দই হলো পঞ্চামৃতের মধ্যে একটি অমৃত। পঞ্চামৃতের পাঁচটি উপকরণ হলো দুধ, দই, ঘি, মধু ও চিনি। দুধ জমিয়ে দই তৈরি হয় ! এটি রুচিকর ও অগ্নিদীপন অর্থাৎ রুচি বৃদ্ধি করে আর সেই সঙ্গে খিদেও বাড়িয়ে দেয়। অনেকে মনে করেন দুধের চেয়ে দইয়ের উপকারিতা বেশি। বাড়িতে পাতা টাটকা দইয়ে যা বেশি টকও নয়, আবার যাতে ঝাঁঝও নেই গুণের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ। এটি আবার পাঁচ রকমের হতে পারে মন্দ, স্বাদু, স্বা, অন্ন আর অত্য।
আয়ুর্বেদের মতে এটি খিদে বাড়ায়, স্নিগ্ধ, কষায়, ভারী, পাকে অন্ন, মলরোধ করে, পিত্ত, রক্তবিকার, রক্তপিত্ত, ফোলা, মেদ এবং কফ বৃদ্ধি করে। মূত্রকৃচ্ছ্র বা প্রস্রাব কম হওয়া, সর্দি, ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা বিষম জ্বর, পেটের অসুখ এবং রোগা হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উপকার দেয় দুই বল ও বীর্য বাড়িয়ে দেয়।
চরকের মতে, এটি রুচিকর, দীপক বা উদ্দীপিত করে, বীর্য বৃদ্ধি করে বা বৃষ্য, স্নিগ্ধ, বলবর্ধক, বিপাকে অন্ন, গরম, পুষ্টিদায়ক, সর্দি, পেটের অসুখ, শীত, ম্যালেরিয়া, অরুচি, মূত্রকৃচ্ছ্র বা প্রস্রাব কম হওয়া এবং কৃশতায় রোগ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ উপকারী।
দইয়ের ওপরে জমা ঘন সর বা মালাই-এরও অনেক গুণ আছে যেমন আছে দুই থেকে বেরোনো জলেরও।
চিনি মেশানো টাটকা দই সর্বশ্রেষ্ঠ। চিনি মেশানোর জন্যে অন্নতা কমে যায়-হজমও হয় তাড়াতাড়ি। এছাড়া গুড় মিশিয়ে খাওয়াও ভাল যদিও তা হজম করতে একটু বেশি সময় লাগে।
টক দই কাপড় দিয়ে ছেকে বা জল ঝরিয়ে নিয়ে তাতে পেষা চিনি, পেষা এলাচের গুড়া ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি হয় গুজরাটের প্রসিদ্ধ খাবার শ্রীখণ্ড। শ্রীখণ্ড খেতে অতি মধুর এবং শ্রীখণ্ডের আছে দাহ, পিত্ত আর তৃষা নিবারণের গুণ।
সুস্থ থাকতে দইয়ের প্রয়োগ:
১. মধু মিশিয়ে খাওয়া ভাল। মুগের ডালের সঙ্গে দই খেলে অনেক অসুখের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
২. দইয়ের সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খেলে বাত ব্যাধির উপশম হয় এবং কফ বৃদ্ধি পাওয়াও কমে যায়।
৩. দইয়ের সঙ্গে আমলকী চূর্ণ মিশিয়ে খেলে রক্ত এবং পিত্ত রোগের প্রকোপ কমে যায়।
৪. দইয়ের সঙ্গে চিনি, গুড় বা ঘি মিশিয়ে খেলে অনেক অসুখের আক্রমণ রোধ করা যায়।
৫. শুধু দই না খেয়ে মুগ বা অড়হর ডালের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
৬. সর তুলে নিয়ে যে দই পাতা হয় সেটা খেলে পেটের অসুখ সারে।
৭. দইয়ের ওপরের মোটা সরের বা মালাইয়ের আছে মৈথুন শক্তি বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা।
৮. চিনি মিশিয়ে খেলে তৃষ্ণা, পিত্ত, রক্তবিকার, রক্তপিত্ত, দাহ এই সব অসুখের উপশম হয়।
৯. দইয়ে গোলমরিচের গুড়া চার গুড় মিশিয়ে খেলে সর্দি সেরে যায়।
১০. দইয়ের জল মল নিঃসারণ করে কিন্তু ছানার মতো করে জল ছেকে নিলে মল রোধক করে।
১১. অনেকের মতে এইভাবে জল ঝরানো দই অল্প নুন ও একটু চিনি মিশিয়ে খেলে তা রসায়নের কাজ করে অর্থাৎ শরীরের সপ্ত ধাতু মেদ মজ্জা, মাংস, রক্ত, বীর্য, অস্থি ও রসে পুষ্ট করে।
১২. অনেকে বলেন গোলমরিচের মিশিয়ে খেলে ত্রিদোষনাশক অথাৎ কফ-বাত-পিত্তের প্রকোপ নাশ করে।
১৩. আমলকীর রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বদ্ধ মল নিঃসৃত হয়।
১৪. গুড় মেশানো দই বায়ু নাশ করে এবং শরীরের পুষ্টি করে।
১৫. মুগের পাতলা জুসের সঙ্গে খেলে বায়ু ও রক্ত প্রকোপ বিনষ্ট হয়।
কেউ কেউ বলেন খাওয়ার সময় প্রথম গ্রাসের সঙ্গে দই খেলে পাচক রস অথাৎ খাবার হজম করার পক্ষে উপযুক্ত রস ঠিকমতো বেরোয় এবং খাওয়ার শেষে খাওয়া ভাল নয়। ভারতের অনেক কাজের লোকেরাই খাওয়ার প্রথম দিকেই দই খান। কিন্তু বাঙালিরা খাওয়ার শেষ দিকে বাড়িতে রেজকার ডাল, ভাত, তরকারি ইত্যাদি সাধারণ খাবার খাওয়ার পর কিংবা ভোজবাড়িতে লুচি, কচুরি, বিরিয়ানি ইত্যাদি ঘৃতপক্ক গুরুপাক খাওয়ার পর একেবারে শেষ পাতেই দই খান। ভোজ বাড়ির দই সেটা বাজারের মিষ্টি দই কাড়ি পাতা টাটকা টক দই নয় । তবু এতে সাধারণত কোনো অনিষ্ট বা হজমে গরমিল হতে দেখা যায় না বরং মিশ্র আহারের পর এবং গুরুপাক আহারের পর দই খেলে তা মিষ্টি বা টক যাইহোক খাবার সহজেই হজম হয়।
তথ্যসূত্রঃ
১. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা, ৩১-৩৩।
বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Ami bangali
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।