জীবন হয়েছে আজ কয়লার হৃদপিণ্ড
ধুকে ধুকে মরছে ভাগাড়ের পৃথিবীতে,
জ্বলছে ক্ষুধায় আক্রান্ত শুকনো কাঠির শরীর;
গলায় ঝুলছে তাবিজ, ভিতরে ঈশ্বরের তিন মৃত পিতা,
মহাক্রন্দন শোনে রাষ্ট্র,— তবুও ভাবখানা অন্ধের, উপেক্ষার।
বয়স ছয় কী সাত।
উজাড় জনপদের উচ্ছন্ন ভিটার পাশে উপুড় হয়ে
ধুঁকছে এক কৃষ্ণাঙ্গ শিশু,
ঠোঁট দুটো মাটিতে লাগানো, যেন গিলবে গোল সমগ্র পৃথিবী
পশু পাখি সমুদ্র নদী ও পাহাড়
সুন্দর সাদা সুখি প্রেতাত্মার নারী
বোতল পুরুষ আর বোকাবোকা মোটাসোটা রাষ্ট্রনীতিক
আমলা গামলা আর গামলার জল।
চৌচির চারদিক, বিরাণভূমি সকল ভূ-ত্বক,
মরা খড় মরা ঘাস মহা মহামারি প্লেগ,
ইঁদুরের লাফালাফি ক্ষুধার টুকরো টুকরো ব্যাপ্ত শহরে,
দুঃখ শুধু অবিভাজ্য শিশুটির চোখে।
কঙ্গো ও নীলের দুইতীরে ঢেউ তোলে
হাঁপাহাঁপি দৌড়লাফ
বর্ণবাদ অভিশাপ,
মাঝখানে মুমূর্ষু শিশু
বয়স ছয় কি সাত,
দাঁত দিয়ে জিভ কেটে রক্ত পান করেই তবে
করবে সে প্রতীক্ষিত শেষ শ্বাস ত্যাগ।
আসবে মাহেন্দ্রক্ষণ অনতিদুরে দাঁড়িয়ে থাকা
মাংশাসি শকুনগুলোর জন্যে,
ওগুলোর মগজে শুধু
‘খাবো আজ খাবো
কচি শিশুর গোসত খাবো,
কচি গোসত বড় উপাদেয়’।
এরপর হবে আঁকা আলোকচিত্র,
আরেক মন্বন্তরে লেখা হবে কবিতা,
কিংবা পড়বে কেউ একই প্রতিবেদন জয়নুলবিহীন বাঙলার ফুটপাতে ঘাটে;
শুধু কেউ জানবে না এ-পৃথিবীর সব কুশাসকের পেটে কত চর্বির ঢিবি;
কত হাজার মূর্তি আছে শহরে রাজার
কতশত তোরণ নির্মিত হয় মায়ের শাড়িতে।
বুভুক্ষুরা ক্ষুধার নীলিমায়
মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
বাঁচিয়ে রাখবে শকুন ও আগ্রাসিদের।
রক্ত খেয়েই মরবে যখন তবে আর নিজেদের জিভ কেটে রক্ত পান কেন?
আলোকচিত্রের ইতিহাস: কবিতায় ব্যবহৃত আলোকচিত্রটি কেভিন কার্টারের (১৯০০-১৯৭৯) তোলা আলোকচিত্র ক্ষুধার্ত শিশু ও শকুন (The vulture and the little girl)। শিল্পী আলোকচিত্রটি তোলেন মার্চ ১৯৯৩ সালে। এখানে চিত্রটিকে উপরে কিছুটা ছেঁটে বাদ দেয়া হয়েছে। কেভিন কার্টারের ফটোটি দেখে আমি এই কবিতাটি লিখেছিলাম।
অনুপ সাদি বাংলাদেশের একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও চিন্তাবিদ। তাঁর প্রথম কবিতার বই পৃথিবীর রাষ্ট্রনীতি আর তোমাদের বংশবাতি প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। তাঁর মোট প্রকাশিত গ্রন্থ ১২টি। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তাঁর সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ গ্রন্থ দুটি পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ২০১০ সালে সম্পাদনা করেন বাঙালির গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। তিনি ১৬ জুন, ১৯৭৭ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেখাপড়া করেছেন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ পাস করেন।