ফ্রিজ ব্যবহার করার সঠিক ৩০টি নিয়ম

ফ্রিজ একটা ঘরে থাকলে গরমকে আর তোয়াক্কা করে না কেউ। গরমের সময় যে সমস্ত খাদ্যবস্তু এবেলা রান্না করে রাখলে ওবেলা খারাপ হয়ে যায়, ফ্রীজে ঢুকিয়ে তাকে কম করেও ৭ দিন সুরক্ষিত রাখা চলে। ফ্রীজে দুধ, ডিম, অতিরিক্ত খাদ্যবস্তু, ফল, কাঁচা তরি-তারকারি সব ঠিক থাকবে বেশ কয়েক দিন । এছাড়া ঠান্ডা পানি, ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রীম, বরফ সবই পাওয়া যায়।

ফ্রিজের ধর্ম হলো বস্তুকে ঠান্ডা রাখা। তার এই ধর্ম উৎপন্ন হয় অ্যামোনিয়া, ইথাইল ক্লোরাইড ইত্যাদি রাসায়নিক বস্তুর কার্যকারণে।

ফ্রিজ সাধারণতঃ দু’ধরণের হয় (১) কমপ্রেসার প্রণালীর আর (২) অ্যাবজরপসান প্রণালীর। প্রথম প্রণালীটিই এদেশে বেশী প্রচলিত।

কমপ্রেসার ফ্রিজে কমপ্রেসার, এভাপোরেটর, কনডেন্সার ইত্যাদি যন্ত্রাংশ লাগানো থাকে। যার সাহায্যে হিম উৎপন্ন প্রক্রিয়া নিরন্তর চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে সমানভাবে হিমপ্রবাহ বইয়ে চলে।

কমপ্রেসার ইত্যাদি যন্ত্রাংশ ফ্রীজের পিছন দিকে ফিট করা থাকে। আর থাকে থার্মোস্টেট। যা তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আধুনিক যুগে সবই ঠিক থাকে যদি আপনার ফ্রিজ ঠিক থাকে। তাই ফ্রিজকে ঠিকঠাক রাখার জন্যে কয়েকটা কথা জেনে রাখা ভালো।

 ১. ফ্রিজকে কখনোই দেয়াল ঘেঁষে রাখবেন না। কম করেও ১৫-২০ সেন্টিমিটার দূরে রাখবেন। যাতে ফ্রীজের পিছন দিয়ে অবাধে বাতাস চলাচল করতে পারে।

২. ফ্রিজের সামনের অংশ যাতে সহজে খোলা-বন্ধ করতে পারেন সেই মতো ফ্রীজের সামনের দিকে একটু উঁচু আর পিছন দিকে সামান্য নীচু করে বসাবেন।

৩. ফ্রিজের ভিতরটা ৩ মাসে একবার করে পরিষ্কার করবেন। না হলে খাদ্যবস্তু এমনকি পানিতেও দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।  

৪. ফ্রিজ কিনেই তার মধ্যে খাদ্যবস্তু রাখতে আরম্ভ করবেন না। প্রথমে শূন্য অবস্থাতেই ঘন্টাখানেক চালিয়ে রাখুন।

৫. আইসক্রীম জমাতে চান, কি মাংস-মাছ রাখতে চান তো ফ্রীজারে রাখুন। ফ্রীজারের নীচে যে ‘চিল-ট্রে’ থাকে তার তাপাংক খুবই কম থাকে অন্যান্য অংশের চেয়ে।

আরো পড়ুন:  বাঁশের কাজ হচ্ছে বাঁশ থেকে স্বতন্ত্র বস্তু তৈরি করার ক্রিয়াকলাপ বা দক্ষতা

৬. শরবতের বোতল বা কোল্ড ড্রিংঙ্কের বোতল তাড়াতাড়ি ঠান্ডা করতে চাইলে ঐ চিল-ট্রেতেই রাখবেন। কিন্তু আধঘন্টার বেশি নয়। না হলে বোতলের তরল পদার্থ প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে যাবে।

৭. ফ্রীজের ডালা বন্ধ করে দেখে নেবেন ঠিক এঁটে বসেছে কিনা।

৮. ফ্রীজে কান পাতলে একটা যান্ত্রিক শব্দ শোনা যাবে। ওটা কমপ্রেসারের শব্দ। যদি আরও কোনো শব্দ শোনেন তবে দেরি না করে মিস্ত্রীকে ডাকবেন।

৯. রান্না করা অথবা কাঁচা যে খাদ্যবস্তু ফ্রিজে রাখবেন, প্রত্যেকটিই ঢাকা দিয়ে রাখবেন। যেন সবার উপরে পলিথিনের চাদর বিছিয়ে দেবেন না। এতে খাদ্যবস্তু প্রয়োজন মতো ঠান্ডা না পেয়ে খারাপ হয়ে যেতে পারে। পাতলা কাগজ ব্যবহার করবেন।

১০. কাঁচা তরি-তরকারি কোনো পলিথিনের প্যাকেটে ভরে রাখবেন। তাহলে সহজে শুকোবে না আর নরমও থাকবে।

১১. কলা, তরমুজ, খরমুজ, ফুটি ইত্যাদি ফল ফ্রীজে রাখা ঠিক নয়।

১২. কোন কিছুই গরম অবস্থায় ফ্রিজে রাখবেন না। আগে ঠান্ডা করে পরে রাখবেন। একগাদা জিনিস যেন ফ্রিজের মধ্যে ঠেসে দেবেন না।

১৩. তরল পদার্থও ঢেকে রাখবেন, না হলে বাষ্পকণা জমে যাবে তাতে।

১৪. কোনো রকম পচা জিনিস (ফল ইত্যাদি) ভুলেও ফ্রীজে রাখবেন না।

১৫. কাঁচা অবস্থায় মাছ-মাংস রাখতে হলে শুকনো কাপড়ে সেগুলির গা বেশ করে মুছে তবেই রাখবেন।

১৬. তিন মাসে একবার ফ্রিজ পরিস্কার করার কথা আগেই বলেছি ঐ দিন ফ্রিজের যাবতীয় কিছু বাইরে বার করে ডিটারজেন্ট পাউডার মেশানো পানিতে আগাগোড়া ভিতর-বাইর ধুয়ে ফেলুন। তারপর ঘন্টাখানেক খালি অবস্থাতেই চালিয়ে রাখুন। এরপর খাদ্যবস্তু রাখবেন।

১৭. প্রায়ই ভোল্টেজে ওঠা-নামা হয়। এর ফলে ফ্রীজের কল-কব্জাতেও তার প্রতিক্রিয়ার ছাপ পড়তে বাধ্য। তাই বেশীদিন ফ্রিজকে টেকসই করে রাখতে হলে স্টেবিলাইজার ব্যবহার করুন।

১৮. ভালো বা খারাপ গন্ধ ছড়ায় এমন বস্তু কদাচ ফ্রিজে রাখবেন না। রাখলে সব জিনিসেই গন্ধ ছড়িয়ে দেবে।

আরো পড়ুন:  রান্না ও খাবার সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ৬৫টি ঘরোয়া টিপস

১৯. রান্না করা ভােজ্যবস্তু, মাছ-মাংস-ডালের সুপ, ফলের তৈরী ফিরণি, ক্রীম, নােনতা খাবার ইত্যাদি ফ্রীজে রেখে একবার বার করলে আর ফিরে রাখতে যাবেন না। কারণ বার করার সঙ্গে সঙ্গে এতে বাইরের গরম হাওয়া লেগে যায়, পুনরায় ফ্রীজের ঠান্ডায় ঢােকালে তাপমাত্রার হেরফেরের জন্য এরা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই পরিমাণ মতােই বার করবেন। আইসক্রীম বা শরবও এভাবে বার করলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।

২০. খেয়াল করবেন, ফ্রিজের ভিতরকার তাপমাত্রা যেন শূন্য ডিগ্রীর চেয়ে কমই থাকে উপরে না ওঠে।

২১. ফ্রিজের তাপমাত্রা যদি ঠিক থাকে আর সামনের ডালা যদি ঠিক মতো বন্ধ থাকে ও কম খোলা যায় তবে লোডশেডিং অথবা বিনা বিদ্যুৎ প্রবাহেই অন্ততঃ দুটি দিন খাদ্যবস্তু সুরক্ষিত থাকতে পারে।

২২. যদি দেখেন খাদ্যবস্তু ঠিকমতো ঠান্ডা হচ্ছে না তবে আগে থার্মোস্টেটকে পরীক্ষা করুন সঠিক কার্যকরী রয়েছে কিনা। অনেক সময় ফ্রীজারে বেশী বরফ জমে গেলেও ঠান্ডাভাব কমে যায়। কনডেন্সরের নল বুজে গিয়ে ফিয়োন গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েই এটা হয়। এমনটি হলে সব বস্তু নামিয়ে নিয়ে ফ্রীজ অচল করে, কুসুম গরম পানি সামান্য পরিমানে ফ্রীজে ঢেলে রেখে দিন কিছু সময়ের মধ্যে নলের মুখ খুলে যাবে। যদি তাতেও কাজ না হয় তবে মিস্ত্রীকে ডাকবেন।

২৩. ফ্রিজ রাখবেন ছায়াচ্ছন্ন শীতল জায়গায়। রোদ লাগতে পারে এমন জায়গায় রাখবেন না।

২৪. ফ্রিজের পায়ায় কাঠের ব্লক কিম্বা রবারের চাকতি লাগাবেন। তাতে কমপ্রেসারের শব্দ কম শোনা যাবে। আর যদি কোনো অজ্ঞাত কারণে কারেন্ট লীক করে থাকে তবে তার হাত থেকেও কিছুটা রক্ষা পাওয়া যাবে।

২৫. ফ্রিজ সব সময় ২০০ ভোল্টেজ কারেন্টে চালাবেন এর কম বা বেশী হলে কল-কব্জায় চাপ পড়ে।

২৬. ফ্রিজের দরজা কখনো আধা মিনিটের বেশী খুলে রাখবেন না। নতুবা বাইরের গরম হাওয়া অধিক পরিমাণে প্রবেশ করে ভিতরের তাপমাত্রাকে কমিয়ে খাদ্যবস্তুর উপর প্রভাব ফেলবে।

আরো পড়ুন:  বাঁশের কাজ হচ্ছে বাঁশ থেকে স্বতন্ত্র বস্তু তৈরি করার ক্রিয়াকলাপ বা দক্ষতা

২৭. পানির, শরবতের বা দুধের বোতল কখনো পুরো ভর্তি করবেন না। আর মাথার ছিপি যেন আঁট হয়ে আঁটা থাকে।

২৮. বরফের ট্রে থেকে বরফ সহজে বার করার সরল উপায় হলো ট্রেটা সাধারণ পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন বা কলের তলায় নিয়ে গিয়ে ওর উপরে পানি ছড়ান ।

২৯. ফ্রিজকে স্থানান্তরিত করতে চাইলে কখনো আড় করবেন না। এতে তার পাইপে তেল চলাচলের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে কার্যকরী শক্তিহ্রাস পেয়ে যেতে পারে।

৩০. ফ্রিজে মাখন, ডিম, দুধ, শরবত ইত্যাদি রাখবার জন্য নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করা আছে। সব জিনিসের প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা কখনো সমান হয় না। তাই এই ব্যবস্থা; এর অন্যথা করলে জিনিসগুলি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নির্দেশ অনুসারে কাজ করবেন।

তথ্যসূত্র:

১. সেলিমা আলিম; দেশি ও বিদেশি রান্না; গ্রন্থনীড়, ঢাকা; জুন, ১৯৯৪; পৃষ্ঠা ১৭-২০।

1 thought on “ফ্রিজ ব্যবহার করার সঠিক ৩০টি নিয়ম”

Leave a Comment

error: Content is protected !!