বমি বা বমন বন্ধ করার ১৮টি ভেষজ ঘরোয়া সহজ পদ্ধতি যা জেনে রাখা ভাল

বমি (সংস্কৃত ভাষায়: বমন, ইংরাজি ভাষায়: Vomiting, emesis) হচ্ছে পাকস্থলীর ভেতরে হজম বা পরিপাকরত খাবারসমূহ, অর্থাৎ কঠিন অথবা তরল উভয় ধরনের, অনৈচ্ছিকভাবে সজোরে মুখ দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসা। সাধারণত বমি হচ্ছে পাকস্থলী থেকে আধা হজম বা হজম না হওয়া খাবার মুখ দিয়ে বের হওয়া। আমরা বমি বন্ধ করার ১৮টি ভেষজ ঘরোয়া সহজ পদ্ধতি এখানে আলোচনা করছি।

শিশুরা খাবার পছন্দ না হলে গলা থেকে যখন “তুলে দেয়”, তা বমি নয়, উগরে দেওয়া বা উদ্গার (ইংরেজি: regurgitation) বলে। গ্যাসীয় পদার্থ উঠে এলে তাকেও বমি বলে না, তাকে বলে ঢেঁকুর বা বায়ু-উদ্গার (ইংরেজি: Belching বা burping বা eructation)।

বমির অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ প্রচলিত যেই কারণ সেটি হচ্ছে গ্যাসট্রিক এসিডিটি বা গ্যাসীয় অম্লত্ব। এ ছাড়া মাথাব্যথার জন্য সমস্যা হতে পারে, খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য বমি হতে পারে, পেটে ব্যথার জন্য হতে পারে।

১. আমলকী: বমি বন্ধ হচ্ছে না সে ক্ষেত্রে শুকনো আমলকী ৩-৪ গ্রাম ১ কাপ জলে ভিজিয়ে রেখে ঘণ্টা দুই বাদে ছেঁকে নিয়ে সেই জলে আধ চামচ আন্দাজ শ্বেত চন্দন ঘষা ও একটু চিনি মিশিয়ে অল্প অল্প করে খেতে দিতে হয়।

২. আম: যাদের শরীরে দাহ বেশি এবং বমি বমি ভাব প্রায়ই ঘটে, তাঁরা আমপাতা ৩ থেকে ৪টি জলে সিদ্ধ করে সেই জল সমস্ত দিনে একটু একটু করে খেলে দাহ ও বমির ভাবটা চলে যাবে।

৩. খেসারী: বিশেষভাবে শরৎ কাল আর বসন্ত কালে যাঁরা সর্বদা বমি বমি ভাব ভোগেন , অথবা বমিও করেন, তারা খেসারির ডাল ৩/৪ গ্রাম মাত্রায় গরমজলে ভিজিয়ে রেখে পরে ঠাণ্ডা হলে সেই জল সকালে অথবা বিকালের দিকে খাবেন। এর দ্বারা ঐ বমনভাবটা চলে যাবে।

৪. গিমা শাক: অম্ল পিত্ত রোগে যাদের বমি হয়, তারা গিমে পাতার রস ১ চামচ এবং তার সঙ্গে আমলকী ভিজানো জল আধকাপ মিশিয়ে সকালে খাবেন, অচিরেই বমি করা কষ্ট দূর হবে।

আরো পড়ুন:  ওজন কমানো-এর আটটি ঘরোয়া উপায়

৫. জাম: পিত্ত বিকৃতিতে যেখানে বমি হতে থাকে, সেখানে ২ থেকে ১টা কাঁচ জাম পাতা জলে সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে খেতে দিলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।

৬. দূর্বা:  সর্বদা গা বমি বমি করা এক্ষেত্রে দূর্বার রস আধা চামচ থেকে ১ চামচ পর্যন্ত অল্প একটু চিনি মিশিয়ে খানিকক্ষণ অন্তর অন্তর একটু একটু করে চেটে খেতে হবে। এতে অসুবিধাটা চলে যাবে।

৭. নিম: অনেক ক্ষেত্রে বমি বেশীবার হলে তার সঙ্গে রক্তর ছিটও আসতে পারে, সেক্ষেত্রে পাতার রস ৫ থেকে ৭ ফোঁটা একটু দুধে মিশিয়ে খেতে দিলে ওটা বন্ধ হয়ে যাবে।

৮. পেঁয়াজ: পেঁয়াজের রস ৪ থেকে ৫ ফোঁটা অল্প জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়।

৯. শ্বেত চন্দন: আমলকির রস অথবা শুকনো আমলকি ভিজানো জলে চন্দন ঘষা মিশিয়ে খেতে দিলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।

১০. অশ্বত্থ: অনেক সময় এই পিত্তবমনটা জ্বর হলেও হয়। আবার না হলেও হয়; এক্ষেত্রে অশ্বত্থের চটা বা স্বভাবমতে ছাল অন্তর্ধূমে দগধ করে অর্থাৎ হাঁড়ির মধ্যে ছাল পুরে সরা চাপা দিয়ে, মাটি দিয়ে হাঁড়ির মুখ লেপে, রৌদ্রে শুকিয়ে নিয়ে, পোড়া দিতে হয়; ভিতরের ছালগুলি পুড়ে কয়লায় পরিণত হবে, সেই অঙ্গার ৪ থেকে ৫ গ্রাম ১ কাপ জলে দিয়ে নেড়ে ঐ কয়লাটা একটা ন্যাকড়ায় ছেকে ফেলে দিয়ে ঐ পরিষ্কার জলটা একটু একটু করে খেলে পিত্তবমন বন্ধ হয়ে যায়।

গুলঞ্চ; পেটে কিছু থাকছে না, সে ক্ষেত্রে আধ কাপ জলে দেড় বা দুই ইঞ্চির মতো গুলঞ্চ পাতলা চাকা চাকা করে কেটে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, তারপর তা থেকে ছেঁকে ২ থেকে ১ চামচ করে জল নিয়ে তার সঙ্গে ২ থেকে ১ চামচ দুধ মিশিয়ে খেতে হয়। অবশ্য এটা পিত্তশ্লেষ্মা জন্য বমনেই ভাল।

আরো পড়ুন:  বোলতা ও ভীমরুল বা কীটের কামড় ও হুলের ব্যথানাশের ঘরোয়া উপায়

১১. আফিম: ১৫ থেকে ২০ ফোটা আদার রস গরম করে, সেটা ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে তার সাথে ১৫ থেকে ২০ মিলিগ্রাম আফিং মিশিয়ে খেলে বমি কমে যাবে।

১২. আমড়া: এই পিত্ত বমিটা শরৎকালে অর্থাৎ ভাদ্র বা আশ্বিনে প্রায় হতে দেখা যায়; এক্ষেত্রে আমড়ার ছাল শুকিয়ে নিলে ভালো হয়, ৫ গ্রাম এক কাপ গরম জল ভিজিয়ে রেখে ঘণ্টা দুই বাদে ছেঁকে নিয়ে, অল্প অল্প করে ঐ জলটা ৩ থেকে ৪ বারে খেলে ঐ পিত্ত বমি বন্ধ হয়ে যায়।

১২. কাঁকুড়: কয়েকদিন থেকে কিছুই মুখে রুচছে না, বমি আসে, মুখ দিয়ে তিতো (তিক্ত) জল বেরোয়, এক্ষেত্রে বুঝতে হবে, তাঁর রসবহ স্রোত বিকারগ্রস্ত। তাই সেখানে কচি কাঁকুড়ের রস ৩ থেকে ৪ চা চামচ একটু মিছরি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে একবার খেতে হবে। এর দ্বারা ঐ অসুবিধাটা চলে যাবে।

১৩. তেলাকুচা: অনেক সময় বমি করার দরকার হয়, যদি কোনো কারণে পেটে কিছু গিয়ে থাকে বা খেয়ে থাকেন—সেক্ষেত্রে তেলাকুচা পাতার রস ৫/৬ চা চামচ কাঁচাই অর্থাৎ গরম না করেই খেতে হয়, এর দ্বারা বমন হয়ে থাকে।

১৪. রামতুলসী: ছোটদের বমি হলে রামতুলসীর পাকা ফলের বীজ গুঁড়া করে ২ থেকে ৩ গ্রাম পরিমাণ দেড় চামচ মধুর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়ালে বমি বন্ধ হয়ে যাবে।

১৫. পুদিনা: বমি বন্ধ করার জন্য পুদিনার টাটকা পাতা ১০ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে বেটে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

১৬. বিশল্যকরণী: অনেক সময় পেটের ক্ষতের জন্য রক্তবমি হয়। আবার বুকের দোষের জন্য বমির সাথে অথবা কাশির সাথে রক্ত পড়ে। এছাড়া অতিরিক্ত রক্তপিত্তে রক্তবমি করলে বিশল্যকরণী গাছের শিকড় দুই গ্রাম, পাতা আট থেকে দশটি নিয়ে একসাথে বেঁটে সামান্য ঠান্ডা পানি মিশিয়ে খাওয়ালে রক্তবমি অবশ্যই বন্ধ হবে।  

আরো পড়ুন:  চোখের সমস্যা সমাধানে ১০টি ঘরোয়া পদ্ধতি

১৭. কদবেল: কদবেলের রস ১ চা চামচ নিয়ে, তার সাথে ২-১টি পিপুলের গুঁড়া মিশিয়ে চেটে খান। বমি কমে যাবে।

১৮. মুর্বা: মুর্বা (বৈজ্ঞানিক নাম: Argyreia nervosa (Burm. f.) Bojer) গাছের মূল ১০ গ্রাম থেতো করে তার রস নিতে হবে। এর সাথে রসের দ্বিগুণ আতপ চাল ধোয়া পানি ও আধা চা-চামচ চিনি দিয়ে একসাথে মিশিয়ে, আধ ঘণ্টা অন্তর খেতে হবে। বমি ও বমি ভাব কেটে যাবে।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্র ও টিকা

১. ১-১৩ ক্রমিকের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো নেয়া হয়েছে আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য রচিত চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১-২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩ থেকে।
২. ১৪-১৮ ক্রমিকের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো নেয়া হয়েছে আঃ খালেক মোল্লা সম্পাদিত, লোকমান হেকিমের কবিরাজী চিকিৎসা; মণিহার বুক ডিপো, ঢাকা, অক্টোবর ২০০৯ থেকে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!