বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক পরিবর্তন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রথামিক আলোচনা

একজন মানুষ জন্মের পর হতে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবন পরিক্রমায় বয়সের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে। একটি শিশুর বড় হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়কে এক একটি কাল হিসেবে ধরা হয়। বয়ঃসন্ধিকাল বা কৈশোরকাল এদের মধ্যে একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময়। এ সময়ের ছেলেমেয়েদের কিশোর-কিশোরী বলা হয়। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীদের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তন সাধিত হয়। এ পরিবর্তনের সাথে তাদেরকে মানসিক ও সামাজিকভাবে খাপ খাওয়াতে হয়। শারীরিক নানা পরিবর্তনের জন্য এ সময় পরিবর্তিত পুষ্টি চাহিদা তৈরি হয়। বয়ঃসন্ধিকালে প্রজনন অঙ্গসমূহ পূর্ণতা পায় বলে এ সময়ে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী। এখানে প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি ও গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কেও আলােচনা করা হয়েছে।

মানবসত্তার জীবন বিকাশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক পর্যায় বা সময়কাল আছে। বিজ্ঞানীরা এ পর্যায়গুলোকে ভিন্নভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন। যেমন- শৈশবকাল, বাল্যকাল, কৈশোরকাল, যৌবনকাল, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য ইত্যাদি। এদের মধ্যে কৈশোরকালকেই বয়ঃসন্ধিকাল (ইংরেজি: Adolescent) বলা হয়। এ সময় মেয়েদের কিশোরী এবং ছেলেদের কিশোর বলা হয়। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ছেলেদের তুলনায় আগে শুরু হয়। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ১০/১১ বছর থেকে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত এবং ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল ১২/১৩ বছর হতে ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন 

বিকাশমূলক কিছু বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তনের কারণে বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এটা এমন একটা পর্যায় যখন শৈশবের শেষ পর্যায় এবং যৌবনের শুরুর একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে হয়। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। এগুলো হলো- ১. শারীরিক পরিবর্তন, ২. মানসিক পরিবর্তন, ৩. আচরণিক পরিবর্তন। 

১. শারীরিক পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়েরা আকস্মিকভাবে কিছু দৈহিক পরিবর্তনের মুখােমুখি হয়। ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে এ পরিবর্তনগুলো আলাদা হয়। 

কিশোরদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো হলো

ক. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পায়।
খ. পেশি দৃঢ় হয়, বুক ও কাঁধ চওড়া হয়।
গ. দাড়ি, গোঁফ গজায়।
ঘ. গলার স্বর ভাঙ্গে ও স্বর ভারী হয়।
ঙ. বীর্যপাত ঘটে।

আরো পড়ুন:  ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যরক্ষা হচ্ছে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মকানুন মেনে চলা

কিশোরীদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো হলো

ক. উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধি পায়।
খ. শরীর ভারী হয়, হাড় চওড়া ও দৃঢ় হয়।
গ. দেহে চর্বির আধিক্য হতে পারে।
ঘ. ঋতুস্রাব শুরু হয়।
ঙ. রক্তস্বল্পতা হতে পারে। 

ব্যক্তি বিশেষে এসব পরিবর্তন আগে বা পরে হতে পারে। পরিবর্তনের পরিমাণ এবং অনুপাতও একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। এ সময় দেহ অভ্যন্তরের বিভিন্ন গ্রন্থি হতে হরমোন নিঃসরণ শুরু হয় বলেই পরিবর্তনগুলো ঘটে। মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের জন্য ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোন দুটি এবং ছেলের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোন কাজ করে।

২. বয়ঃসন্ধিকালের মানসিক পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়েরা যৌন ক্ষমতা অর্জন করে। দেহের আকষ্মিক পরিবর্তন তার মনোজগতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই, কিশোর-কিশোরীদের মনে এক ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এ সময়ের মানসিক পরিবর্তনগুলো হলো

৩. আচরণিক পরিবর্তন: বয়ঃসন্ধিকালে আশেপাশের পরিচিত বা অপরিচিত বা অপরিচিত মানুষ হঠাৎ করেই কিশোর কিশোরীদের বড় ভাবতে শুরু করে। আবার, একই সঙ্গে বড়দের মতো আচরণ করলে পাকামি বলে মনে করে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই এ সময়কে ‘বিপত্তি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বয়ঃসন্ধিকালে হঠাৎ করেই নিজের মধ্যে নতুন নতুন পরিবর্তনের কারণে তাদের আচরণেও পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন

  • এ সময় কিশোর-কিশোরীরা বড়দের মতো আচরণ করতে চায়।
  • নিজেকে স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রকাশ করতে চায়।
  • নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। 
  • আবেগময় আচরণ করে। 

বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সময়কাল। এ সময়ের ছেলেদের কিশোর এবং মেয়েদের কিশোরী বলা হয়। সাধারণত মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয় ১০/১১ বছর বয়সে এবং ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয় ১২/১৩ বছর বয়সে। এ পর্যায় ১৮/১৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীদের আকস্মিকভাবে দৈহিক, মানসিক ও আচরণিক পরিবর্তন সাধিত হয়। তারা প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। মানসিক পরিপক্কতা পায় এবং বড়দের মতো আচরণ করতে শুরু করে।

আরো পড়ুন:  সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা ও তার প্রতিকার হচ্ছে রোগের ধরন সংক্রমণের বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান

Leave a Comment

error: Content is protected !!