আইবেরীয় উপদ্বীপের আটলান্টিক তীরবর্তী পশ্চিম ভাগে অবস্থিত পর্তুগাল অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র দেশ। তার আয়তন ১০ হাজারের বর্গকিলোমিটারের সামান্য বেশি, জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। অর্ধশতক ধরে এটি প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া চক্র, বড় জমিদার ও সামরিক আমলাতান্ত্রিক চক্র দ্বারা সমর্থিত ফাশিস্ট একনায়কত্বের শাসন সহ্য করেছে। ১৯৭৪ সালে জনসাধারণের সমর্থনে সৈন্যবাহিনীর আন্দোলন ফাশিস্ট শাসক গোষ্ঠীকে উৎখাত করে। পর্তুগালের বিপ্লব দেশে রাষ্ট্রীয় একচেটিয়ার বিলোপ ঘটিয়েছে, একচেটিয়া পুঁজির উপর প্রবল আঘাত হেনেছে, কল-কারখানা মেহনতিদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং কৃষিসংস্কারের সচনা করেছে।
১৯৭৬ সালে ঘোষিত সংবিধানে জাতীয় ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সাফল্য আইনগতভাবে সূত্রবদ্ধ হয়। সংবিধানে বলা হয়েছে যে, এটি পর্তুগিজ জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাপ্রদর্শনক্রমে সমাজতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের পথ উন্মুক্ত করেছে, স্বাধীন পর্তুগাল প্রতিষ্ঠাকে প্রধান কর্তব্য হিসাবে গণ্য করেছে। নতুন সংবিধান অনুযায়ী উৎপাদন-উপায়, জমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর সামাজিক মালিকানা এবং শিল্পে একচেটিয়া ব্যবস্থা ও কৃষি থেকে জমিদারি উচ্ছেদ ঘোষিত হয়েছে।
অথচ প্রতিক্রিয়াশীলরা বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনে বছর বছর পর্তুগিজ জনগণের বিপ্লবী অর্জনের উপর আক্রমণ তীব্রতর করছে, বৃহৎ পুঁজিপতি ও জমিদারদের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় মদদ যোগাচ্ছে। এটি পর্তুগালের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। এরা বিপ্লবের সাফল্যগুলি রক্ষায় গণতন্ত্র দৃঢ়করণে এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য সংগ্রামে দৃঢ়সংকল্প।
পর্তুগিজ অর্থনীতি টাংস্টেন, ইউরেনিয়াম, টিন, তামা ও অন্যান্য আকরিক তথা অনাকরিক সমৃদ্ধ সম্পদের অধিকারী। দেশের মাটি ও জলবায়ুগত পরিবেশ কৃষির পক্ষে অনুকূল। তা সত্ত্বেও পর্তুগাল মধ্যম ধরনের উন্নত কৃষি-শিল্পসমৃদ্ধ দেশ তথা ইউরোপের অন্যতম অনগ্রসর রাষ্ট্র।
দেশে কর্মরত জনসাধারণের বিরাট অংশ কৃষিতেই নিযুক্ত এবং এটি শস্য (গম, ধান, যব, ভুট্টা), আলু, শাকসব্জি ও অলিভ উৎপাদনে বিশেষীকৃত। এদেশের আঙ্গুরখেত ও বাগান উন্নত মানের। অথচ অনুন্নত কৃষি-কৃৎকৌশল ও কৃষি-উৎপাদনের অনগ্রসর সামাজিক সংগঠনের জন্য দেশটি কৃষি-উৎপাদে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নি বলে সে বাধ্য হয়েই খাদ্যসামগ্রী আমদানি করে।
শিল্পক্ষেত্রে কয়েকটি মাত্র আধুনিক সংস্থার পাশাপাশি এদেশে ক্ষুদ্র উৎপাদন ও কুটিরশিল্প সর্বত্র বিদ্যমান। আজ ধাতুশিল্প, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিদ্যুৎ-ইঞ্জিনিয়রিং ও অন্যান্য নতুন শিল্পের বনিয়াদ গড়ে তোলা হচ্ছে।
পর্তুগাল দেশটি পর্যটন শিল্প থেকে নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক সুবিধা পায়। বিদেশে কর্মরত পর্তুগিজ শ্রমিকদের প্রেরিত অর্থাদিও তার বৈদেশিক মুদ্রার্জনের অন্যতর উৎস।
আজ এদেশ প্রকট জ্বালানি সংকট, উৎপাদন হ্রাস, দর ও বেকারী বৃদ্ধির কবলগ্রস্ত। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রপুঞ্জের অন্যান্য দেশের সঙ্গে স্থাপিত অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক-কৃৎকৌশলগত সহযোগিতার কল্যাণে পর্তুগালের অর্থনৈতিক সংকট কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২০৪-২০৬।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।