— নাট্যরূপ দোলন প্রভা
হবু রাজা, রাজা হিসাবে নিষ্ঠুর ছিলেন না। আবার রাজ্যের মানুষের যে খুব খোঁজ রাখতেন তাওনা। তবে প্রায় নতুন নতুন সমস্যা রাজদরবারে হাজির করেতেন আর সেই সমস্যার সমাধান করতে মন্ত্রীদেরও আধা জল খেয়ে নামতে হত। রাজ্যের মানুষগুলো মোটামুটি শান্তিতেই থাকত। রাজ্যের পরিবেশ মনোরম ছিল। মানুষগুলো পরিবেশের সাথে নিজেদের সুখ দুঃখ নিয়ে কাঁদা হয়ে মিশে থাকত।
[সকালে পণ্ডিত তাঁর পূজার কাজ শেষ করে রাজ দরবারের দিকে যাচ্ছেন এমন সময় শূধ্ররা তাদের নিজেদের কাজে যাচ্ছিলেন, ছায়া দেখে পণ্ডিতের করুণ অবস্থা। আবার স্নান করা আবার পুজ করা বরই ঝামেলায় পরে যায় পণ্ডিত।]
[মন্ত্রী কিছুক্ষণ মঞ্চের এদিক ওদিক হাঁটলেন, হঠাৎ পণ্ডিতের দিকে চোখ পরে,পণ্ডিত তখন একবার পুস্তকের দিকে দেখে আরেকবার উপরের দিকে তাকিয়ে কি যেন বিড় বিড় করে বলে। মন্ত্রী কিছুক্ষণ বুঝার চেষ্টা করেও যখন পারল না তখন বলে উঠল]
মন্ত্রীঃ কী ব্যাপার পণ্ডিত এমনিতেই দেরি করে এসেছেন তারপর আবার বিড় বিড় করে কি বলছন।
পণ্ডিত (চমকিয়া উঠিল) আগ্যে হুজুর, আজকের দিন কেমন যাবে তাই ভাবছিলাম।
মন্ত্রীঃ হু। তবে নিজের হাত নিজেই দেখলে হবে।
পণ্ডিতঃ আগ্যে হুজুর।
মন্ত্রীঃ ঠিক আছে, আমার হাত দেখে বলুন তো।
পণ্ডিত (মন্ত্রীর হাত ভালভাবে দেখতে থাকে) মোটামুটি ভালই মনে হচ্ছে।
তবে… রাজ্যের যে অবস্থা, কাজের চাপ পড়তে পারে।
মন্ত্রীঃ এ্যা… আবারও কাজের চাপ।
[এরি মধ্যে বিরক্ত মন ও চিন্তিত অবস্থায় মঞ্চে রাজার প্রবেশ।]
মন্ত্রী ও পণ্ডিত বলে উঠবে, ‘মহারাজে জয় হোক’
[এদিক ওদিক তাকিয়ে সিংহাসনে রাজা বসলেন। মন্ত্রী ও পণ্ডিত দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কুঁচকায়]
মন্ত্রী বলে উঠেঃ আজ রাজা মশাইকে বরই চিন্তিত মনে হচ্ছে।রাজাঃ শুন গো গবু রায়, কাল সারা রাত ভেবেছি একটা কথা। মন্ত্রীঃ কি কথা মহারাজ? রাজাঃ আছা ভাবেন তো কত সুন্দর এই ধরণী। গাছে গাছে ফুটে ফুল, আকাশে ওড়ে পাখি, ফুলে ফুলে বসে প্রজাপতিরা, আরো কত কী।মন্ত্রীঃ আপনার ভাবনা ঠিক।রাজাঃ কিন্তু আমার ভাবনা অন্য বিষয় নিয়ে। এই ধরণীতে পা ফেলতেই ধরণীর বুকে পড়ে থাকা মলিন ধূলি কেন লাগিবে পায়?মন্ত্রীঃ তাই তো, চিন্তার বিষয়, এটা তো আগে ভাবিনি।রাজাঃ ভাবনি, মাথায় কি আসেনি কোনো দিন এই চিন্তা।মন্ত্রীঃ মহারাজ, জগৎতের এতো পরিবর্তন ঘটে দিনে রাতে আর ধুলির চিন্তা মাথায় কি ঢুকে। [ বলেই মৃদু স্বরে হাসে আর পণ্ডিতের দিকে তাকায়]রাজাঃ (ভ্রু কুঁচকে)আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন। এমন কি চিন্তা করেন যে আমার চিন্তা আপনার কাছে বরই তুচ্ছ লাগে।মন্ত্রীঃ না মানে ইয়ে।রাজাঃ পণ্ডিতমশাই, আপনি কি মনে করেন।পণ্ডিতঃ হুজুর আপনার চিন্তাটা ঠিক। তবে……রাজাঃ তবে তবেকি।পণ্ডিতঃ হুজুর আপনার মাথায় যে চিন্তা এসেছে আমিও আগে ভাবিনি তা এভাবে।রাজাঃ তা কেন ভাবিবেন। আমি তো খুলেছি ভজনালয় ভাবনা কি? আরাম করে ভোজন তো হচ্ছে মাইনে তো পাচ্ছেন।
[পণ্ডিত ও মন্ত্রী অন্যমনস্ক হয়ে কথা শুনে ভাবে কোন সুনাম করছে রাজা তাই ভেবে উত্তর করে]
পণ্ডিত ও মন্ত্রীঃ আগ্যে হুজুর। অ্যা………………।
রাজাঃ আমি শুধু শুধু বেতন দিয়া পুষিতেছি আপনাদের আমার দরবারে। রাজার কোন কাজেই মন নেই আপনাদের।
মন্ত্রীঃ মহারাজ ক্ষমা করবেন, আপনার চিন্তায় আমরা চিন্তিত। আপনি আমাদের যা বলবেন আমরা তাই করব।
[রাজা মুখের বিরক্তি ভাব কিছুটা দূর করে]
রাজাঃ আমার রাজ্যের মলিন ধূলি আমারই পায়ে লাগে। আমার রাজ্যে একি অনাসৃষ্টি! শীঘ্র করতে হবে এর প্রতিকার । নইলে রক্ষা নাই কারো।
[মন্ত্রী চিন্তিত হয়ে, ভয়ে ঘামতে শুরু করে] মৃদু স্বরে বলে…
আগ্যে মহারাজ আপনার আদেশ নিলাম মাথা পেতে
*[মন্ত্রী, পণ্ডিত প্রস্থান করল। রাজা কপালে হাত দিয়ে চিন্তা করতে প্রথম দৃশ্য শেষ]
[চিন্তিত পণ্ডিত বাড়িতে প্রবেশ। ধীরে ধীরে বসে পড়ে।
পণ্ডিতের বৌ পূজার থালা হাতে মঞ্চে প্রবেশ। চিন্তিত পণ্ডিতকে দেখে কাছে গিয়ে বসে। তারপর কৌতূহলী মুখ নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে]
পণ্ডিত বৌঃ কি গো আপনার বদনে দেখি আষাঢ়ের মেঘ নেমেছে। পণ্ডিতঃ আষাঢ়ের মেঘ নই, মাথায় আকাশ পড়েছে। পণ্ডিতের বৌঃ সেকি কথা। আকাশ পড়বে তাও আপনার মাথায়। পণ্ডিতঃ আছো তো সুখে তাই বুলি ফুটিয়াছে মুখে। [বিরক্তি] পণ্ডিতের বৌঃ সুখে, আপনাদের মত সুখে নাই, বিনা কাজে রাজা দিয়ে থাকেন আপনাদের মাইনে, কই এমনি এমনি আমি তো পাইনা খেতে। পণ্ডিতঃ বিনা কাজে মাইনে তা তোমারি মুখে সাজে, আমি যে বুদ্ধি বেচে খাই তা দেখ না চোক্ষে। পণ্ডিতের বৌঃ আপনারও বুদ্ধি বেচে… তাহলে শুনি কি কারণে আকাশ মাথায় পড়ল। পণ্ডিতঃ তুমি শুনলে আমার মতই বিষণ হবে। পণ্ডিত বৌঃ কি হয়েছে বলুন দিখি।
[পণ্ডিত দীর্ঘশ্বাঃস ছেড়ে বলতে শুরু করে]
পণ্ডিতঃ মাটিতে পাফেলানো মাত্র রাজার পায়ে লাগে ধূলি। এ থেকে রাজা চায় নিস্তার। নইলে কারো নাই রক্ষে।
পণ্ডিতবৌঃ রাম রাম একি কথা, ধুলিতে পা পড়লে ধুলিতো লাগবেই।
পণ্ডিতঃ সেটা কি আর রাজা বুঝবেন। রাজা শুধু চায় নিস্তার।
পণ্ডিতবৌঃ এখন উপায়!
পণ্ডিতঃ আমি কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। চুল পাকাই ফেললাম, উপায় মিলিল ছাই।
পণ্ডিতবৌঃ এবার হল তো, আমার কথাই ঠিক হল, বসে বসে মাথায় জং ধরেছে, তাই চুল পাকালেন, উপায় মিলিলো ছাই। আপনি তো বুদ্ধি বেচে খান তবে বসে বসে বাহির করেন বুদ্ধি।
[সিপাই এসে বলে পণ্ডিত বাড়ি আছেন।]
সিপাইঃ (সিপাইর কাছে আসে চিন্তায় পণ্ডিতের মুখের কথা বন্ধ হয়ে যায় )বিকালে মন্ত্রী ডেকেছেন রাজ দরবারে। [এরপরে সিপাইর কুনজর পরে পণ্ডিতের অল্প বয়স্ক বৌয়ের দিকে। পণ্ডিত যখন মাথায় হাত দিয়ে মঞ্চের একটু সামনে যাবে এই সুযোগে সিপাই পণ্ডিত বৌয়ের দিকে এগিয়ে যাবে তারপর পণ্ডিত আবার পিছনে ফিরলে সিপাই নিজের জাগায় চলে আসবে।]
ঠিক আছে আমি তাহলে যাই ………… সিপাই চলে যায়
পণ্ডিত মাথা চুলকাতে থাকে এর মধ্যে পণ্ডিত বৌ বলে আমার ঢের কাজ আছে পদধূলি দেন আমি যাই।
পণ্ডিতঃ পদ…ধূলি [পণ্ডিতকে প্রসাদ দিয়ে পণ্ডিতবৌ প্রনাম করতে থাকেন আর পণ্ডিত বলতে থাকে]
পণ্ডিতঃ কি করা যায় বিকেলে দেখিব। *[দৃশ্য শেষ]
[মন্ত্রী মঞ্চে উপস্থিত পণ্ডিত ধীরে ধীরে প্রবেশ করে।]
মন্ত্রীঃ কি ব্যপার পণ্ডিত আপনার মাথায় কোন উপায় এলো।
পণ্ডিতঃ আমার বুদ্ধির ভাণ্ডার শেষ হুজুর।
মন্ত্রীঃ চিন্তার বিষয়। এতদিন তো ছিলাম সুখে। এখন মহারাজের মাথায় একি চিন্তা প্রবেশ করল। রাতের ঘুম নেই দিনে নাওয়া-খাওয়া পর্যন্ত নেই। কেবল চিন্তা করেই মরলুম।
সিপাই বলবে, দরবারে রাজা আসিতেছেন। [রাজা ও রানী মঞ্চে প্রবেশ । মন্ত্রী ও পণ্ডিত নিজের অবস্থানে ফিরে যায়।]
রাজাঃ কি? উপায় কিছু মিলো।
মন্ত্রীঃ না মহারাজ। এ সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া বড়ই কঠিন।
পণ্ডিতঃ হুজুর আমি বলছিলাম কি, যদি ধুলিই না লাগিবে পায় তবে পদধূলি পাইব কি উপায়!
রাজা আশ্চার্য হয়ে ভ্রু কপালে তুলে বলে হু……
তাই তো। কথাটা মন্দ নয়। আপনার বুদ্ধির সুনাম করতে হয় পণ্ডিত। উপস্থিত বুদ্ধি আপনার ভালই। এইজন্য পণ্ডিতি আপনাকেই মানায়। তবে হ্যাঁ, আগে বিদায় করবেন ধূলি, তারপরে পদ ধূলির তত্ত্ব শুনিব।
মন্ত্রীঃ মহারাজ পণ্ডিত ঠিকই বলেছেন, আপনার পদ ধূলিই আমাদের আর্শিবাদ।
পণ্ডিতঃ জী হুজুর আপনার পদ ধূলি না পেলে আমাদের কল্যাণ মিলিবে কিসে।
রাজাঃ ভালোই ফন্দি এটেছো সকলে মিলিয়া। পদ ধূলিতেই যদি সবই মিলে, তবে আমি মাইনে দিচ্ছি মিছে মিছে।
[সবার হাসি ও চাঞ্চল্য মুখ কালো হয়ে যায়।]
রানীঃ এতকাল রাজা, পুশেছে মিথ্যা উপাধীধারী বৈজ্ঞানিক ভূত্য। তাই আজ রাজার এই হাল।
রাজাঃ ঠিক বলেছ রানী। পুশেছি অকর্মার দলকে। শুনো সবাই আগের কাজ আগে করবেন পরের কাজ পরে। ধূলি হতে নিস্তার না মিললে, মাইনে নয় পদধূলিই মিলবে সবার কপালে। (রাজা সবাইকে আদেশ করল) দেশে বিদেশে যেখানে বিজ্ঞ জ্ঞানী গুণী আছে সবাইকে ডাকন রাজদরবারে।
মন্ত্রীঃ আগ্যে রাজা মশাই।
*[মন্ত্রী, পণ্ডিত প্রস্থান করল।] [দৃশ্য শেষ]
[মন্ত্রী, পণ্ডিত ও বিজ্ঞ জ্ঞানী গুণীর প্রবেশ। চোখে চশমা দিয়ে পুস্তকের দিকে সবার চোখ থাকে……]
রাজার প্রবেশ।( রাজা চারিদিক তাকিয়ে চিন্তা করে বলে) আপনাদের স্বাগতম এই রাজ দরবারে, আপ্যায়নের কোন কমতি থাকবে না, শুধু বাহির করতে হবে উপায় মলিন ধূলি লাগবে কেন পায়, তবেই পুরুস্কার মিলবে নইলে সকলের কপালে জুটবে তিরস্কার।
[ রাজসভার পণ্ডিত১ এবং বিজ্ঞ পণ্ডিত ২ ৩]
২ হুজুর ধরায় যদি মাটি না থাকে তবে শস্য হবে কিভাবে!
রাজাঃ তা যদি নাই হবে, পণ্ডিতেরা রয়েছেন কেন তবে? বসে বসে তাহারা কি হুকা টানবে কেবলই।
৩ হুজুর একটি উপায় আছে। ঝাঁটা দিয়ে রাজ্যের ধূলি সরিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে।
রাজাঃ মাথা দুলিতে দুলিতে চিন্তা করে বলে। ঠিক ঠিক, উপায়টা সঠিক। তবে দেরি কেন কেনা হোক ঝাঁটা শুরু হোক কাজ।
সবাই হাসি মুখে সম্মতি দেয়। *[দৃশ্য শেষ]
[মঞ্চে কিছু ঝাড়ুদারের প্রবেশ। কিছুক্ষনের মধ্যে ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় ও সবাই কাঁশতে কাঁশতে বের হয়ে যাবে।]
[গ্রামবাসী মঞ্চে প্রবেশ করে ও বলতে থাকে]
গ্রামবাসী বলে ওঠে- একি রাজ্যের একি হাল। চক্ষু যায় না মেলা। সূর্য যায় না দেখা। ধূলি দুর করিতে রাজ্যে একি অনাসৃষ্টি।………
[রাজা মন্ত্রী কাঁশতে কাঁশতে মঞ্চে প্রবেশ করেরাজা চোখ চুলকাতে চুলকাতে মন্ত্রীকে ডাকে ]
মন্ত্রীঃ জী-জী-জী মহারাজ।রাজাঃ ডাক সব অথর্বো পণ্ডিতদের
[পণ্ডিতরা ভয়ে সংকুচিতভাবে মঞ্চে প্রবেশ করে এবং সবাই আসন পেতে বসে।]
রাজাঃ এত জ্ঞানী গুণী থাকিতে আজ আমার রাজ্যের একি হাল। আপনাদের সকলেরই লজ্জা হওয়া উচিৎ ।
পণ্ডিতরা বলেঃ ২ হুজুর আমরা আরেক বার চেষ্টা করে দেখি।
[রাজা গম্ভীর থাকে পণ্ডিত রাজা মশাই রাগান্তিত্ব মুখ দেখে ভয় ভয় ভাব
নিয়ে বলে।]
৩ জল দিয়ে ধূলি ধুয়ে ফেললে সমাধান হবে।রাজাঃ জল দিয়ে। গাধার দল এখন পেয়েছেন কি আষাঢ় মাস, যে আকাশ হতে জল পড়বে আর ঝাড়ু নিয়ে সব ধূলি সরাবে। নাকি সমুদ্রে জল বহন করে ধূলি সরাবেন।১ না হুজুর রাজ্যে যা জল আছে তাতেই হবে।[রাজা মাথা নাড়াবে।] *[দৃশ্য শেষ][জল দিয়ে ধুলা সরাতে রাজ্যের অবস্থা খারাপ হয়।রাজা দূর থেকে সব দেখে]
রাজা রানীকে বলেনঃ আমার রাজ্য আজ নষ্ট হয়ে গেছে রানী। পুকুর, নদী, খালে আজ জল নেই জলের জীব সব ডাঙায় মরে পড়ে আছে ডাঙার জীব সাঁতার কাটে মরছে। আমি এতোটায় অবিচার করলাম আমার রাজ্যে আমার প্রজার উপর। রাণী এ থেকে নিন্তারের কি কোন উপায় নাই। [কিছুক্ষন নিরবে রাজা রাণী তাকিয়ে থাকেন] রাজা বলে ধুলাতো গেল না উল্টো কাদা হল রাজ্য।
রানীঃ আরেক বার চেষ্টা করে দেখলে………।
রাজাঃ সমাধান নিললো কই শুধুই ক্ষতি। *[দৃশ শেষ]
[কিছুক্ষনের মধ্যে মন্ত্রী ও পণ্ডিতেরা প্রবেশ করল।]
মন্ত্রীঃ মহারাজ আদেশ করুন নতুন কোন উপায় পণ্ডিতরা বলুক।
রাজাঃ এমনি সব গাধা ধুলারে মারি করে দিল কাদা।
[সমস্যা নিয়ে সবাই দিশেহারা,প্রত্যকে ফিসফিস কথা বলে আর পুস্তক ঘাটঘাটি করে।]
পণ্ডিতরা বলেঃ
২ মাদুর দিয়ে যদি ঢাকা হয় পথ-ঘাট তবে কোথাও থাকবে না ধুলি। রাজাও থাকবে নিরাপদে।
৩ রাজা ঘরে থাক। বাইরে যেন না যায়।
১ ধুলার মাঝে পা না দিলেই তো ধূলা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
রাজাঃ কথাটা খাঁটি।
রানীঃ কিন্তু মোর সন্ধেহ হয়। রাজ্য ভরে যদি ধূলি থাকে তবে রাজার রক্ষে কিসে।
রাজাঃ তাই তো, ধূলির ধরণীতে থাকব আর ধূলি লাগবে না পায়, এটা তো হতে পারে না।
রাণীঃ মাটির ভয়ে রাজ্য হবে মাটি যদি দিন রাত রাজা থাকে বন্ধ।
রাজাঃ কিন্তু এ থেকে রক্ষা পাওয়ার কি কোন উপায়ই নাই।
রাণীঃ ধূলা ঢাকিলে পায়ে ধূলা লাগিবেনা উপায় ঠিক। কিন্তু করিবে কে।
সবে-একজন অন্যজনের দিকে তাকায় ।
রানীঃ যে ঝাড়ু দিবে সে যেমন জল সেচবে না তেমনি যে জল সেচবে সে ধূলা ঢাকবে না এখন বাকি রইল চামার।
রাজাঃ ডাক চামারে, সে যদি উপায় বের করতে পারে কিছু।
পণ্ডিতরা বলেঃ
৩ কিন্তু সে তো নিচু জাত
২ তার ছায়া মাড়ানো অধর্ম
১ চামার আসবে রাজদরবারে
রাজাঃ থামুন সবে। এতো দিন তো অর্থ দিয়া গাধা পুষলাম, অবহেলা করিয়াছি তাদের। চামার যদি পারে কিছু করিতে ক্ষতি কি।
মন্ত্রীঃ রাজা যোগ্য চামার পাব কোথায়।
রাজাঃ (পণ্ডিতের দিকে আঙ্গুল) কেন এদের আনিলেন কিভাবে। চামাররে আনা এদের থেকে সহজ। নাকি তাদের আনতে আপনার……
মন্ত্রীঃ না রাজা মশাই। *[দৃশ শেষ]
[চামার ও চামার বৌ বাড়িতে নিজ নিজ কাজে ব্যবস্থ থাকে।চামার হুকা টানে আপন মনে আর চামার বৌ চাল ঝারে
চামারকে খুঁজার জন্য সিপাই বের হয় । অবশেষে চামারের বাড়ি। বাড়ির ভেতরটা উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে । কিছু না বুঝতে পারার কারণে চামারকে ডাকে।]
সিপাইঃ চামার কি বাড়ি আছে।
চামারের বৌ বলে উঠে কে ।
সিপাই বলেঃ আমি রাজদরবারের সিপাই , চামার কি বাড়ি আছে।
[চমার ভয়ে জড়সড় হয়ে চামার বৌয়ের দিকে তাকায়]
চামার বলেঃ বলিয়া দে বাড়ি নাই। চামার বৌ কাছে গিয়া বলে বাড়ি নাই কি বলিতে হইবে।
সিপাইঃ রাজা ডাকিয়াছে, যেতে হবে বিকেলে। [সিপাই চলে যায়।]
চামার বৌ দৌড়িয়ে গিয়ে চামারকে বলে রাজা ডাকেছেন দরবারে, যেতে হবে বিকেলে।
চামার মাথায় হাত দিয়া বসে পরে আর বলে কি হইল।
চামার বৌঃ আমরা ছোট জাত, রাজ দরবারে কি এমনি এমনি ডাকে। কি আর হইবে নিশ্চয় কোন ছোট কাজের জন্যে দরকার পড়েছে।
চামারঃ তাহার পরও, বিকালে কি যাব।
চামার বৌঃ না গেলে কি রক্ষে আছে। চামারের *[চিন্তিত অবস্থাকে কেন্দ্র করে দৃশ্য শেষ]
[কিছুক্ষন পরে চামারকে নিয়ে সিপাই মঞ্চে প্রবেশ করে। চামার দরবারে সবার দিকে তাকায় ভীতু দৃষ্টিতে।]
রাজাঃ চামার শেষ উপায় জানতে চাই তোমার কাছে।
চামারঃ আগ্যে বলুন রাজামশায়।
রাজাঃ ধরায় এতো ধূলি কি উপায় রক্ষা পায় চরণ দুটি। পণ্ডিতরা বলেছে মাদুর দিয়ে রাজ্যের ধূলি ঢাকতে।
কিছুক্ষন ভেবে চামার বলে
অনুমতি দিলে বলতে পারি
রাজাঃ হ্যাঁ বল।
[সবাই অতি আগ্রহ নিয়ে কান পাতে]
চামারঃ রাজা মশাই যদি নিজের দুটি চরণ ঢাকিতে পারেন তবে ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।
রাজাঃ এত কি হবে সিধে
মন্ত্রীঃ বেটাকে শূলে চড়াতে হবে।
পণ্ডিতরা বলেঃ
১ রাখ তাকে বন্দি করে।
২ এমন মশকরা সে করিতে পারে রাজার সাথে
৩ রাজার চরণ ঢাকিবে আভরণে
[সবার কথাতে চামার জড়সড় ও ভয় পায়।]
রাজাঃ আহা থামুন আপনারা সবাই। এত টাকা খরচ করে তো আনলাম আপনাদের তার ফলে মোর রাজ্য গেল মরে। রক্ষা মিললো না মোটে। আর এখন বলতেন শুলে চড়াবে চামাররে।
চামার তোমার কাজ কর।
চামারঃ হুজুর আপনার পায়ের মাপ নিতে হইত । যদি আপনার সিপাই সঠিক মাপ দিতেন ।
রাজাঃ কেন তুমিই নাও।
৩ পণ্ডিতঃ হুজুর আপনাকে ছুঁইলে অশুদ্ধ হবেন ।
২ পণ্ডিতঃ সে দরবারে আসিয়াই অশুদ্ধ করিয়াছে।
১ পণ্ডিতঃ স্নান করিয়া পূজা না করিলে শুদ্ধ হওয়া যাবে না।
রাজাঃ থামুন সবে। চামার তুমি নিজ হাতে তোমার কাজ কর।
কিছুক্ষণ পরে চামার রাজার জন্য জুতা নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেন। [অনেক দ্বিধা ভয়ে সামনে এগিয়ে পিছিয়ে সঙ্কোচে চামার তার কাজ শুরু করে। পণ্ডিতরা ও মন্ত্রী গলা উঁচু করে আড় চোখে দেখে চামারের কাজ।
চামারঃ হুজুর আশা করি আপনার চিন্তার সমাধান হয়েছে। চামারের বানানো জুতা পড়ালো রাজার পায়ে।
রাজাঃ আমি ঘুমাইয়াছিলাম এতও দিল। তাদের দ্বারাই যে অগ্রগতি তা ভুলে গিয়েছিলাম। [সবাই অবাক। রাজা নিজের আসন ছেড়ে সামনে চলল।] তারপর চামারের গায়ে হাত দিল।মন্ত্রীঃ ব্যাটা বুদ্ধি চুরি করেছে ,
পণ্ডিত১ এটা আমারও মাথায় ছিল কিন্তু……
জন্ম ৮ জানুয়ারি ১৯৮৯। বাংলাদেশের ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ থেকে বিএ সম্মান ও এমএ পাশ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ “স্বপ্নের পাখিরা ওড়ে যৌথ খামারে” এবং যুগ্মভাবে সম্পাদিত বই “শাহেরা খাতুন স্মারক গ্রন্থ”। বিভিন্ন সাময়িকীতে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে রোদ্দুরে ডট কমের সম্পাদক।