স্বদেশী বাজারে গলাগলি করে
একসাথে বাস করে তুলসী এবং মুনশী।
কোনো কোনো রাতে ব্রহ্মপুত্রের কিনারে
বুড়াপীরের মাজারে খোলা বারান্দায়
পাশাপাশি বসে তবারক খায় মুনশী এবং তুলসী।
দুই বন্ধু কানাই-বলাই মন্দিরের আঙ্গিনায়
পায়েস-প্রসাদ খায় সবুজ পদ্মপাতায়।
যে সময় তুলসী ভক্তির আরতি দেয় সাঁঝে
সে সময় মুনশী মগ্ন থাকে গভীর নামাজে।
কোনো কোনো ক্ষণে তুলশী বলে উঠে
হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, হরে রাম;
কখনো কখনো মুনশী জপতে থাকে আল্লাহর সিফতী নাম।
হঠাৎ বিষন্নতায় দুই বন্ধু দীর্ঘ শীতরাত
পাড়ি দেয় একই কাঁথায়।
মুনশীর দাঁড়িতে কোনো-ই আপত্তি নেই তুলশীর।
তুলশীর চন্দন-ফোঁটায় কোনোই সমস্যা নেই মুনশীর।
তুলসীর ঘরে মুনশী মজা করে খায় অষ্টমীর খৈ-খেলনা;
মুনশীর ঈদের সেমাই তুলশীর পরম প্রিয়, নয় তা ফেলনা।
মুনশীর মাথায় কিস্তী টুপি, তুলশীর গলায় জপমালা।
তুলসী-মুনশীর চলমান দোস্তি স্বদেশী বাজারে
বানিয়েছে সম্প্রীতির শান্তনীড়, সুন্দরের পাঠশালা।
মুনশীর বিবি কয়, শাকে-ভাতে ভাল আছি;
শোন পেয়ারের বৌদি, যাওয়ার দরকার নেই সৌদি;
তুলশীর বৌটা বলে, ডালে-ভাতে চলে যায় ভাবী,
খুব শান্তি, আমার নাইগা বাড়তি কোনো দাবি।
স্বদেশী বাজারে একই দড়িতে এমনি করে
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে ধুতি এবং লুঙ্গি।
এখানে কখনো আসে না দাঙ্গার দাবানল, হিংসার ফুরুঙ্গী।
শামসুল ফয়েজ সত্তর দশকের কবিদের মধ্যে অন্যতম। তীব্র বাস্তবতাবোধ, নাগরিক বৈদগ্ধ এবং জীবনাকাঙ্খা তারঁ কবিতার প্রধান উপাদান। নগর মানুষের যান্ত্রিক আচরণ তার মধ্যে দ্রোহের জন্ম দেয়। তার জন্ম ১৮ জানুয়ারি, ১৯৫৩ সালে মোজাহিদী লজ (মাতুল বাড়ি), জুবিলী কোয়ার্টার, আকুয়া, ময়মনসিংহে। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে শামসুল ফয়েজের কবিতা (কাব্য সংকলন, ১৯৯৭), শোণিতে বিবিধ কোরাস (জুন ২০০৮), সময়ের ধ্রুপদ (২০০৮), মনে চায় শুক্কুর পাগলা হয়ে যাই (ডিসেম্বর ২০১১)।