ফোড়া সারানোর ১৬টি উপায় এবং ভেষজ উপাদান ব্যবহারের নিয়ম

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে বিভিন্ন স্থানে ফোড়া (ইংরেজি: Boil) হতে পারে। অনেক সময় ফোড়া পাকতে চায় না বা সারতে চায় না;  সেক্ষেত্রে ঘরে বসেই ভেষজ উপায়ে সারিয়ে তোলা যায় এই যন্ত্রণাদায়ক, বিরক্তিকর ফোড়াকে। নিম্নে ফোড়া সারানোর ভেষজ ১৬টি উপায় বিভিন্ন ভেষজ উপাদান ব্যবহারের নিয়ম তুলে ধরা হলো।

ফোড়া চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উপাদান এবং সেসব ব্যবহারের নিয়ম

১. ফোড়ায় পেকে গিয়েছে বটে, কিন্তু ফাটছে না, আবার এও হয় পাকছেও না, যাকে বলে দরকচা মেরে আছে, এক্ষেত্রে মসুরের ডাল বেটে গরম করে। ফোড়ার উপর প্রলেপ দিলে হয় বসবে না হয় ফাটবে।

২. বেউড় বাঁশের (Bambusa spinosa) কাঁটা বেটে ফোড়ার চারধারে লাগালে ফোড়া পেকে যায়।

৩. ফোড়ায় যজ্ঞডুমুরের  ঘনসার ৪ গুণ জলে গুলে ন্যাকড়া বা তুলোয় লাগিয়ে বসিয়ে দিলে ওটা ফেটে পুজ-রক্ত বেরিয়ে যাবে। এইভাবে ব্যবহারে কয়েকদিনেই সেরে যাবে।

ঘনসার প্রস্তুতিবিধিঃ- ৫/৭ ইঞ্চি সরু ডাল সমেত কাঁচা পাতা ছেঁচে নিয়ে সিদ্ধ করে সেই জল ছেঁকে নিয়ে নরম জ্বালে আবার পাক করতে করতে ঘন হয়ে চিটে গুড়ের থেকেও একটু মোটা বা ঘন করে (লেই বা কাই) করে রাখতে হবে।

৪. বিষ ফোড়ার জ্বালা বা প্রদাহে জালযামানির পাতা বেটে ফোড়ার উপর প্রলেপ দিলে জ্বালা ও প্রদাহ দুয়েরই উপশম হয়; আবার কোনো কোনো অঞ্চলে আগুনে পোড়ায় এটার দই লাগিয়ে থাকেন সাময়িক জ্বালা নিবৃত্তির জন্য, কারণ ও ক্ষেত্রে শৈত্য প্রয়োগ যেমনি নিষিদ্ধ তেমনি উষ্ণবীর্য, শীতবিপাক স্নেহ ভিন্ন অন্য কিছু প্রয়োগও ঠিক নয়।

৫. ফোড়ায় তিলের তেলের সাথে নিসিন্দার পাতার রস মিশিয়ে পাক করলে (তেলের দ্বিগুণ রস) সেই তেল মাখলে ফোড়া পাকে, ফাটে ও শুকায়।

৬. পানের পাতার সোজা পিঠে ঘি (পুরাতন হলে ভাল হয়) মাখিয়ে ফোড়ার উপর বসিয়ে দিলে ফোড় পাকে ও ফাটে; আবার এইভাবে পানের উল্টোপিঠ ফোড়ায় বসালে ওটা পুজ টেনে বার করে শুকিয়ে দেয়; (অবশ্য একটু গরম করে নিতে হয়)। এখানে আর একটা কথা বলে রাখি পানের পাতায় পচন-নিবারক উদবায়ী তৈল আছে, যার জন্য ঐ ফোড়া বিসর্পিত হতে পারে না।

আরো পড়ুন:  মুখের অভ্যন্তরে নানাবিধ সমস্যার আটটি ঘরোয়া উপায়

৭. বিষ ফোঁড়ায়: টনটন করছে (সে যেখানেই হোক না কেন), এক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস করে একটু গরম করে লাগিয়ে দিলে ঐ বিষনিটা কেটে যায়।

৮. ফোড়া যদি  না পাকা না কাঁচা অবস্থা, যাকে বলা হয় দরকচা, এক্ষেত্রে পোড়া পটোলের শাঁস ন্যাকড়ায় লাগিয়ে ফোঁড়ার উপর বসিয়ে দিলে ওটা পেকে ফেটে যাবে।

৯. বিষ ফোড়ায়  রক্তচন্দন বা সাদা বা শ্বেত চন্দন ঘষা ও গোলমরিচ ঘষা মিশিয়ে ফোঁড়ায় লাগালে একদিনেই বিষুনি কেটে যায়।

১০. পোড়া হলুদের ছাই জলে গুলে সেটা লাগালে ওটা পাকে ও ফেটে যায়। আবার গুড়া লাগালে শীঘ্র শুকিয়ে যায়।

১১. ফোড়ায় অর্জুনের পাতা দিয়ে ঢাকা দিলে ওটা ফেটে যায়, তারপর ঐ পাতার রস দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।

১২. ফোড়ায়  অনেকে ভুগে থাকেন। অনেকে বলে থাকেন যে, রক্ত খারাপ হয়েছে, কিন্তু জেনে রাখা ভালো রক্ত দূষিত হলে আরও কঠিন রোগ আসে, যেমন কুন্ঠ ও বাতিরক্ত। কোনো কারণে রক্তবিকৃত হয়ে এই ফোড়া হয়, যদি এই বিকারকে সরিয়ে ফেলা যায় তাহলে ফোড়া আর হবে না, সেক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার মূল চূর্ণ এক থেকে দেড় গ্রাম মাত্রায় আধ কাপ গরম দুধের সঙ্গে সকালে ও বিকালে দুবার খেলে ঐ রক্তবিকারটা চলে যাবে, আর ফোড়াও হবে না। তবে প্রারম্ভিক মাত্রা কিন্তু এক গ্রামের বা ৭ থেকে ৮ রাতির বেশি নয়।

১৩. যাঁদের ফোড়া উঠতেও দেরি আবার পাকতেও দেরি বুঝতে হবে এখানে বায়ু, ও শ্লেষ্মা যোগ আছে। আবার এটা যদি কোমলস্থানে হয়, এক্ষেত্রে কুশ মূল বেটে সামান্য গরম করে ঐ ফোঁড়ায় প্রলেপ দিলে ওটা বসে যায়। তবে সেটা কোমল জায়গায় না হয়ে অন্য জায়গায় হলে সেখানে সেক দিতে হবে।

১৪. যে ফোড়া পাকেও না, বসেও না, যাকে চলতি কথায় বলে দড়কচা মেরে যাওয়া; এই ফোঁড়ায় কুরচির ছাল বেটে একটু গরম করে ফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিলে পেকে ফেটে যায়।

আরো পড়ুন:  শরীরে ঘা, ক্ষত এবং নখকুনির সমস্যায় ২৪টি ঘরোয়া ভেষজ চিকিৎসা

১৫. ফোড়ায়  ধুতরার পাতার রসের সঙ্গে সামান্য একটু গাওয়া ঘি মিশিয়ে প্রলেপ দিলে পেকে যায়।

১৬. ফোড়া (স্থান বিশেষের) বেয়াড়া জায়গা, সেখানে কমপ্রেস করতে নেই আবার করাও অসুবিধে, সেখানে বটের কচিপাতা বেঁটে লাগিয়ে দিতে পারলে ওটা বসে যায়, কারণ এসব জায়গায় পাকানো বা ফাটানো উচিত নয়।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ

১. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড ১ ও ২, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।

16 thoughts on “ফোড়া সারানোর ১৬টি উপায় এবং ভেষজ উপাদান ব্যবহারের নিয়ম”

    • আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। যদি নিয়ম মেনে ব্যবহার করেন তাহলে কোন সমস্যা হবার কথা না। এছাড়া সেটা যদি বিষফোড়া হয় তাহলে ৭ নং নিয়মে ব্যবহার করতে পারেন।

      Reply
  1. আপু ফোরায় মধু দিলে কি ফোরা পাকে।
    আমার মুখে ফোরা উঠছে

    Reply
  2. আমার রানের চিপায় বিষ ফোড়া হয়েছে।
    ৭ নং টিপ্স ব্যাবহার করলে কি ঠিক হয়ে যাবে??

    Reply
  3. মেয়েদের বগল ও গোপনাঙ্গে ফোঁড়া উঠলে কী করতে হবে?

    Reply
    • ফোঁড়ার ধরণ অনুযায়ী উপরের যেকোন নিয়ম মেনে প্রয়োগ করলে উপশম পাবেন।

      Reply
  4. আমার মুখে নাকের পাসে একটা ফোরা উঠেছে ৫-৭ দিন হয়ে গেছে এখন আমার কিহ করোনিয় আছে

    Reply
    • যদি বিষ ফোঁড়া হয় তাহলে ৭ নাম্বার নিয়ম প্রয়োগ করতে পারেন।

      Reply
  5. আমার মাথায় ছোট ছোট বিষ ফোঁড়া প্রায়ই দেখা যায় আমি কি করবো

    Reply
    • যদি নিয়মিত বা মাঝে মাঝে এমন হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

      Reply
  6. আমার মায়ের মুখে, মাথায় বেশ অনেক গুলি ফোঁড়া হয়েছে! ছোট ছোট। যন্ত্রণাদায়ক। রাতে ঘুমাতে পারছেন না। এর কারণ বলতে পারবেন? আর উপশম?

    Reply
  7. আমার পায়ে ফোড়া হয়েছি এবং ২ দিনের মাথায় এটা পেকে ফেটে গেছে। কিন্তু এতে বেশি পুজ বের হয় নাই।অল্প কিছু বের হওয়ার পর পানি বের হয়।এখন আর পুজ বের হয়না আর ওই জায়গা শক্ত হয়ে গেছে।কি করলে ভাল হবে?

    Reply
    • জায়গাটা শক্ত হলে এই নিয়ম বিশেষ উপকারে আসবে না। তবে ফোঁড়ার মুখ বাদ দিয়ে চারপাশে লাগাতে পারেন, যদি ফোঁড়া পুরোপুরি ভালো না হয়ে থাকে তাহলে এই ভেষজগুলি উপকারে আসবে।

      Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!