আনুষ্ঠানিকভাবে হেলেনিক লোকতন্ত্র বা গ্রিস হচ্ছে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপে অবস্থিত পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী গণনিপীড়ক শোষণমূলক রাষ্ট্র। বলকান উপদ্বীপের দক্ষিণে ও অদূরবর্তী দ্বীপগুলিতে অবস্থিত গ্রীসের আয়তন প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে পর্তুগালের চেয়ে বৃহত্তর হলেও জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মানের হিসাবে এর চেয়ে নিম্নপর্যায়ে অবস্থিত। গ্রিসের জনসংখ্যা ১ কোটি সাত লক্ষ এবং রাজধানি হচ্ছে এথেন্স।
বলকান অঞ্চলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গ্রিক রাজার অনুসারী সামরিক কর্মকর্তারা সরাসরি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সমর্থন দিয়ে বসে জার্মানিকে। তখন তাদের সেনা সংখ্যা ৩২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ১০ হাজার করা হয়। তবে এক্ষেত্রে বলকানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গ্রিক প্রধানমন্ত্রী এলিফথিরিওস ভেনিজেলস অক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেই আগ্রহী। ছিলেন। তবে রাজা কনস্টান্টাইন ভিন্নমত দেয়াতে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল তাকে। এদিকে ১৯১৫ সালে ক্ষমতায় গিয়ে তিনি আবার মিত্রবাহিনীর পক্ষে সেনা সমাবেশের চেষ্টা করলে রাজা কনস্টান্টাইন তাকে আবার বরখাস্ত করেন। এরপর তিনি ক্রিট দ্বীপে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় আক্রমণ চালিয়ে রাজা কনস্টান্টাইনকে পরাজিত করে ক্ষমতা উদ্ধারে সক্ষম হন। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ১৫ হাজার গ্রিক সৈন্যের প্রাণ যায়, পাশাপাশি হতাহত হয় প্রায় এর পাঁচ গুণ।[১]
গ্রীস মাক্ষিক, কয়লা, লিগনাইট, অ্যাজবেসটস, নিকেল, টিন, দস্তা, ক্রোমিয়াম, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ আকরিকের সমৃদ্ধ খনির অধিকারী। উষ্ণ ভূমধ্যসাগরধৌত দেশের উপ-উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু, কৃষির নিবিড় চাষভিত্তিক শাখা উন্নয়নের বিশেষ অনুকূল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গ্রীস বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির প্রভাবাধীন ছিল। এদেশের উপর আরোপিত সামরিক ব্যয়ের দুর্ভার বোঝাই তার অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার কারণ। জাতীয় স্বার্থের প্রতি বেইমান দেশের সামরিক একনায়কত্বের শাসনই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছিল।
১৯৭৪ সালে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সামরিক জান্তার অপসারণ গ্রীসের গণতান্ত্রিক শক্তির বিরাট সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত। অতংপর ১৯৮১ সালে গ্রীসের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক শক্তি বিরাট সাফল্য লাভ করে। এমতাবস্থায় দেশে প্রগতিশীল পরিবর্তন এবং অর্থনীতি ও সংস্কৃতি অনুকূল পর্বেশর্ত দেখা দিয়েছে।
আজিকার গ্রীস বিদেশী একচেটিয়া পুঁজির উপর নির্ভরশীল একটি শিল্প-কৃষিসমৃদ্ধ দেশ। কৃষি ও বনশিল্প তার অর্থনৈতিক কাঠামোর মূল উপাদান। বনশিল্প ও মাছশিকারে দেশের কর্মরত জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ নিযুক্ত। তার শিল্প ও নির্মাণ অপেক্ষাকৃত উন্নত মানের এবং জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ এতে কর্মরত।
হালকা ও খাদ্য শিল্প গ্রীসের প্রধান দুটি শিল্পশাখা। স্থানীয় কাঁচামাল সহ বহুল পরিমাণে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও জ্বালানি ব্যবহারকারী ভারী শিল্পগুলিতে সম্প্রতি উন্নতিমুখী অবস্থা দেখা দিয়েছে। এ কৃষিতে এখনো জমিদারি প্রথা বর্তমান রয়েছে। চাষাবাদ অভ্যন্তরীণ চাহিদাপূরণের জন্য শস্য ও চিনি-বীট সহ রপ্তানিযোগ্য সামগ্রী (তামাক, লেবুজাতীয় ফল, জলপাই, কিসমিস, মদ) উৎপাদনে বিশেষীকৃত। চাষাবাদ ও পশুপালনের মৌলিক সামগ্রীতে গ্রীস স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় এবং সে এগুলি আমদানি করে।
বিশাল বাণিজ্যিক নৌবহর (২৯ কোটি রেজিস্টাড টনের মোট বহনক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩ হাজারের বেশি জাহাজ) গ্রীসের বহিবাণিজ্যেই শুধু নয়, সমস্ত অর্থনীতিতেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিদেশী মুদ্রাজনের উৎস হিসাবে তার পর্যটন শিল্পের আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্রীসে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পরবর্তী বিকাশ ও মজবুতি, ন্যাটো থেকে দেশের শরিকানা প্রত্যাহার এবং সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ শক্তিগুলির পৃষ্ঠাপোষকতা থেকে মুক্তিলাভ, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে বহুমুখী সহযোগিতা স্থাপন—এসবই গ্রীক জনগণের স্বার্থানুকূল। দেশের প্রগতিশীল শক্তি ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য, জাতীয় স্বাধীনতার জন্য অটল সংগ্রাম চালাচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. মো. আদনান আরিফ সালিম, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস, [Pdf]. বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জানুয়ারি ২০১৯. সানজিদা মুস্তাফিজ ও সুমা কর্মকার. সম্পা. পৃষ্ঠা ৩৫-৪০; Retrieved from http://www.ebookbou.edu.bd/wp/OS/hsc4_2.php#hsc2855 ২. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২০৬-২০৭।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।