নেদারল্যান্ডস ইউরোপের উন্নত শিল্প ও কৃষিসমৃদ্ধ দেশ

নেদারল্যান্ডস উন্নত শিল্প-কৃষিসমৃদ্ধ দেশ। কিছুকাল আগেও সে অন্যতম প্রধান ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তার উপনিবেশগুলির মোট আয়তন ও জনসংখ্যা নিজ দেশের তুলনায় যথাক্রমে ৬২ গুণ ও ৮ গুণ বেশি ছিল। আজ তার অছিদেশের মধ্যে কেবল ক্যারিবিয়ানের ক্ষুদে অ্যান্টিলেসই (নেদারল্যান্ডসের ওয়েস্ট ইণ্ডিজ) উল্লেখ্য।

নেদারল্যাণ্ডসের ভূখণ্ডের অর্থাৎ আয়তন প্রায় ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার একাংশ সমুদ্রের অনুভূমিক রেখার নিচে অবস্থিত এবং এটি বাঁধ দিয়ে সংরক্ষিত। জনসংখ্যার মোট প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ বেশির ভাগই ডাচম্যান এবং উত্তর ও দক্ষিণে যথাক্রমে ফ্রিজ ও ফ্ল্যামিশদের বাস।

নেদারল্যান্ডসের হাজার কিলোমিটারেরও বেশি উপকূল উত্তর সাগরলগ্ন। রাইন, মাস ও শেলদে নদীর মোহনাগুলি এই দেশের অন্তর্গত। এসব নদীর অববাহিকাবতী মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলির জন্য নদীগুলি সমুদ্রযাত্রার স্বাভাবিক পথ।

ডাচ অর্থনীতিতে নৌ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের গুরুত্ব সমধিক। অত্যুন্নত শিল্প ও ঘনীভূত চাষাবাদই দেশের অর্থনীতির প্রধান শাখা। তার শিল্পোৎপাদের মূল্য উৎপন্ন কৃষিজাত সামগ্রীর ৪ গুণ।

জাহাজনির্মাণ, বিদ্যুৎ-ইঞ্জিনিয়ারিং, তৈলশোধন ও খাদ্যশিল্প ডাচশিল্পের প্রধান শাখা। বিশ্ব পুঁজিবাদী উৎপাদনে এগুলি বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। দেশটি সমুদ্রগামী জাহাজ, টার্বাইন, জেনারেটর, বিজলিমোটর, যোগাযোগ সরঞ্জাম, রেডিও ও টিভি এবং গৃহস্থালী সামগ্রী রপ্তানি করে।

তার বিমান ও মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পের সামর্থ্যও অনুল্লেখ্য নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এদেশের রাসায়নিক ও তৈল-রাসায়নিক শিল্পগুলিও উন্নত হচ্ছে।

দেশের রাজধানী আমস্টারডাম (জনসংখ্যা ১০ লক্ষ) একটি শিল্পপ্রধান শহর, ইউরোপের ব্যাঙ্কব্যবসার কেন্দ্র ও বন্দর। রটারডাম (পশ্চিম ইউরোপের সমুদ্রদ্বার) বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও প্রধান শিল্পকেন্দ্র।

অত্যুৎপাদনশীল গবাদি পশুপালনই কৃষির মুল প্রবণতা। দেশের চাহিদার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি পরিমাণ মাখন ও পনির এদেশে উৎপন্ন হয়। খেতজমি ও শস্যের আবাদ সীমিত বিধায় নেদারল্যাণ্ডস শস্য ও পশখাদ্য আমদানি করে। বিশাল বাণিজ্যিক নৌবহর নেদারল্যাণ্ডস ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিশ্চিত করেছে।

আরো পড়ুন:  ডাইকাস্ট হচ্ছে প্রাচীন এথেন্স নগর-রাষ্ট্রের একটি রাষ্ট্রীয় পদ

তথ্যসূত্রঃ

১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ১৯৮-১৯৯।

Leave a Comment

error: Content is protected !!