চিলি (ইংরেজি: Chile) দক্ষিণ আমেরিকার পুঁজিবাদ অভিমুখী শোষণমূলক এবং সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা নিপীড়িত একটি দেশ। গণপ্রজাতন্ত্রী এই রাষ্ট্রটি দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল বরাবর ৪ হাজার মাইলেরও বেশি দীর্ঘ। রাজধানী সান্তিয়াগাে (জনসংখ্যা ৪০ লক্ষ) দেশের প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
চিলি প্রজাতন্ত্রকে অনেক সময় স্পেনীয় বিজেতাদের বিরুদ্ধে জনগণের মুক্তিসংগ্রামের স্মরণিক হিসাবে দক্ষিণ আমেরিকার পাশে আটকানাে একটি তলােয়ারের কিংবা মহাদেশের উষ্ণমণ্ডলের সঙ্গে কুমেরু লগ্ন এর শীতপ্রধান অঞ্চল সংযােগকারী তামার তারের সঙ্গে তুলনা করা হয়। চিলির একটি উপকথা অনুসারে বিশ্বসষ্টির পর যে অবশিষ্ট পাহাড়, দ্বীপ ও হ্রদ ছিল সেগুলি দিয়েই ঈশ্বর চিলি তৈরি করেছেন। এই দেশ শিল্পােন্নয়নের জন্য অপরিহার্য তামা, সােরা, কয়লা, তেল, লােহা, ম্যাঙ্গানিজ এবং লৌহেতর ধাতুর আকরিক ও বিরল মৌলে সমদ্ধ।
চিলি বিপ্লবের সময় (১৯৭০-১৯৭৩) জনগণের ঐক্য সরকার তার কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে দেশকে আমূল সামাজিক-অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা দেয়। দেশের অর্থনীতির প্রাণস্বরূপ তামা-নিষ্কাশন শিল্প এবং অন্যান্য শিল্পশাখা জাতীয়কৃত হয়েছিল; কৃষিসংস্কারের ফলে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটে। চিলিতে পুঁজিবাদের এবং সাম্রাজ্যবাদী পরাধীনতা সমূলে উৎপাটিত হওয়ার ফলে বিপ্লবী প্রক্রিয়ার পরবর্তী সম্প্রসারণের পূর্বশর্ত সৃষ্টি হয়।
অথচ ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর বহিস্থ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়ার সংগঠিত সামরিক-ফ্যাসিবাদী ক্যু-র পর জাতীয়কৃত সংস্থাগুলি পূর্বতন মালিকদের এবং বাজেয়াপ্ত জমিজমা জমিদারদের হাতে ফেরৎ দেয়া হয়েছে। বৈদেশিক পুঁজি ও স্থানীয় ধনিকতন্ত্রের দ্বারা মেহনতির উপর নির্যাতন তীব্রতর হয়ে উঠছে।
রক্তাক্ত সন্ত্রাস প্রতিষ্ঠা করে সামরিক-ফ্যাসিবাদী জান্তা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে। শিল্প ও কৃষির ক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, মেহনতিদের বৈষয়িক সংস্থান দুর্বলতর হচ্ছে, বেকারি বাড়ছে। নির্মম সন্ত্রাসের পরিস্থিতি সত্ত্বেও চিলির জনগণ স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সামাজিক প্রগতির জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছে। পথিবীর সমস্ত সৎ মানুষ এদের পক্ষসমর্থন করছে।
তথ্যসূত্র:
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১২২-১২৩।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।