃতীয়, শত্রুবাহিনীকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা। এই নীতিগুলোকে কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করার জন্য সৈনিকদের সম্মান করা, জনগণকে সম্মান করার এবং শত্রুবাহিনীর যেসব যুদ্ধবন্দীরা একবার অস্ত্র ত্যাগ করেছে, তাদের মানবিক মর্যাদাকে সম্মান করার মৌলিক মনোভাব থেকেই আমাদের শুরু করতে হবে। যারা এটাকে মৌলিক মনোভাবের প্রশ্ন বলে মনে করেন না বরং টেকনিক্যাল প্রশ্ন বলে মনে করেন, তারা বাস্তবিকই ভুল ভেবেছেন, তাঁদের মতামতকে সংশোধন করা দরকার। “দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ সম্পর্কে” (মে, ১৯৩৮)
*** শ্রমজীবী জনগেণর মধ্যে কাজ করার সময় কমিউনিস্টদের অবশ্যই বুঝিয়ে বলার ও শিক্ষাদানের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে এবং কোনো মতেই হুকুমবাদের মনোভাব ও বাধ্য করার পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেওয়া হবে না। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এই মার্কসবাদী-লেনিনবাদী নীতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করছে। “জনগণের ভেতরকার দ্বন্দ্বের সঠিক মীমাংসার সমস্যা সম্পর্কে” (২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭)
*** আমাদের কমরেডদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, মতাদর্শগত পুনর্গঠন হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী, ধৈর্যশীল ও সূক্ষ্মকাজ, কয়েকটি মাত্র ক্লাস নিয়ে বা কয়েকটি সভা করে, জনগণের মতাদর্শকে যা কয়েক দশক বছর ধরে জীবনধারার ভেতর দিয়ে রূপ লাভ করেছে, তা পরিবর্তিত করার চেষ্টা অবশ্যই করা উচিত নয়। কাউকে বশে আনার জন্য শুধু তাকে বুঝিয়ে বলতে হয়, চাপ দেওয়া চলে না। চাপ দেবার ফল সর্বদাই হচ্ছে বশ না মানা। মানুষকে বশ মানাতে হলে বলপ্রয়োগ করা চলবে না। শত্রুদের প্রতি এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা চলে, কিন্তু কমরেড ও বন্ধুদের প্রতি কোনো মতেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করা চলবে না। “প্রচার কার্য সম্পর্কে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণ” (১২ মার্চ , ১৯৫৭)
*** শত্রু ও আমাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে পার্থক্য করা প্রয়োজন, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব গ্রহণ করে শত্রুর প্রতি যেমন আচরণ করা হয়, কমরেডদের প্রতি তেমন ব্যবহার করা উচিত হবে না। বুকভরা উৎসাহের সংগে জনগণের কার্য সুরক্ষিত করার এবং জনগণের চেতনাকে উন্নত করার মনোভাব নিয়ে কথা বলা দরকার, উপহাস কিংবা আক্রমণের মনোভাব নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। ঐ
মাও সেতুং বা মাও সে তুং বা মাও জেদং (ইংরেজি: Mao Tse-Tung; ২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৩ – ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ খ্রি.) মার্কসবাদী বিপ্লবী তাত্ত্বিক, সাম্যবাদী রাজনৈতিক নেতা, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং চীন ভূখন্ডের প্রায় শতাব্দীকালের সামাজিক রাজনীতিক মুক্তি ও বিপ্লবের নায়ক। জাপানি দখলদার শক্তি এবং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার কুওমিনটাং নেতা চিয়াং কাইশেকের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে জাতীয় স্বাধীনতা এবং সামাজিক বিপ্লবের জন্য চীনের অগণিত এবং অনুন্নত কৃষকদের সংঘবদ্ধ করার কৌশলী হিসেবে মাও সেতুং এক সময় সমগ্র পৃথিবীতে সংগ্রামী মানুষের অনুপ্রেরণাদায়ক উপকথায় পরিণত হয়েছিলেন। তিনি অনেক জটিল কথাকে জনগণের সামনে অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করতেন। জনগণের সেবায় মানবেতিহাসের সমস্ত জ্ঞানকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন।