১. আমলকী: আমলকীতে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর কাজ করে। তাই যে কোনো কারণেই হোক ঘুম না হলে কাচা বা শুকনো আমলকী কাচা দুধে বেটে একটু মাখনসহ মাথার তালুতে লাগালে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।
২. মেহেদি: আগের দিনে নবাব বাদশাহদের অনিদ্রা (Insomnia) রোগ হলে মেহেদি ফুলের বালিশে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হত। এতে আছে লাইলাকের (এক প্রকার প্রসিদ্ধ সুগন্ধি) গন্ধ। চরক সংহিতায় বলা হয়েছে- গন্ধটি পার্থিব সত্তায় সমৃদ্ধ।
৩. সর্পগন্ধা: এর মূল অনিদ্রা, রক্তচাপ, উত্তেজনা ও পাগলামি ছাড়াও দুশ্চিন্তা ও মুর্ছা রোগসহ বিভিন্ন স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় কার্যকর।
৪. কলমি শাক: অনেক সময় শিশুর মল কঠিন হয়ে গেলে কান্নাকাটি করে। দিনে এক-আধবার ঘুমালেও রাতে ঘুমাতে চায় না। অনেকের বিশ্বাস রাতে জন্মালেই বুঝি এরকম হয়, তা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে খানিকটা বিশুদ্ধ গরম দুধের সাথে ২০ থেকে ২৫ ফোটা কলমি শাকের রস মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ালে তাড়াতাড়ি স্বস্তি ফিরে পাবে।
৫. পুনর্নবা: বায়ুবিকারগ্রস্ত হয়ে অনিদ্রা (Insomnia) হলে মূলসহ ১৫ থেকে ২০ গ্রাম পুনর্নবা দিয়ে ৪ কাপ পানিতে মিশিয়ে ১ কাপ ক্বাথ তৈরি করে প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুবার করে খেলে কয়েকদিনের মধ্যে বায়ু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং অনিদ্রা দূর।
৬. গোলমরিচ: এই অনিদ্রা রোগ যাঁদের হয় সাধারণতঃ এরা একটু মেদস্বী বা মোটাকৃতির এরা মুলেখারার (Asteracantha longifolia) মূল শুকিয়ে নিয়ে তার ১০ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে, সন্ধ্যেবেলা খেতে হবে।
আর একটি গোলমরিচ নিজের মুখের লালায় ঘষে কাজলের মতো চোখে লাগালে তবে পুরো মরিচটা ঘষে নেওয়ার দরকার নেই; এর দ্বারা ঐ নিদ্রাহীনতা চলে যাবে। এটাও একটি তান্ত্রিক প্রক্রিয়া; দেখা যাচ্ছে রোগ ভেদে তার ক্রিয়া বিপরীতধর্মী হয়েছে।
৭. পিপুল: পিপুলের গুঁড়া গুড় মিলিয়ে খেলে এবং তারপরে গরম দুধ খেলে ঘুম ভাল হয়।
৮. জায়ফল: একটা জায়ফলের এক চতুর্থাংশ গুঁড়া জলে মিশিয়ে খেলে ঘুম ভাল হয়। জায়ফল ঘষে তার প্রলেপ কপালে লাগালে ঘুম ভাল হয়।
৯. কুলেখাড়া: কুলেখাড়া শিকড়ের (মূলের) রস ২ থেকে ৪ চা-চামচ সন্ধ্যার পর খাওয়ালে সুখনিদ্রা হয়, এটা হরীত সংহিতার উপদেশ।
১০. সুষনি শাক: কোনো কারণ বা অবান্তর কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা, শুয়ে থাকলেও ঘুম আসে না; আবার কারও কারও তন্দ্রা আসার মুখে চমকে উঠে ঘুম ভেঙে যায়, অবান্তর চিন্তায় মন ভারাক্রান্ত, শরীর উদ্বেগগ্রস্ত, সে ক্ষেত্রে সুষনি কাঁচা হলে ১৫ গ্রাম আর শুষ্ক হলে ৩/৪ গ্রাম ৩/৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেকে ২-৪ চামচ দুধ মিশিয়ে প্রত্যহ সন্ধ্যেবেলা খেলে ঐ অসুবিধেটা চলে যাবে।
তথ্যসূত্রঃ
১. অবনীভূষণ ঠাকুর: ‘ভেষজ উদ্ভিদ ও লোকজ ব্যবহার’, অবসর প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা, দ্বিতীয় মুদ্রণ ডিসেম্বর ২০০৯।
২. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, ‘চিরঞ্জীব বনৌষধি’ খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।