জলাশয়ে বাগান করার ইচ্ছা অনেকের থাকে কিন্তু নিয়ম না জানা থাকায় বাগানের উদ্ভিদ দ্রুত মরে যায়। বাগানের শোভাবর্ধনে এবং তার নান্দনিকতা বাড়ানোর জন্য জলাশয়ে বাগান বা জল-বাগিচার গুরত্ব অনেক। খুব কম খরচে জলের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ফুল বাগিচাকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা যায়।
যে কোনো উদ্যানের মাঝখানে জলের একটি পরিপূণ আধার থাকলে গোটা পরিবেশটা পাল্টে যাবে। যেমন আপনারা নিজেই কল্পনা করতে পারেন- জ্যোৎস্না রাতে চাঁদের আলোয় তারা ভরা অসীম আকাশ যখন এই জলাশয়ের মধ্যে প্রতিফলিত হয়ে, বাগানকে দেখতে সেই সময় কতটা মোহময়ী লাগবে। তবে এজন্য বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ, পদ্ম (lotus), শামুক (water lily) প্রভৃতির বাহারী প্রজাতি বাগানের আকার অনুযায়ী নির্বাচন করেতে হবে। এরপরে জল বাগিচাকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার জন্য লাগাতে হবে।
সাধারণতঃ বেশীর ভাগ জাতের এইসব জলজ উদ্ভিদ ৩ ফুটের বেশী গভীর জল পছন্দ করে না। এরূপ জলাশয়ে বাগান পাড়ে ফার্ণ, হোগলা (sedge) প্রভৃতি গাছ লাগান যেতে পারে। এছাড়া জলপ্রিয় অন্যান্য বড়গাছ, বাঁশঝাড়, বিভিন্ন ধরনের গুল্ম (shrubs), পাম, প্যাণ্ডসাস, প্রভৃতি গাছকে এমনভাবে সাজিয়ে লাগানো উচিত, যাতে অপেক্ষাকৃত লম্বা গাছগুলি বেটে জাতের গাছকে ছাতার মত রক্ষা করে ও আকর্ষণীয় পটভূমির সষ্টি করতে পারে।
২০ ফুট x ১২ ফুট মাপের ছোট জলাশয় নির্মাণ করে তার চারধারে সিমেন্টের পাকা গাঁথুনি দিতে হবে। আড়াই ফুট– সাড়ে তিন ফুট গভীরের বেশী এইসব জলাশয় কখনই করা উচিত হবে না। এরূপ জলাশয়ে জল ঢোকানো বা বের করার নীচে একটি Inflow এবং outlow পাইপের ব্যবস্থা করতে হবে।
বড় গাছের থেকে দূরে এই ধরনের চৌবাচ্চা বা জলাশয় নির্মাণ করা ভাল। এতে শিকড়ের চাপে সিমেন্টের দেওয়ালে ফাট ধরবে না। যাদের পক্ষে সম্ভব, তার লিলিপুল তৈরী করে বাগানের নান্দনিক শোভা আরো বাড়াতে পারেন। এরূপ জলাশয়ে পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেটের কেলাস মিশিয়ে জলের -দূষিত পদার্থ থেকে জলকে মুক্ত রাখতে হবে। এতে জলের এবং জলাশয়ের শোধন হবে এবং পরে সম্পূর্ণ জলকে outflow পাইপের সাহায্যে বের করে। পুনরায় পরিচ্ছন্ন জল ঢোকান যাবে।
বর্ষার শুরুতে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ লাগাতে হবে। তার আগে জল বের করে জলাধারের মেঝেতে ৯ ইঞ্চি পুরু; কম্পোষ্ট সারের মিশ্রণ ( ৬ ভাগ ৫ ভাগ দোঁয়াশ মাটি এবং ৬ ভাগের ১ ভাগ খামার সার) ভালভাবে বিছিয়ে দিতে হবে। হাড়গড়া সারও কিছুটা দেওয়া যেতে পারে— প্রতি বর্গগজের জমিতে ৪ আউন্স হিসাবে।
এরপর জলজ উদ্ভিদের চারা সরাসরি জলাধারের মাটিতে পুঁতলে সেগুলি ভালভাবে শিকড় ছাড়তে পারবে এবং সতেজে বাড়বে। জলাধারটি এবার গাছের বৃদ্ধি অনুযায়ী একেবারে জলে ভর্তি না করে ধাপে ধাপে জল inflow পাইপের সাহায্যে ঢোকাতে হবে।
রঙবাহারী শালুক (water lily Nelumbium), পদ্ম, নিফ ফিয়া লোটাস (N. Lotus), অডোরাটা (N. odorata), জল লিলি (Nymphea), নিমফিয়া স্টেলেটা (N. stellata), নিমফিয়া সালফরিয়া (N. sulphurea) প্রভৃতি। জলজ উদ্ভিদ (aquatics) জলাধারের ভেতর লাগানো যাবে।
পাড়ের উপযুক্ত গাছগুলির মধ্যে এলিস মা (Alisma), একোৱাস, ক্যালামাস (Acorus calamus), সাইপেরাস অল টারনিফোলিয়াস (Cyperus alternifalius), নিপা ফুটেসেন্স (Nipa fruitescens), স্যাজিটারিয়া স্যাজিটেফোলিয়া (Sagittaria Sagittaefolia) প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
এইসব জলজ উদ্ভিদ স্বল্প পরিচর্যাতেই বেড়ে ওঠে। গাছের বৃদ্ধি খুব বেশী হলে বা গাছেদের মধ্যে জড়াজড়ি হলে, সেগুলির জট ছাড়িয়ে দিতে হবে বা পাতলা করে দিতে হবে। ২-৩ বছর অন্তর এরূপ পরিচর্যা করলেই চলবে। এই সব জলাশয়ে মশার উপদ্রব যাতে বেশী না হয় সেজন্য কিছু মাছ ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে সোনালী বা লাল মাছ।
এক্ষেত্রে জলাশয়ে বাগান শোভা বৃদ্ধি করবে। পাথরের দু-একটা অসম চাঁই জলাশয় মাঝখানে রেখে দিলে এইসব মাছেদের অতিরিক্ত রক্ষাস্থল হবে এবং স্বচ্ছ জলে জল-বাগানের নান্দনিক শোভা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া জল-বাগিচায় শামুক ছাড়লে জল বিশুদ্ধ থাকবে।
তথ্যসূত্রঃ
১. বালাইলাল জানা: ক্যাকটাস ও ফুলচাষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তকপর্ষৎ, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ মার্চ ১৯৮৮, পৃষ্ঠা, ১৬০-১৬২।
বি. দ্র: নিবন্ধে ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া। আলোকচিত্রীর নাম: Chris Light
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।