আমাশয় রোগ সারাতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ১৩টি ভেষজ চিকিৎসা

আমাশয় (ইংরেজি: Dysentery) হচ্ছে অন্ত্রে সংক্রমণের কারণে প্রদাহজনিত পেট ব্যাথা ও শ্লেষ্মা বা রক্তসহ পাতলা পায়খানা সৃষ্টিকারী রোগ। আমাশয় প্রধানত দুপ্রকার, অ্যামিবিয় আমাশয় বা অ্যামিবিয়াসিস আর ব্যাসিলারি আমাশয় বা শিগেলোসিস। আরো পড়ুন নিম্নে আমাশয় সারানোর কিছু ভেষজ উপায় উল্লেখ করা হলো:

আমাশয় সারানোর ভেষজ উপাদান

১. শুঠের গুড়া: পুরানো আমাশয় যাঁদের আছে, তাঁদের উচিত আদা ১ গ্রাম মাত্রায় (সহমত) শুঠের গুড়া গরম জলের সঙ্গে খাওয়া, এর দ্বারা আম পরিপাক হয়।

২. আম ও জাম পাতার রস: কাঁচা আমপাতা ও জামপাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে খেলে আমাশা সেরে যাবে।

এছাড়াও সাদা বা রক্ত আমাশয় যাদের আছে জামের কচি পাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সেরে যায়। সম্ভব হলে ছাগল দুধ তাতে মিশিয়ে নিলে ভালো।

৩. ডালিম: ডালিম গাছের ছাল সিদ্ধ করে খেলে আমাশয় সারে, এটি আমাশয়েও কাজ দেয়।

৪. তেঁতুল: আমাশয় অনেকদিন থেকে হলে অর্থাৎ পুরাতন আমাশয় হলে ৪ থেকে ৫ গ্রাম তেঁতুল পাতা সিদ্ধ করে চটকে নিয়ে তা ছেঁকতে হবে। প্রাপ্ত জলকে জিরার ফোড়নে সাঁতলে[১] নিয়ে খেলে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে বহুদিনের পুরানো এবং পেটে সঞ্চিত আম (Mucus) বেরিয়ে যায়; অবশ্য নতুন আমাশার ক্ষেত্রেও টোটকা চিকিৎসায় এটার ব্যবহার হয়ে থাকে।

৫. থানকুনি: আমাশয় মানে আমাতিসার এবং জ্বর দুটাই হয়েছে। সাধারণত এটা বাচ্চাদেরই বেশী দেখা যায় সে ক্ষেত্রে এই থানকুনি গাছের পাতার রস গরম করে ছেঁকে খাওয়াতে হবে। 

৬. বেতো বা বতুয়া শাক: রক্ত আমাশয় বেতো বা বতুয়া শাকের রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ অল্প গরম করে দুধ মিশিয়ে খেলে অর্শের রক্তপড়া বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে মহিষের দুধ হলে ভাল হয়। শুধু আমাশা রোগে  বেতোশাক শুকিয়ে গুড়ো করে অল্প দই মিশিয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তবে তার সঙ্গে ডালিমের রস দিতে বলা হয়েছে চরকে।

আরো পড়ুন:  ফোড়া সারানোর ১৬টি উপায় এবং ভেষজ উপাদান ব্যবহারের নিয়ম

৭. মুথা: এ রোগে অনেকের পেট কুনকুন করে, ব্যথা করে, সেক্ষেত্রে এই মুথার ক্বাথ খেলে আম ও ব্যথা দুই কমে যায়।

৮. অর্জুন: রক্ত আমাশয়ে ৪ থেকে ৫ গ্রাম অর্জুন ছালের ক্বাথ ছাগল দুধ মিশিয়ে খেল ওটা সেরে যাবে। এখানে একটা কথা জেনে রাখা ভালো, অর্জুন গাছের সব অংশই কষায় রস (Astringent); এর জন্যই ওর ক্বাথে অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। ওদিকটাও লক্ষ্য রাখা দরকার। তবে এটা দেখা যায় দুধে সিদ্ধ অর্জুন ছালের ব্যবহারে কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না।

১০. আমড়া: অজীর্ণ চলছে অর্থাৎ ভালো হজম হচ্ছে না অথচ বেশ চর্বচোষ্য করে গুরুভোজন করে চলেছেন তার পরিণতিতে এলো আমাশা, তারপর একদিন বাদেই দেখা গেল রক্ত পড়ছে, এক্ষেত্রে আমড়ার আঠা ৩ থেকে ৪ গ্রাম আধা কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে তার সঙ্গে আমড়া গাছের ছালের রস এক চা চামচ মিশিয়ে একটু চিনি দিয়ে খেলে ২ দিনের মধ্যেই ঐ রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং আমাশাও সেরে যাবে।

১১. কুলেখাড়া: আমাশয় বা শোথে পায়ের চেটো অর্থাৎ যে অংশটার ওপর ভর দিয়ে আমরা হেঁটে বেড়াই সেটা ফুলে যায়, এটা সাধারণতঃ পেটে আম বা অপক্ক মল জমার জন্য হয়; সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র কুলেখাড়া পাতার রস বা ডাঁটা বাদে ৪ চা-চামচ একটু গরম করে ছেকে, সকালে ও বিকালে দু’বার খেতে হবে; এর সঙ্গে ২ থেকে ৫ ফোঁটা মধু দেওয়াও চলে। এর দ্বারা ঐ ফুলোটা চলে যাবে।

১২. গোল মরিচ: আমাশয়ে আম বা মল বেশি পড়ে না। কিন্তু শুলুনি ও কোথানিতে বেশি কষ্ট দেয়; এক্ষেত্রে গোল মরিচ চূর্ণ এক বা দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে ও বিকালে দু’বার জলসহ খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ আমদোষ ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই সমস্যা চলে যাবে।[২]

আরো পড়ুন:  সর্দি সারানোর দশটি সহজ ঘরোয়া উপায়

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র ও টিকা:

১. সাঁতলান বা সাঁতলানো কথাটির অর্থ হচ্ছে মাছ-মাংস তরকারী প্রভৃতি মসলা বাটা দিবার পূর্বে তেলে ঈষৎ ভেজে নেওয়া; অন্য অর্থ সন্তলন করা।

২. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

5 thoughts on “আমাশয় রোগ সারাতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ১৩টি ভেষজ চিকিৎসা”

  1. জিরে ফোরনে সাঁতলে খেতে হবে? এই কথাটি বুঝলাম না এটা উত্তর টা দিবেন প্লিজ

    Reply
    • নতুন একটি টিকা যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ তথ্যসূত্র ও টিকা অংশের ১ নম্বর টিকা দেখুন। ধন্যবাদ বিষয়টি নজরে আনবার জন্য।

      Reply
  2. এত সহজে আমাশয় সারানোর ঘরোয়া নিয়ম আছে। জেনে ভালো লাগলো।

    Reply
  3. আমাশয় রোগ সম্পর্কে এখানে লেখা প্রত্যেকটি উপদেশ বেশ উপকারী মনে হচ্ছে।

    Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!