পেটের সমস্যা হলেই অনেকেই ঔষুধ খাওয়ার কথায় চিন্তা করে থাকে। কিন্তু আমরা যদি কিছু খাবারের মাধ্যমেই প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পারি তাহলে শরীর অনেকটাই সুস্থ হয়ে যাবে।
১. কদবেল বা কৎ বেল : পেটের সমস্যা যেমন পেট ফাপা, অজীর্ণ ও পেটের অন্য কোনো দোষ হলে পাতা ব্যবহৃত হয়। এছাড়া রক্ত আমাশয় হলে কতবেলের আঠা মধুসহ খেলে বিশেষ উপকার হয়। [১]
২. শাচী শাক : পেটের সমস্যা যেমন অপরিপাক, বদহজম প্রভৃতি কারণে অল্পবয়সী মেয়েদের যখন লাবণ্য চলে যায়। তখন এর ১ চামচ রসের সঙ্গে ৩ থেকে ৪ চামচ পানি এবং ২-৫ ফোটা মধু মিশিয়ে এ-বেলা ও-বেলা খেতে হবে। ফলে কয়েকদিনে লাবণ্য ফিরে আসবে। [২]
৩. ময়ূরশিখা গাছ: পাতলা দাস্ত এবং সেসঙ্গে ক্ষুধাহীনতা, অরুচি লক্ষণ থাকলে ১ গ্রাম মাত্রায় চূর্ণ পানিসহ সকালে ও বিকালে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। [২]
৪. কালমেঘ: একে আয়ুর্বেদীয় ভাষায় বলা হয় উদরাময় বা অতিসার, এই রোগটি জন্ম নেয় অগ্নিমান্দ্য থেকে। তার ওপর যারা খাওয়ার বাছবিচার না করে তার উপর যথেচ্ছভাবে খেয়ে যান, তাঁরাই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ রোগ যাঁর হয় তিনি জেনে রাখুন, এমন কোন রোগ নেই যা অগ্নিমান্দ্য থেকে হয় না, যদি তেমন কারণে উদরাময় হয় তবে তৎক্ষণাৎ সকালে বৈকালে চা-চামচের আধ চামচ করে জল মিশিয়ে খেতে হবে।
তবে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকার পেতে গেলে লবঙ্গ অল্প ভেজে ওটাকে গড়ো করে রাখতে হবে, তা থেকে একটিপ নস্যির মত নিয়ে ঐ কালমেঘের রসের সঙ্গে মিশিয়ে দু’বেলাই খেতে হবে। এইভাবে ৩/৪ দিন খাওয়ার পর থেকে উদরাময়টার উপশম হবে এবং ক্ষিধেও বেড়ে যাবে। [৩]
৫. শাহজিরা বা শাজিরা বা শাহিজিরা: শাজিরা পেট ফাঁপা ও বিষের দোষ নাশ করে। শাজিরা খেলে পাকস্থলী, লিভার অন্ত্র, মূত্রাশয় সবল হয় এবং পেটের কৃমি নষ্ট হয়।[৪]
৬. পাতি লেবু বা কাগজি লেবু: বর্ষাকালের বদহজম, বমি, পাতলা পায়খানা, অরুচি ও অখিদে ইত্যাদি রোগের মহৌষধ এই লেবু। মিষ্টি ও ঘিয়ে খাবার খেলে যে বদহজম হয় তার কষ্ট দূর করে লেবুর রস। লেবু কেটে একটু নুন মিশিয়ে চুষলে অজীর্ণ সেরে যায়। লেবু আধখানা করে চিরে তার মধ্যে চিনি মিশিয়ে চুষলেও খাবার হজম না হওয়ার জন্যে যে বমি তা বন্ধ হয়। দু চা চামচ লেবুর রস ও দু চা চামচ আদার রস মিশিয়ে তাতে একটু চিনি দিয়ে খেলে বদহজমজনিত সব রকমের পেট ব্যথা সারে। দুধ হজম না হওয়ার জন্যে যদি পেট গড়গড় করে তাহলে সকালে এক গ্লাস জলে একটি পাতিলেবুর রস গেলে নিয়ে খালি পেটে পান করুন আরাম পাবেন। একটা সুপক্ক পাতিলেবু আঁচে গরম করে নিন, রস বের করুন। এতে নুন আর চিনি মিশিয়ে এই লেবুর রস পান করলে পিত্তের জন্যে যে বমি হয় সেই বমি, পুরান পেটের অসুখ ও আমাশা সারে। লেবু আর পেঁয়াজের রস ঠাণ্ডা জলে গুলে খেলে বদহজমের জন্যে যে পেটর অসুখ তাতে উপকার হয়। এমনকী কলেরাতেও উপকার পাওয়া যায়। [৪]
৭. ছোলা (Cicer arietinum): বয়স হয়েছে, সকালে দাস্ত অপরিষ্কারে অস্বস্তি, পেটে বায়ু, রাত্রে যেটাই খাওয়া যাক না কেন, কোনোটাতেই এসব অসুবিধে যায় না, সেক্ষেত্রে ছোলার বেসন গুলে ওমলেটের মতো তৈরী করে রাত্রির খেতে হবে, তবে মুখরোচক ও গুনোৎকর্ষ করার জন্য দুটো যোয়ান ও পরিমাণ মতো একটু বিট লবণ মিশিয়ে ওটা তৈরী করতে হবে; কিন্তু তরকারী বেশী খাবেন না। [৩]
৮. আদা: আদা মল পরিষ্কার করে, ভারী, উষ্ণ, খিদে বাড়ায়, তীক্ষ্ণ, পাকে মধুর, রুক্ষ, বায়ু ও কফ দূর করে। শরীরের ভেতরের বায়ু ও আমাশায় সারিয়ে তোলে। [৪] আদা বিরেচক বা মল পরিষ্কার করে ও পাচক বা খাবার হজম করায়। পাকস্থলী ও লিভারের শক্তি ও স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেয়। মস্তিষ্কের বা ব্রেনের দূষিত রস, পেটের পুরানো বদ্ধমল ও পাকস্থলীর কৃমি নিসারণ করে, অরুচি নাশ করে। [৩]
৯. মূলা: দুপুর বা রাতে গুরু-পাক ভোজনের পরে মুলার রসে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে পেটের ব্যথা ও গ্যাস কমে যায়। [৪]
১০. জাম: যাদের জ্বরের সঙ্গে পেটের দোষ থাকে, তারা এই পাতার রস ২ থেকে ৩ চা চামচ একটু গরম করে ছোঁকে নিয়ে খাবেন; উপকার নিশ্চয়ই পাবেন। [৩]
সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্রঃ
১. অবনীভূষণ ঠাকুর: ‘ভেষজ উদ্ভিদ ও লোকজ ব্যবহার’, অবসর প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা।
২. ড. সামসুদ্দিন আহমদ: ওষুধি উদ্ভিদ (পরিচিতি, উপযোগিতা ও ব্যবহার), দিব্যপ্রকাশ, বাংলাবাজার ঢাকা।
৩. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি , আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
৪. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।