ইতিহাসের শিক্ষা থেকেই আমরা জানতে পারি যে সমাজে যে শ্রেণি বা গোষ্ঠী উৎপাদনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে, এবং উৎপাদনের প্রধান কাজগুলো করে থাকে, কালে কালে তাদেরই যে উৎপাদন ব্যবস্থার উপর আধিপত্য স্থাপিত হবে সে কথা অবশ্যম্ভাবী। মাতৃপ্রধান সমাজে এমন একটা সময় ছিলো যখন উৎপাদন ব্যবস্থার উপর নারীদেরই প্রাধান্য মেনে নেয়া হতো। তার কারণ কি? তার কারণ তখনকার দিনের আদিম যুগের কৃষি ব্যবস্থায় নারীরা উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করত। তারাই উৎপাদনের প্রধান কাজগুলি করত। আর পুরুষরা বনে-জংগলে শিকার করে বেড়াত। তারপর পিতৃপ্রধান সমাজে একটা সময় এলো যখন উৎপাদনের প্রধান কার্যভার পুরুষদের হাতে চলে গেল। কেন এই পরিবর্তন এলো? কারণ তখন পশুপালনের যুগ। সে সময়কার উৎপাদন ব্যবস্থায় বর্শা, দড়ির ফাঁস, তীর-ধনুক উৎপাদনের প্রধান যন্ত্ররূপে ব্যবহার করা হতো, এবং সেক্ষেত্রে পুরুষরাই মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করতো। … … তারপরে বড় বড় পুঁজিবাদী উৎপাদনের সময় এসেছিল, যেখানে সর্বহারারা উত্পাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করতে শুরু করে, যখন উত্পাদনের সমস্ত প্রধান কার্যগুলি তাদের কাছে প্রেরিত হয়, যখন তাদের ছাড়া উত্পাদন একদিনের জন্য চলতে পারে না (সাধারণ ধর্মঘটের কথাই ধরা যাক), এবং যখন পুঁজিবাদীদের, উত্পাদনের জন্য প্রয়োজন নাই তথাপিও, উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। এইটার তাৎপর্য তাহলে কী? এটির দ্বারা বোঝা যায় যে হয় সামাজিক জীবন সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়বে, অথবা সর্বহারারা, আগে বা পরে, কিন্তু অনিবার্যভাবে, আধুনিক উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ নেবে, তারা নিজেরাই মালিক হবে, তারা সমাজতান্ত্রিক মালিকানায় নেবে।
আধুনিক শিল্প সংকট, যা পুঁজিবাদী সম্পত্তি মালিকানার মৃত্যুর শব্দকে বাজাতে থাকে এবং স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করে: পুঁজিবাদ অথবা সমাজতন্ত্র, এবং সুস্পষ্টভাবে এই উপসংহারে আসে; এটি পুঁজিবাদীদের পরজীবীতাকে তীক্ষ্ণভাবে প্রকাশ করে এবং সমাজতন্ত্রের বিজয়কে অনিবার্যভাবে ঘোষণা করে।
এভাবেই ইতিহাস মার্কসের প্রলেতারিয় সমাজতন্ত্রের অস্তিত্বের বিষয়টি আরও প্রমাণ করে।
প্রলেতারিয় সমাজতন্ত্র প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর আবেগের উপর, বিমূর্ত “ন্যায়বিচার”-এর উপর বা প্রেমের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়; বরং এটি উপরে উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
এই কারণেই প্রলেতারিয় সমাজতন্ত্রকে “বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র” বলা হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রবন্ধটি স্তালিনের লেখা নৈরাজ্যবাদ অথবা সমাজতন্ত্র প্রবন্ধের অংশবিশেষ থেকে নেয়া হয়েছে।
জোসেফ ভিসারিওনোভিচ স্তালিন বা যোসেফ স্তালিন বা জোসেফ স্ট্যালিন (১৮ ডিসেম্বর, ১৮৭৯- ৫ মার্চ ১৯৫৩) সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মানে এবং একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দীর্ঘতম সাফল্যের ইতিহাস রচনা করে গেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপ তথা বিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতা ও ব্যক্তিত্ব। তাঁর প্রকৃত নাম যোসেফ ভিসারিওনোভিচ সোসো, স্তালিন নামটি তিনি ১৯১০ সালে ‘লৌহমানব’ অর্থে ধারণ করেন। তাঁকে মানবেতিহাসের মহত্তম নেতা ও জনগণের শিক্ষক হিসেবে অভিহিত করা হয়।