শারীরিক শিক্ষার উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো শারীরিক সক্ষমতা (ইংরেজি: Physical ability)। যে যোগ্যতা দিয়ে শারীরিক শিক্ষার যেসব কর্মসূচি সুন্দর ও যথার্থভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তাকেই শারীরিক সক্ষমতা বলে। শারীরিক শিক্ষার ব্যবহারিক দিক হচ্ছে খেলাধুলা। তাই শারীরিক সক্ষমতার বৈশিষ্ট্য, খেলাধুলার সাথে এর সম্পর্ক, শারীরিক সক্ষমতার মূল্যায়ন ইত্যাদি সম্পর্কে শারীরিক শিক্ষার শিক্ষার্থীদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। ব্যায়ামের মাধ্যমে শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের পদ্ধতি, লিঙ্গভেদে ব্যায়ামের ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান লাভ করতে পারবে। শারীরিক এই দক্ষতা অর্জনে শক্তি, দম, গতি, ক্ষিপ্রতা ও নমনীয়তার প্রয়োজনীয়তা এবং খেলার ভিন্নতা অনুযায়ী কোনটির ভূমিকা কীরূপ তা জানতে পারবে। শারীরিক এই দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে সুস্থ ও কর্মঠ জীবনযাপনে সক্ষম হবে।
শারীরিক সক্ষমতার গুরুত্ব
কোনো কাজ করার সামর্থ্যকে সাধারণভাবে শারীরিক সক্ষমতা বলে। ব্যাপক অর্থে সক্ষমতা বলতে জৈবিক অস্তিত্ব রক্ষা করে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনধারণ করার সামর্থ্যকে বোঝায়। ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, আবেগময় ও সামাজিক দিকের সামর্থ্যও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই সক্ষমতাকে একটি সামগ্রিক ধারণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সক্ষমব্যক্তি শারীরিক সুস্থতার সাথে সাথে মানসিক সুস্থতা, আবেগীয় ভারসাম্য ও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন। শারীরিক সক্ষমতার এই সামগ্রিক ধারণা ব্যাখ্যা করার জন্য AAHPER (American Association of Health, Physical Education and Recreation) এর পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো সক্ষমতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:
ক) বংশগতি অনুযায়ী শারীরিক স্বাস্থ্য।
খ) দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং বিপদকালীন অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি, দম, সমন্বয় ক্ষমতা ও কৌশল।
গ) প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজকর্মের প্রতি যথাযথ মনোযোগ ও মূল্যায়ন।
ঘ) আধুনিক জীবনযাত্রার জটিলতা থেকে চাপমুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আবেগীয় সাম্য।
ঙ) দলের সাথে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা এবং সমাজ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক চেতনা।
চ) চলার পথে উদ্ভূত সমস্যাবলির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা।
ছ) গণতান্ত্রিক দেশের দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য পালনের জন্য আবশ্যিক নৈতিকতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তা।
সুতরাং সক্ষমতা বলতে ব্যক্তির সার্বিক শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্যকে বোঝানো হয়েছে। সামগ্রিক সক্ষমতার বিভিন্ন দিকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বাস্তব, প্রয়োজনীয় এবং প্রাথমিক দিক হলো শারীরিক সক্ষমতা। শারীরিক সক্ষমতা হলো শারীরিক কাজকর্ম করার সামর্থ্য। দৈহিক কাজের ভিন্নতা অনুসারে শারীরিক সক্ষমতার স্বরূপ বদলায়। তাই সাধারণ জীবনের হাঁটা, চলা, বসা ও অন্যান্য কাজের জন্য শারীরিক সক্ষমতা এবং বিশ্বমানের খেলোয়াড়ের শারীরিক সক্ষমতা এক নয়। কাজের ধরনের উপর শারীরিক সক্ষমতার ধরনও ভিন্ন হয়। শারীরিক সক্ষমতার সংজ্ঞা হিসেবে ক্লার্ক বলেছেন- “অত্যধিক ক্লান্ত না হয়ে শক্তি ও সচেতনতার সাথে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করা, আনন্দ ও উৎসাহের সাথে অবসর সময় কাটানো এবং সংকট মোকাবেলার সামর্থ্য হলো শারীরিক সক্ষমতা।”
অনেকের মতে যন্ত্র নির্ভর আধুনিক জীবনের কায়িক পরিশ্রমের প্রয়োজন লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ায় শারীরিক সক্ষমতার উপরোক্ত সংজ্ঞা বর্তমানে সম্পূর্ণ প্রযোজ্য নয়। শারীরিক সক্ষমতার প্রয়োজনীয় দিকগুলো হলো শারীরবৃত্তীয় অঙ্গ ও তন্ত্রসমূহের কার্যক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা, নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার সামর্থ্য ইত্যাদি। American Medical Association শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যে বিষয়গুলোর উল্লেখ করেছেন তা নিম্নরূপ-
ক) সুষম খাদ্য
খ) নিয়মিত ব্যায়াম ও পেশি ব্যবহৃত শারীরিক কাজ
গ) প্রয়োজনীয় বিশ্রাম
ঘ) সন্তোষজনক পেশা।
ঙ) আনন্দময় অবসর বিনোদনের উপায়
চ) প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা
শারীরিক সক্ষমতার গুরুত্ব
একজন ব্যক্তি শারীরিক দক্ষতা অর্জন করলে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে সুস্থ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে। যেমন
১। যে কোনো শারীরিক কার্যক্রম অনায়াসে করতে পারবে।
২। দৈব-দুর্ঘটনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
৩। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
৪। শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করলে মন ভালো থাকে, ফলে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারবে।
৫। যে কোনো ধরনের খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।