অজীর্ণ বা বদহজম খাবার থেকে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত তেল, চর্বি, মসলা, ঝাল খেলে খাবার হজমে ব্যাঘাত ঘটে। তাই অম্ল বা গ্যাস্টিক বেড়ে যায়। এ থেকে পেটে সমস্যা হয়। তবে যাদের একটুতেই পেটে সমস্যা হয় তাদের অবশ্যই খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
১. কালমেঘ: এই ক্ষেত্রে কালমেঘ পাতার রস আধ চা-চামচ, তার সঙ্গে বড় এলাচের দানা চূর্ণ ২ টিপ নস্যির পরিমাণ মিশিয়ে সকালে খেলে এই দুটি রোগ উপশম হয়, তবে প্রয়োজনবোধে দু’বেলাই খাওয়া যায়। এটাও ঠিক যে, আহারাদির বাছবিচার না করলে এ অসুখের উপশমও হয় না। অম্লরোগের উপশমের অন্তরায় হলো যে কোন মিষ্ট দ্রব্য, এমনকি মিষ্ট ফলও ভাল নয়।
২. সঞ্জীবনী: দীর্ঘদিনের অজীর্ণ ও অগ্নিমান্দ্যে এবং গ্রহণী রোগে হলে ক্ষুধা অল্প হতে হতে একেবারে কিংবা আংশিক হতে চায় না, যা খাওয়া হয় তা সহজে হজম হয় না, এটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এবং মাঝে মাঝে পাতলা দাস্ত হলে এমন একটা সময় আসবে, যখন গ্রহণী রোগের সৃষ্টি হবে। তখন দাস্ত দু’দিন পাতলা তো দু’দিন শক্ত কিংবা গুটলে, আবার দুই বা তিন দিন পায়খানা হলোই না, সেইসঙ্গে অজীর্ণ, অরুচি, গা-বমি বমি ভাব, পেটফাঁপা, দুর্বলতা প্রভৃতি আসে।
এই রকম কিংবা এর কম অথবা বেশি অবস্থায় সঞ্জীবনী ব্যবহার করে উপকার পাবেন। যেক্ষেত্রে অত্যধিক ধাতুক্ষয় কিংবা যথেচ্ছ যৌনাচার করার ফলে ধীরে ধীরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেক্ষেত্রেও এটির ব্যবহারে সুফল পাবেন। সঞ্জীবনী পাতা ৪ । ৫ গ্রাম জলে বেটে তাতে সামান্য চিনি এবং কাপখানিক জল মিশিয়ে সরবতের মত করে প্রত্যহ সকালে খালি পেটে একবার এবং বিকালের দিকে একবার খেতে হবে। এভাবে মাসখানিক ব্যবহারের পর কেবল সকালের দিকে একবার করে আরও মাসখানিক খাওয়া প্রয়োজন। এর দ্বারা উপরিউক্ত অসুবিধাগুলো তো যাবেই, সেইসঙ্গে শরীরের অন্যান্য ক্ষয় পূরণ হয়ে শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং মনে স্ফূর্তি আসবে।
৩. আশশেওড়া বা মটকিলা: যাঁরা প্রায়ই অজীর্ণে ভোগেন এবং পায়খানার বেগ এলে আর থামাতে পারেন না, বিশেষ করে ভোরের দিকেই, যাকে আয়ুর্বেদের পরিভাষায় বলা হয় রসশেষ অজীর্ণ। এ রোগে দীর্ঘদিন আক্রান্ত হয়ে থাকলে তাঁরা আশশেওড়া বা মটকিলা-র মূলের ছাল চূর্ণ ২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় সকালে ও বৈকালে প্রত্যহ দু’বার জলসহ খেতে পারেন; এটা কয়েকদিন ব্যবহার করলে উল্লেখযোগ্য উপকার পাবেন এবং উপসর্গগুলি কমে যাবে। অথবা কাঁচা মূলের ছাল বেটে ছোট ছোট বড়ি করে শুকিয়ে রাখলেও চলবে, তবে শুকিয়ে যাওয়ার পরও যেন ২ রতি থাকা চাই।
৪. ফলসা গাছ: বদহজমজনিত যে অজীর্ণ তা নয়, এটা এসেছে পিত্তধাতুর ক্ষয় থেকে, এ রোগ দেখা দেয় শরৎকালে এবং গ্রীষ্মকালে। এই অজীর্ণ পিত্তনাশক। ঔষধে কাজ হয় না, তবে পিত্ত যাতে বিকৃত না হয় সেটাও দেখতে হবে। এক্ষেত্রে পাকা পাকা ফলসা ফলের রস ৩/৪ চা-চামচ অল্প চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন; রস করার অসুবিধে থাকলে পাকা ফলসা চিবিয়ে খেয়ে ছিবড়েটা ফেলে দেবেন।
৫. কুকুরমুতা বা তাম্রচূড়া: এই অজীর্ণ রোগটা প্রকৃতপক্ষে কোন মৌল রোগ নয়, বায়ু, পিত্ত এবং কফের এক একটিকে প্রধান করে অগ্নিমান্দ্য হলে তবে এই রোগটি উৎপন্ন হয়। এই রোগটি পিত্তজন্য অগ্নিমান্দ্য হ’লেও হবে, কফজন্য অগ্নিমান্দ্য হ’লেও হবে। তাছাড়া বায়ুর জন্য অগ্নিমান্দ্য হলেও হবে। আবার ঋতুবিকারের কারণে যে অগ্নিমান্দ্য দেখা দেয় সেটা থেকেও অজীর্ণ রোগ এসে যায়।
এই জাতীয় অজীর্ণ দোষ পেটে পুষে রাখলে এরা প্রায়ই রক্তপিত্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে থাকেন। এর পূর্বেরূপ হবে, গলায় আঙ্গুল দিয়ে গলাটা পরিষ্কারের চেষ্টা, জিভটা যাতে পরিষ্কার থাকে তার জন্য তৎপর হওয়া। এইসব লক্ষণ দেখা দিলে, মূলসমেত কুকশিমার গাছকে থেতো করে রস নিংড়ে, তাকে গরম করে তা থেকে এক চা-চামচ রস সকালের দিকে একবার এবং বৈকালের দিকে একবার খেতে হবে।
তবে একটু দুধ মিশিয়ে খাওয়াই ব্যবস্থা। প্রথমে একবার ক’রে খাওয়াই ভাল। আর একটা কথা জানা দরকার যে, কোন সময় গরম অবস্থায় কোন জিনিসই খাওয়া সমীচীন নয়। পান খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা ত্যাগ করাই উচিত, তবে যদি রক্তপিত্ত দেখা দেয় তাহলে বন্ধ করতে হবে, নইলে নয়।
৬. শন বা বন শন: কফবিকারজনিত অজীর্ণ দোষে কষ্ট পেতে থাকলে শণ ফুল ৩ গ্রাম বেটে আধ কাপ জলে মিশিয়ে একটু, গরম করার পর তাকে ছেঁকে ওই জলটা প্রত্যহ একবার খেতে হবে। এই রকম দু-তিন দিন খেলে ওই অজীর্ণ দোষটা চলে যাবে।
৭. ইশ্বরমূল বা রুদ্রজটা লতা: সে যে কোন প্রকারেরই হোক না, পেটের ব্যথায় ৫০০ মিলিগ্রাম মুল চূর্ণ অল্প গরম জল সহ খেলে ব্যথাটার উপশম হবে। আর কয়েকদিন এটা ব্যবহার করে অজীর্ণদোষের শান্তি হবে।
৮. গাঁদা গুল্ম: গুরুপাক খাবার খেয়ে অথবা বেশিক্ষণ উপবাস থেকে স্নেহ জাতীয় খাবার খেলে অজীর্ণ হয়। এটি সারতে না সারতে আবার গুরুপাক খাবার প্রথমে আমাশয় ও পরে রক্ত আমাশয় দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে গাঁদা পাতার রস বেশ উপকারী। পাতার দেড় থেকে দুই চা চামচ রসে একটু চিনি মিশিয়ে দিনে দুই-তিন বার খেলে একদিনের মধ্যেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
৯. সুপারি ( Areca Catechu ) : এই রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের ভোরের দিকে পিপাসা লাগে, মাঝে মাঝে শরীরে কামড়ানি, যাকে বলে অঙ্গমদ, সাধারণতঃ এদের একটু, পিপাসা লেগেই থাকে, মুখ দুর্গন্ধ, এছাড়া সর্বদাই যেন মুখটা শুকিয়ে আছে অর্থাৎ মুখে লালাংশ কম হয়ে যায়। অনেকের ধারণা—এটা বোধহয় লিভারের দোষেই হচ্ছে। সুপারির ক্বাথ তৈরী করে দু’বেলা কয়েকদিন খেলে অবস্থাটার উন্নতি হবে।
১০. জিরা: চিকিৎসকদের মতে জিরে বায়ুনাশক, উষ্ণ ও পাচক। স্বরভঙ্গ, অজীর্ণ, পেটের অসুখ, পেটফাঁপা ও পুরানো পেটের অসুখে ওষুধের মতো উপকার করে। জিরে খেলে কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়। শুকনা জিরা তাওয়ায় সেঁকে, গোলমরিচ, সৈন্ধব লবণের গুড়া ঘোলে মিশিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পরে পান করলে পুরনো পেটের অসুখ, অর্শ ও পেটের অসুখের প্রকোপ কমে।
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।