দিনের পর দিন, প্রতিদিন তরুণটি দেখে
পার্কে বাগানে সেই একই গাছ—ফুল ফল ডাল পাতা ভরা,
একই পাখি বন্দি বিজাতীয় চিড়িয়াখানায়,
মাংসের লোভে অতিথি পাখি বিক্রেতা অর্থের ঢিবি,
কিনে নেয় পথের ধারেই জীবন্ত ছুটন্ত সব তাজা প্রাণ;
খুব ভোরে রাস্তার মোড়ে একটি মাইক্রোবাস
নামিয়ে দিয়ে যায় তিনজন বিধস্ত তরুণীকে,
সকালের পথ ঝাড়ু দেয় আর দূরবর্তি মোহের পরশে
পান খায় এক মহাভারতীয় নাগরিক শিল্পী,
মালবাহি চলন্ত ট্রাকের উপরে বসে ঝিমায় পাথুরে শ্রমিক—
তিনদিন চোখ বোঁজার হয়নি সময়,
ইতিমধ্যেই বেহেড মাথাল ঠ্যাঙ তুলে মুতে দেয়
গান্ধীর ভাস্কর্যের চারধারে,
পাগলিনি ভঙ ধরে নায়িকা হবে—
কোমর দুলিয়ে শাড়ি শায়া নেড়ে নাচে আর বিহঙ্গ দেখায়,
অনাথ শিশুরা ফেরি করে কচি শরীরের ঘাম
দুপুরে প্রখর রোদে জৈষ্ঠের চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায়,
রিকসার পেডেলে চাপ দিয়ে অনবরত কাশতে কাশতে
ষাটোর্ধ বৃদ্ধ রক্ত তোলে কোনো এক তরুণীর বাড়ির দরজায়,
বেতার ও টিভিতে সেই উন্নয়নের রঙিন জোয়ারের
গর্জন শোনা যায় অনবরত,
সংবাদপত্রে দেখতে চাওনা—তাদেরই ছবি,
বাধ্যতামূলকভাবে দেখতে হয় ধামাধরাদের ধামার দৈর্ঘ প্রস্থ উচ্চতা
বিকেলে ভিআইপি রোডের রেলিঙে
শতচ্ছিন্ন শাড়ি শুকোয় বৃদ্ধা ভিখারিনি,
হোটেলে দিনে দুবার রাবারের মতো পরোটা বা ভাত চিবিয়ে
সন্ধ্যার আঁধারে সঙ্গী খোঁজে নিঃসঙ্গ জীবন
আর তরুণটি প্রতিদিন
একটু একটু করে মরে যায়।
চিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত অংকিত চিত্রটি বাংলাদেশের শিল্পী অহতেন রাখাইনের আঁকা কুয়াকাটার একটি দৃশ্য। আলোকচিত্রটি নেয়া হয়েছে উকিমিডিয়া কমন্স থেকে। ফটো ক্রেডিট সালাহউদ্দিন। এখানে চিত্রটিকে উপরের দিকে ছেঁটে ব্যবহার করা হয়েছে।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।