দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র আফ্রিকা মহাদেশের প্রত্যন্ত দক্ষিণে অবস্থিত। এটি আয়তনে ১২ লক্ষাধিক বর্গকিলোমিটার ও জনসংখ্যা ৩ কোটি। এটি একটি বৃহৎ পুঁজিবাদী দেশ। দেশের রাজধানী প্রিটোরিয়ার জনসংখ্যা ৬ লক্ষ। প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশের ভিত্তিতে প্রজাতন্ত্রটি গঠিত।
দক্ষিণ আফ্রিকার বুর্জোয়া সরকার দেশে এক ভীতিপ্রদ শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে এবং বৈষম্যবাদী নীতি অনুসরণ করছে। ৪০ লক্ষেরও কম ইউরোপীয় অর্থাৎ ইংরেজ ও আফ্রিকীয় শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকরা সেখানকার প্রায় ১৮ কোটি আফ্রিকীয় ও ২০ লক্ষ এশীয় বংশোদ্ভূত সহ সকল অশ্বেতাঙ্গদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
সেখানকার সকল অ-ইউরোপীয়রাই রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত এবং শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের দ্বারা নির্মমভাবে শোষিত। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিক্রিয়াশীল শাসকচক্র দ্বারা বেআইনীভাবে দখলকৃত নামিবিয়ার স্থানীয় জনগণও এদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র একটি শিল্প-কৃষিপ্রধান দেশ। এর অর্থনীতি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয়-একচেটিয়া খাত এবং বিদেশী পুঁজির আওতাধীন। পশ্চিম জার্মানি ও অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশের একচেটিয়া পুঁজি ক্রমেই এখানকার অর্থনীতির গভীরে অনুপ্রবিষ্ট হচ্ছে।
নিষ্কাশনলগ্ন ও মানুফ্যাকচারিং শিল্প নিয়ে গঠিত ভারী শিল্পই দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতির বনিয়াদ। এর খনিশিল্প পুঁজিবাদী বাজারকে সামরিক গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল ও উপকরণ সরবরাহ করে। উল্লেখ্য পরিমাণ তামা, টিন, অ্যান্টিমনি ও অন্যান্য আকরিক সহ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বে সোনা, ক্রমাইট, প্লাটিনাম, ম্যাঙ্গানিজ উত্তোলনে প্রথম স্থান, হীরা সংগ্রহে দ্বিতীয় স্থান এবং ইউরেনিয়াম উৎপাদনে তৃতীয় স্থানের অধিকারী। এর প্রধান অংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ইউরোপ ও জাপানে রপ্তানি করা হয়।
নিজস্ব জ্বালানি ও কাঁচামালের ভিত্তিতে দেশের লৌহ ও ইস্পাত শিল্প যার মধ্যে বার্ষিক ইস্পাত উৎপাদন ৭০ লক্ষ টনের বেশি, লৌহেতর ধাতুশিল্প, বিদ্যুৎশিল্প যা বছরে প্রায় ৯৮০০ কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা ও রাসায়নিক শিল্প বিকশিত হচ্ছে। দেশের পাঁচটি শোধনাগার বছরে আমদানিকৃত ২ কোটি টন অশোধিত তৈল শোধন করে।
ইঞ্জিনিয়রিং, বিশেষত জাহাজনির্মাণ দক্ষিণ আফ্রিকার অগ্রগামী শিল্প এবং তার যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদনও বর্ধমান।
দেশের প্রধান শিল্পকেন্দ্রের মধ্যে বেননি, প্রিংস, জামিস্টোন, প্রিটোরিয়া শহরগুলি দ্বারা বেষ্টিত ১৩ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত যোহান্সবার্গ (ধাতুশিল্প, ইঞ্জিনিয়রিং ও রাসায়নিক শিল্প), কেপটাউন (জাহাজনির্মাণ), ডারবান, পোর্ট এলিজাবেথ ইত্যাদি উল্লেখ্য।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র শস্য, আল ও কয়েকটি প্রাণীজ সামগ্রীতে স্বনির্ভর নয় এবং এগুলি আমদানি করা হয়। এসঙ্গে তার পুঁজিবাদী খামারগুলি পশম, ফল ও অন্যান্য কৃষিদ্রব্যাদির উৎপাদন বৃদ্ধি করছে এবং এগুলি পুঁজিবাদী দেশে রপ্তানি করছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাব মোতাবেক আফ্রিকার বর্ণবাদী ও নব্য-উপনিবেশবাদী এই দেশটির সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ও অনেকগুলি উন্নয়নশীল দেশ কোন ব্যবসাসম্পর্ক রাখে না।
তথ্যসূত্রঃ
১. কনস্তানতিন স্পিদচেঙ্কো, অনুবাদ: দ্বিজেন শর্মা: বিশ্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভূগোল, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো, বাংলা অনুবাদ ১৯৮২, পৃ: ২১৬-২১৮।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।